ভালোবাসার সমীকরণ (২য় পর্ব)
জাকির আলম
শ্রাবণ : ( অনেক দিন পর মোনার সাথে ফোনে কথা বললো। অনেক কথা বলার পর এক পর্যায়ে বলে দিলো…) এই শুনছো, একটা খুশির সংবাদ আছে।
মোনা : বলো শুনি তোমার সুসংবাদ…শ্রাবণ : আমার প্রথম কবিতার বই বের হয়েছে কিছুদিন আগে।
মোনা : আলহামদুলিল্লাহ। বইয়ের নাম কি দিছো ?
শ্রাবণ : ‘যেখানে বসন্ত তোমার’।
মোনা : ওয়াও! কাব্যগ্রন্থের নামটা অনেক সুন্দর হয়েছে। তা তোমার বইটা কবে নাগাদ হাতে পাবো ?
শ্রাবণ : চলো একদিন কফি-শপে দেখা করি। কবে সময় হবে তোমার ?
মোনা : ২৫ অক্টোবর বিকেল বেলা…
শ্রাবণ : ঠিক আছে তাহলে এটাই রইলো। এখন তাহলে ফোন রাখি।
মোনা : ওকে। ভালো থেকো। দেখা হবে…
শ্রাবণ : ওকে প্রিয়তমা…
মোনা : ( কফি-শপে তাদের দেখা করার দিন চলে এলো। দেখা করার জন্য আগেই তারা জায়গা ঠিক করে রেখেছিলো…) তা কি অবস্থা তোমার ? অনেক দিন পর তোমার দেখা পেলাম। অনেক শুকিয়ে গেছো তুমি। নিজের যত্ন নাও না নাকি !
শ্রাবণ : তুমিও কিন্তু অনেক শুকিয়ে গেছো মোনা।
মোনা : হুমমম অতিরিক্ত লেখাপড়ার চাপ। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করতেছি। আমার জন্য দোয়া করো। যেন ভর্তির সুযোগ পাই।
শ্রাবণ : হুমমম অবশ্যই। তোমার মনের আশা আল্লাহ পূরণ করুক। আমিন…মোনা : ধন্যবাদ তোমাকে। তারপর বলো তোমার কি অবস্থা ?
শ্রাবণ : এইতো চলে যাচ্ছে কোনো ভাবে…
মোনা : তোমার লেখাপড়ার কি অবস্থা ? কোথায় ভর্তি হয়েছো ?
শ্রাবণ : মোটামুটি ভালো। সা’দত কলেজে ‘বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য’ বিষয়ে অনার্স করতেছি।
মোনা : খুব ভালো। তুমি যেহেতু লেখালেখি করো সেজন্য খুব ভালো হয়েছে৷ দোয়া করি অনেক বড় লেখক হও তুমি।
শ্রাবণ : হুমমম দোয়া করো। এই যে নাও আমার সেই কাব্যগ্রন্থ।
মোনা : ( রঙিন পেপার দিয়ে মোড়ানো বইটা হাতে পেয়ে মোনা শ্রাবণকে ধন্যবাদ দিতে ভুল করলো না…) তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শ্রাবণ। তোমার এই লেখালেখি সারা জীবন অব্যাহত থাক…
শ্রাবণ : হুমমম সারা জীবন পাশে থেকো।
মোনা : হুমমম অবশ্যই। ( কথা বলতে বলতে মোনা বইয়ের উপর মোড়ানো রঙিন পেপার খুলে ফেললো। খুলেই শ্রাবণকে বললো…) বইয়ের প্রচ্ছদ অনেক সুন্দর হয়েছে। নামের সাথে প্রচ্ছদের সুন্দর মিল আছে । প্রচ্ছদ শিল্পীর কথা না বললেই নয়। আমি তোমার এই বইটার জন্য বহুল প্রচার প্রচারণা আশা করছি। তোমার জন্য অনেক বেশি শুভ কামনা শ্রাবণ। লেখালেখি কখনো ছেড়ে দিওনা। এটা অনেক ভালো একটা কাজ। যা সবাই পারে না। আমৃত্যু মন খুলে লিখে যেও।
শ্রাবণ : তুমি পাশে থাকলেই সব সম্ভব। আর এই লেখালেখি কাজটা আমি অনেক মন থেকে করি। যাই লেখিনা কেন, লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে তাই লিখি। না লিখে থাকতে পারিনা। লিখতে লিখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
মোনা : এটাই প্রকৃত লেখকের বৈশিষ্ট্য। তোমাকে আমি একটা জিনিস দিবো, তোমাকে নিতে হবে। তুমি কিন্তু না করতে পারবে না। নিলে অনেক খুশি হবো আমি।
শ্রাবণ : হা হা হা আচ্ছা দাও কি দিবে…
মোনা : ( পাঁচশত টাকার একটা চকচকে নোট বের করে দিলো শ্রাবণকে…) এই নাও এটা তোমার জন্য…
শ্রাবণ : টাকা দিচ্ছ কেন বুঝলাম না। কারণ না জেনে তো আমি তোমার টাকা নিবো না।
মোনা : হাতে নাও বলছি। যেহেতু এটা তোমার প্রথম বই। আমি চাই তোমার এই লেখালেখির কাজটা তুমি চালিয়ে যাও। সেজন্য তোমাকে উৎসাহিত করার জন্য টাকাটা দিলাম। বইয়ের মূল্য ভেবে ভুল করো না যেন। প্রতিভার কোনো মূল্য হয় না। রেখে দাও তোমার কাছে। কাজে লাগবে।
শ্রাবণ : ( নিজের অজান্তেই শ্রাবণের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল বের হলো। টাকার জন্য নয় ; সে তার প্রতিভার যথাযথ মূল্য পেয়ে সে অনেক বেশি খুশি হয়েছে। এই প্রথম কেউ তার লেখালেখি কাজটাকে এতো মূল্যায়ন করেছে…) তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মোনা আমাকে এভাবে মূল্যায়ন করার জন্য।
মোনা : আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো। তুমি না করতে পারবে না। এবার বলো তুমি কি খাবে ?
শ্রাবণ : তুমি যা খাওয়াবে তাই খাবো। আমার কোনো পছন্দ-অপছন্দ নেই। তাই তোমার পছন্দের খাবার হলেই চলবে।
মোনা : ( ওয়েটারকে ডেকে মোনার পছন্দের খাবার ওয়ার্ডার করলো…) ওকে তাই হবে…
শ্রাবণ : ( কথা বলতে বলতে খাবার চলে এলো কয়েক প্রকার দামি খাবার। মোনার সাথে আরো একটি মেয়ে এসেছিলো। সম্পর্কে সে মোনার ভাগ্নী হয়…) তোমাকে ধন্যবাদ মোনা আজকের দিনের জন্য। আজকের দিনটি আমার কাছে সারা জীবন সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে। সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।
মোনা : ( মোনা হাসতে হাসতে বললো…) তাই ! ওকে এমন দিন যেন বারবার আসে।
শ্রাবণ : হুমমম। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আজ। হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক মাখা ঠোঁটগুলো আনমনে কাছে টানছে। হবে নাকি একটা চুমু…! ( কথাটা অবশ্য শ্রাবণ মোনার কানে কানে বললো। এমতাবস্থায় মোনার ভাগ্নী কি যেন একটা জরুরি কাজে অন্যত্র চলে গেলো একাই। শুরু হলো মোনা আর শ্রাবণের অবকাশ যাপন )
মোনা : কবি মানুষের বোধ হয় লজ্জা-শরম কম থাকে। তা না হলে এই লোক সমাগমে কেউ চুমু খেতে চায় বলো ?
শ্রাবণ : কি করবো ? তুমি যে অনেক আকর্ষণীয় সাজ-গোছ করছো আজ। ব্যাকুল মন তাই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে তোমার উপর।
মোনা : আমার কিন্তু অনেক ভয় করছে। তোমার মতি গতি তেমন ভালো মনে হচ্ছে না, হা হা হা…
শ্রাবণ : আরে ভয়ের কিছু নেই। একটু খুনসুটি করছিলাম আর কি !
মোনা : ও আচ্ছা। তবুও যে আমার লজ্জা করে। আগে কখনো এমন হয়নি তো তাই।
শ্রাবণ : তোমার হাতটা একটু ধরি ? খুব ধরতে ইচ্ছে করছে।
মোনা : না করার সাহস নেই, ধরো। সাবধান উল্টাপাল্টা কিছু করবে না কিন্তু।
শ্রাবণ : হা হা হা। এতো ভয় কিসের ? ভয় পেওনা প্রিয়তমা।
মোনা : তবুও ভয় হয়। পুরুষ মানুষকে আমার অনেক ভয় করে। এরা কখন কি করে বসে বলা যায় না।
শ্রাবণ : কোনো ভয় নেই। তোমার হাতটা অনেক সুন্দর। আঙ্গুলগুলো আরো বেশি সুন্দর। তোমাকে নিয়ে মাথায় একটা কবিতা চলে এলো…তোমাকে শোনাবো নাকি ?
মোনা : ঠিক আছে শোনাও…
তুই কি আমার দুঃখ হবি এক জীবনের ?
তোর সাথে বাঁচার স্বপ্ন হাজার জনমের।
তুই কি আমার বন্ধু হবি প্রাণের সারথি ?
তোর সাথে জীবন-মরণ শ্রদ্ধার্ঘ প্রণতি।
তুই কি আমার কান্না হবি বয়ে চলা নদী ?
তোর মাঝে হারিয়ে যাবো পাশে থাকিস যদি।
তুই কি আমার নিদ্রা হবি ফুলশয্যা রাতে ?
তোর দ্বারে প্রত্যাগমন হাত রাখবো হাতে।
তুই কি আমার মেঘ হবি শ্রাবণ রজনী ?
তোর সাথে ভেজার উমেদ প্রাণের সজনী।
তুই কি আমার কাব্য হবি প্রেমের কবিতা ?
তোর লোচন মায়ায় দেখি দ্রোহের সবিতা।
তুই কি আমার ধ্বজা হবি এক মুঠো রোদ ?
তোর বুকে সুখের খোঁজে করবো অবরোধ।
তুই কি আমার অভ্র হবি গহিন সমুদ্র ?
তোর মনের বাতায়ন খুলে দেখি হিমাদ্র।
তুই কি আমার প্রেম হবি রাত্রি জাগা পাখি ?
তোর চুলের গন্ধবাহে জুড়িয়ে যায় আঁখি।
তুই কি আমার বোধ হবি জলে ভেজা ঘাস ?
তোর সাথে ভালো লাগার সুখের বসবাস।
মোনা : বাপরে বাপ! এতো ট্যালেন্ট ! এতো সহজে, এতো তাড়াতাড়ি কবিতা আসে মাথায় ! পুরাই অবাক আমি। কিভাবে সম্ভব এটা ?
শ্রাবণ : তোমার মতো একটা সুন্দরী কাছে থাকলে সবকিছুই সম্ভব হয় প্রিয়তমা। এভাবে তোমাকে নিয়ে কয়েক হাজার কবিতা লিখতে পারি চোখের পলকে। তুমি আমার মনের মতোই খুব সুন্দরী একটা মেয়ে।
মোনা : থাক থাক আর বলো না গো। তখন আবার প্রেমে পড়ে যাবো। একা আছি, এমনিই ভালো আছি।
শ্রাবণ : প্রেমে পড়তে এতো অনীহা কেন তোমার ?
মোনা : স্বাধীনতা নষ্ট হয় তাই। আর অন্যের জন্য ভাবতে হয়।
শ্রাবণ : স্বাধীনতা নষ্ট হয় এটা ভুল ধারণা। প্রেমে পড়লে মানুষ আরো উড়তে শেখে মুক্ত বিহঙ্গের মতো।
মোনা : হুমমম কইছে তোমাকে। তোমার সাথে কথায় পারবো না কবি সাহেব…
শ্রাবণ : চলো এখান থেকে রিক্সায় চড়ে ঘুড়ি শহরের রাস্তায়। আজ ঘুরতে আমাদের নেই মানা…
মোনা : আজ না গো। অন্যদিন। আজ বাসায় একটু কাজ আছে। আমাকে এখনই চলে যেতে হবে বাসায়। আজকের মতো তাহলে উঠি। ( ওয়েটারকে ডেকে খাবারের পেমেন্ট দিয়ে দিলো মোনা )
শ্রাবণ : চলো তাহলে তোমাকে এগিয়ে দেই।
মোনা : ওকে চলো…
শ্রাবণ : ( মোনার হাত ধরে শ্রাবণ হাঁটার সময় কয়েক বার বললো, পরের বার যেন এমন না হয়। অনেক সময় নিয়ে আসবে। অনেক সময় তোমার সাথে বসে গল্প করবো। মনে থাকে যেন।
মোনা : ওকে দেখা যাবে। ওই যে রিক্সা চলে আসছে। আমি তাহলে চলি আজকের মতো। ভালো থেকো তুমি। বাই…
শ্রাবণ : ওকে দেখে শুনে যেও। রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে জানিও। আর বাসায় পৌঁছে অবশ্যই জানাবে কিন্তু। যাও তাহলে… বাই
মোনা : ওকে ঠিক আছে। তুমিও বাসায় যাও। আবার দেখা হবে…
শ্রাবণ : ওকে,এসো তাহলে। দেখা হবে…বাই…
( চলবে…)