1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ভালোবাসা, বিশ্বাস আর বিদায়ের গল্প; একটি সাহিত্য প্লাটফর্মকে ঘিরে

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
  • ৩৭১ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

লেখক- মোছাঃ সাথী খাতুন

 

সাহিত্য কখনো শুধুই লেখার জায়গা নয়। তা হয়ে ওঠে আত্মার আশ্রয়, চেতনার প্রকাশভূমি। ঠিক তেমনই ছিল একটি সাহিত্য প্লাটফর্ম, যাকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছিলাম। যেন এক ছায়াবৃক্ষ, যার নিচে আমি আমার লেখালেখির প্রথম পদক্ষেপ রেখেছিলাম, স্বপ্ন দেখেছিলাম, শব্দ বুনেছিলাম।

 

প্রথম পরিচয়ের দিনগুলো আজও মনে পড়ে। মনের ভেতর সাহস ছিল না খুব একটা, তবুও লেখা পাঠাতাম। কেউ হয়তো পড়ে মন্তব্য করত, কেউ সাহস জুগিয়ে বলত, “চালিয়ে যাও, লেখাটা ভালো হয়েছে।” তখনই মনে হয়েছিল—এই জায়গাটা আলাদা। এখানে কেউ কাউকে নাম দিয়ে নয়, শব্দ দিয়ে চিনে নেয়। ধীরে ধীরে যেন সেই প্লাটফর্ম একটা পরিবারে রূপ নেয়।

 

দিন যায়, রাত যায়—আমিও হয়ে উঠি সেই পরিবারের একজন সক্রিয় সদস্য একজন ভালো ও বিশ্বস্ত বন্ধুর সহযোগিতায়। কখনো কেউ অসুস্থ হলে উদ্বেগ ছুঁয়ে যেত, কেউ নতুন বই প্রকাশ করলে নিজস্ব গর্বে বুক ভরে উঠত। আমার কাছে ওরা কেউ ভার্চুয়াল নাম ছিল না, ছিল বাস্তবের মতোই স্পর্শযোগ্য সম্পর্ক। ঈদ-পূজার শুভেচ্ছা, জন্মদিনের ভালোবাসা, কবিতা-পাঠের মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া, ডিজিটাল আয়োজন—সবকিছুতে এক ধরনের আন্তরিকতা ছিল, যা আজকের দিনে বিরল।

 

সাহিত্য নিয়ে আমাদের যত কাজ, আমি ছিলাম সর্বদা পাশে। মাঝরাতে কেউ লিখে জানাত, “কাল একটা অনলাইন রিডিং সেশন আছে, তুমি হোস্ট করবে?” আমি নিজের ক্লান্তি ভুলে বলতাম, “অবশ্যই!” অনেকে হয়তো বুঝত না, কেন এতটা দায়বদ্ধতা? এর উত্তরে আমি শুধু একটাই কথা বলতাম, “এটা তো আমার পরিবার, দায়বদ্ধতা তো থাকবেই।” কিন্তু আমি নিজ ত্থেকেই রিডীং সেশনে উপস্থিত হতাম না।

 

তবে সময় সবসময় একরকম থাকে না। ধীরে ধীরে আমি দেখতে পাই কিছু অস্বচ্ছতা। অর্থের লেনদেনে অসংগততা, প্রতিশ্রুতির বিপরীতে অন্যরকম বাস্তবতা, প্রকাশ্য আর অপ্রকাশ্য রাজনীতি—সব মিলিয়ে যে প্লাটফর্মকে আমি স্বপ্নের উঠোন ভেবেছিলাম, সেখানে বাস্তবের কঠিনতা হানা দিল। প্রথমে ভাবলাম ভুল দেখছি। হয়তো সাময়িক বিশৃঙ্খলা। কিন্তু সময় যত গড়ায়, ততই স্পষ্ট হয়—শুধু লেখালেখি নয়, এর আড়ালে চলছে একটি মিথ্যার ব্যবসা। লেখকদের ব্যবহার করে, আবেগকে পুঁজি করে কেউ কেউ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছে। আর বাকিরা—আমরা, যারা ভেবেছিলাম আমরা একে অপরের ছায়া—তারা একরকম নিঃশব্দ দর্শক।

 

তখন মনে পড়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের একটি লাইন—

“যাহা আমি চাই, তাহা আমি পাই না, যাহা আমি পাই, তাহা আমি চাই না।”
আমি চেয়েছিলাম একটুকরো স্বচ্ছ, সহৃদয় সাহিত্যিক পরিসর। অথচ পেয়েছিলাম এক গোলকধাঁধা, যেখানে শব্দগুলো পণ্য, আর সম্পর্কগুলো শুধুই প্রয়োগের উপাদান। তবু আমার চলে যেতে সময় লেগেছিল। কারণ ভালোবাসা সহজে ছিঁড়ে ফেলা যায় না। আমি প্লাটফর্মটি নয়, তার মানুষের জন্য থেকেছিলাম। কিন্তু সেই মানুষগুলো যখন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চুপ থাকল, তখন বুঝলাম—এ সম্পর্ক একতরফা হয়ে গেছে।

 

একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম—বিদায় নিতে হবে। কিছু সম্পর্ক, কিছু প্রতিষ্ঠান দূরত্ব থেকেই বেশি সুন্দর থাকে। তবু যে ভালোবাসা দিয়ে ছিলাম, তা তো মুছে যায় না। যেমন মুছে যায় না নিজের হাতের লেখা, নিজের ছুঁয়ে যাওয়া শব্দ। আজও যখন কোনো সাহিত্য আসরে সেই প্লাটফর্মের কারো লেখা দেখি, বা কোনো সেশন লাইভ দেখি, হৃদয়ের মধ্যে হালকা একটা কাঁপুনি ওঠে। হয়তো একটু দীর্ঘশ্বাস।

 

তবে অভিযোগ নেই। বরং কৃতজ্ঞতা আছে। যদি সেই প্লাটফর্ম না থাকত, আমি হয়তো লিখতেই পারতাম না। আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম সেই উঠোনে দাঁড়িয়ে। সেখানে লেখা প্রকাশের আনন্দ পেয়েছিলাম। কিছু সম্পর্ক, যদিও শেষ হয়েছে, তবুও তাতে ছিল কিছু সত্যিকারের ভালোবাসা। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে—ভালোবাসা একতরফা হলেও তার বিশুদ্ধতা নষ্ট হয় না। সত্যের পাশে দাঁড়ানো মানেই কারো বিরুদ্ধে যাওয়া নয়, নিজের বিবেকের সঙ্গে আপোষ না করা।

 

আজ আমি নিজেকে নতুন করে গড়েছি। হয়তো অন্য কোনো জায়গায় লিখি, অন্য কারো সঙ্গে কাজ করি। কিন্তু প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি কাজেই সেই পুরোনো অভিজ্ঞতা জড়িয়ে থাকে। একদিন কেউ যদি এসে বলে, “তুমি তো সেই প্লাটফর্মে ছিলে, আজ নেই কেন?”
আমি বলব,
“হ্যাঁ, ছিলাম। সাধ্যমতো ভালোবেসেছিলাম। আজ নেই, কারণ বিশ্বাস হারিয়েছি। কিন্তু ভালোবাসা আজও ফুরোয়নি। ওই মানুষগুলোকেই আজও নিজের পরিবারের মতো ভালোবাসি। শুধু দূর থেকে দেখি। কাছাকাছি যাওয়া আর হয়ে ওঠে না।”

 

এই লেখাটা আমার বিদায়ের নয়, বরং এক প্রকার চিরন্তন অনুভবের বহিঃপ্রকাশ—ভালোবাসা, বিশ্বাস আর বিবেকের একসাথে বেঁচে থাকার গল্প।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park