1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ভালোবাসার সমীকরণ — জাকির আলম 

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৯০ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

মোনা শ্রাবণকে আগেই বলে রেখেছিলো আজ বিকেলে ঘুরতে বের হবে। দূরে কোথাও নয় ; বাড়ির পাশেই যমুনা নদীর অববাহিকায় আজ তারা ঘুরে বেড়াবে। মোনা তার পছন্দের নীল রঙের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ফুল হাতা ব্রাউজ পরেছে। চুলের খোঁপায় একগুচ্ছ বকুল ফুলের সাথে চোখের পাপড়িতে কাজল মেখে ঠোঁটে লাগিয়েছে হালটা পিঙ্ক কালার লিপস্টিক। মুখে হালকা মেক-আপ লাগিয়ে অসম্ভব সুন্দর রূপে মোনা আজ তার নিজেকে সাজিয়েছে। অন্য রকম মুগ্ধতায় মোনাকে দেখে শ্রাবণ একদম টাস্কি খেয়েছে। এতো সুন্দর করে আগে কখনো মোনাকে শ্রাবণ সাজতে দেখেনি। আজ হঠাৎ এতো সুন্দর করে সাজার কোনো রহস্য খুঁজে পাচ্ছে না শ্রাবণ। তো তারপর দু’জনে ঘুরতে বের হলো যমুনা নদীর দিকে। সামনে চলতে চলতে একটা প্রজাপতি এসে মোনার চারপাশে উড়তে শুরু করলো। মোনা তা দেখে বিমোহিত হলো। বারংবার ধরার চেষ্টা করেও ধরতে পারলো না প্রজাপতিটাকে। এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে শ্রাবণকে মোনা অনুরোধ করলো প্রজাপতিটাকে ধরে দেওয়ার জন্য। শ্রাবণ বাধ্য ছেলের মতো অনেক কষ্ট করে ধরে এনে দিল প্রজাপতিটাকে। প্রজাপতি হাতে পেয়ে মোনা অনেক খুশি হলো। এজন্য শ্রাবণকে ধন্যবাদ দিতেও ভুল করলো না মোনা। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে প্রকৃতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করে নানান খুনসুটিতে তারা উপভোগ করছে নান্দনিক বিকেলের সিগ্ধ সময়। চলতে চলতে এক সময় তারা নদীপাড়ে চলে এলো। মোনা অবাক দৃষ্টিতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।

মোনা : ওয়াও কি সুন্দর তাই না গো !

শ্রাবণ : হুমমম একদম ঠিক বলেছো। কিন্তু তোমার থেকে বেশি সুন্দর নয়।

মোনা : কি যে বলো না তুমি !  আমি আবার সুন্দর নাকি !

শ্রাবণ : আলবাত সুন্দর তুমি। সেটা বলার কোনো অবকাশ রাখে না।

মোনা : তোমার মনটা অনেক সুন্দর তো তাই অসুন্দরকেও তোমার চোখে সুন্দর লাগে।

শ্রাবণ : ওহ সুন্দরকে সুন্দর বলাও বুঝি অনেক দোষের কিছু !

মোনা : তা হবে কেন !

শ্রাবণ : তাহলে যে তুমি বলছো…

মোনা : কি বললাম…

শ্রাবণ : আমার মাথা…

মোনা : হা হা হা…

শ্রাবণ : তোমার হাসিটা সত্যি অনেক বেশি সুন্দর। একদম স্বতঃস্ফূর্ত। এমন হাসি বারবার শুনতে মন চায়।

মোনা : এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে…

শ্রাবণ : মোটেও না। সব ঠিক আছে।

মোনা : কি ঠিক আছে…

শ্রাবণ : (এবার মোনার কথা শ্রাবণ এড়িয়ে গেলো।) আজকের বিকেলটা অনেক সুন্দর তাই না ! দেখছো কতো সুন্দর লাগছে শুভ্র কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়া আলতো আলিঙ্গন।

মোনা : হুমমম তাইতো। চলো আমাকে কাশফুল দেখাবে।

শ্রাবণ : হুমমম চলো…

মোনা : একটু আস্তে হাঁটো। আমিতো তোমার সাথে হেঁটে পারিনা। জোরে হাঁটতে পারিনা আমি।

শ্রাবণ : হুমমম। হাত ধরো…

মোনা : ওকে…

শ্রাবণ : এইতো এসে পড়েছি কাশফুলের বনে। দেখো কাছ থেকে কাশফুল কতো সুন্দর লাগে !

মোনা : (কাশফুলের বনে এসে মোনা অনেক জোরে নিঃশ্বাস নিলো দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে আকাশের দিকে চেয়ে।এমন সুন্দর বিকেল সে কোনোদিন উপভোগ করেনি। সবকিছু তার কাছে ভীষণ সুন্দর লাগছিলো।) তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে গো !  এ দেখি স্বর্গের কোনো লীলাভূমি। অনেক বেশি ভালো লাগছে আমার।

শ্রাবণ : তাই বুঝি !

মোনা : হুমমম তাই…

শ্রাবণ : চলো এখানে আমরা ঘর বেঁধে থেকে যাই হাজার বছর। দু’জনে খালি ঘুরে বেড়াবো নদীর সমস্ত অববাহিকা জুড়ে। যেখানে থাকবে না কোনো পিছুটান। ভালোবাসায় কাটিয়ে দিবো এক জীবন নয় ; লক্ষ জীবন।

মোনা : এই যে কবিতা শুরু হয়ে গেলো। কবি মানুষের মনে কবিতা ছাড়া বুঝি আর কিচ্ছু নেই। কথায় কথায় কবিতা। উঠতে বসতে কবিতা। স্বয়নে-স্বপনে কবিতা।

শ্রাবণ : হা হা হা। এসে যায় কবিতা। কি করবো !

মোনা : আচ্ছা নদী নিয়ে কোনো কবিতা লিখে থাকলে শোনাও তো কবি সাহেব।

শ্রাবণ : ঠিক আছে। আমার লেখা প্রিয় একটা কবিতা শোনাচ্ছি তোমাকে। তাহলে শোনো…

 

মাতৃপ্রতিম নদীকে আমি ভীষণ ভালোবাসি !

নদীর মায়া জড়ানো স্নিগ্ধ আবেশে

কান পেতে শুনি জলের সঙ্গীত।

দখিনা সমীরণে ঢেউয়ের শব্দের তালে তালে

ভেসে চলি স্বর্ণালি গাঙচিলের দেশে।

পড়ন্ত বিকেলে ঝলমলে সোনা রোদে

ভালো লাগে ডুব সাঁতার নদীর বয়ে চলায়।

নদীর তীর ঘেঁষে বালিহাঁসের নাচনে

আটকে যায় সু-দৃষ্টি মুগ্ধতার মায়াজালে।

এই নদীকে আমি ভীষণ ভালোবাসি !

সে যে আমার দুঃখ বোঝে,

সে আমার দুঃখ বোঝে !

 

মোনা : আমি কি তোমার দুঃখ বুঝি না !

শ্রাবণ : হুমমম অবশ্যই বোঝ ! বোঝ বলেই তো নিজেকে অনেক হালকা লাগে যখন তোমার সাথে থাকি।

মোনা : এমনিতে কবিতাটা অনেক সুন্দর হয়েছে। খুব ভালো লাগছে আমার। এতো সুন্দর কবিতা শোনানোর জন্য আবারো তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শ্রাবণ : শুধুই ধন্যবাদ !  আর কিছু না…

মোনা : আর কি চাও বলো…

শ্রাবণ : সেটা তো অনেক বছর ধরেই চাচ্ছি। কিন্তু পাচ্ছি না তো…

মোনা : কি বলো ! সেটা আবার কি ?

শ্রাবণ : তোমার মন…

মোনা : আমার মনে কি তোমাকে জায়গা দেইনি ?

শ্রাবণ : সেটা দিছো। তবুও…

মোনা : এই একগুচ্ছ কাশফুল ছিঁড়ে দাও না  গো…

শ্রাবণ : হুমমম দিচ্ছি… এই নাও…

মোনা : হুমমম… চলো আরো সামনে যাই…

শ্রাবণ : চলো…

মোনা : এই সামনে ওটা নৌকা বাঁধা না ?

শ্রাবণ : হুমমম…

মোনা : চলো নৌকা চালাবো…

শ্রাবণ : ওকে চলো…

মোনা : একটু আস্তে যাও। হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ব্যথা হয়ে গেলো…

শ্রাবণ : তাহলে আমার কোলে আসো…

মোনা : তখন আবার তুমি হাঁটতে পারবে না। যেই পরিমাণ শুকনো তুমি। তোমাকে দেখে মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। এতো শুকনো কেন তুমি ! বেশি বেশি খেয়ে মোটা হও। তোমাকে অনেক স্মার্ট হতে হবে। তাড়াতাড়ি মোটা হবে…

শ্রাবণ : দেখা যাক…

মোনা :  হুমমম…

শ্রাবণ : এই যে নৌকার কাছে এসে পড়েছি। তুমি  আগে উঠো। দেখে উঠো, পড়ে যেওনা আবার।

মোনা : হুমমম আমি উঠছি। এবার তুমি উঠো।

শ্রাবণ : হুমমম। ভেসে ভেসে আজ অনেক দূরে চলে যাবো। পিছু ফেরার তাড়া নেই।

মোনা :  ওকে তাই চলো…

শ্রাবণ :  হুমমম…

মোনা : এই পরিস্থিতিতে কোনো কবিতা থাকলে শোনাও তাে কবি সাহবে । এই সুন্দর সময়টা তোমার কবিতার সাথে কাটাতে চাই। বারবার তোমার কবিতায় ফিরে যেতে চাই।

শ্রাবণ : হুমমম শোনো তাহলে….

 

জলে ভাসা নৌকা আমি তুমি প্রাণের মাঝি

যেই ঘাটে নিয়ে যাবে যাইতে আমি রাজি।

মেঠো পথের ফুল আমি তুমি চন্দ্রপরী

তোমার প্রেমে ডুবে যেতে কল্পনাতে মরি !

আঁকাবাঁকা সায়র আমি তুমি ঊর্মিমালা

তোমার জন্য নিয়ত খোলা মনের তালা।

শরতের অভ্র আমি তুমি মেঘ বালিকা

নিশীথের তামসীতে কাছে এসো  মালিকা।

মধু বনের ভৃঙ্গ আমি তুমি ফোটা ফুল

নন্দনের সুবাস মাখে খুঁয়া কালো চুল।

সৌম্যের পূজক আমি তুমি কালের অর্চা

তোমায় ভেবে করে যাই সাহিত্যের চর্চা।

অর্কের কিরণ আমি তুমি উদক ছবি

ছায়া ঘেরা নিসর্গে বাজাই সুরের অবি।

পাখি ডাকা ভোর আমি তুমি মৃদু মারুত

কল্পলোকের ভুবনে দেখি তোমার সুরৎ।

 

মোনা : পৃথিবীর সব পরিস্থিতি নিয়ে তুমি কবিতা লিখেছো নাকি। বলার সাথে সাথে তুমি আবৃত্তি করতে শুরু করো।

শ্রাবণ : হবে হয়তো। আর তুমি পাশে থাকলে  ঝরনার মতো মাথায় কবিতা আসে। ছন্দবদ্ধ কথামালা খেলা করে আমার চারপাশে। সত্যি তোমাকে পাশে পেয়ে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাই।

মোনা : আমাকে আবেগি করে তুলো না গো। এমনিতেই আমি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ। তোমার কবিতা যতো শুনি ততোই শুনতে মন চায়। এমন কবিতা সারা জীবন শুনিও।

শ্রাবণ : হুমমম অবশ্যই…

মোনা : আজকের বিকেলটা খুব সুন্দর কাটলো। সত্যি প্রকৃতি অনেক সুন্দর। এমন একটা সুন্দর বিকেল উপহার দেওয়ার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কবি সাহেব। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এনো। চলো এবার বাড়ির পথ ধরি। আবার অন্যদিন আসবো৷ আজকের মতো তাহলে ফিরে যাই।

শ্রাবণ : হুমমম…প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে সবকিছুই সুন্দর লাগে। অফুরন্ত ভালো লাগে। তোমার সাথে থাকলে ভালোলাগার কোনো শেষ নেই। আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসের প্রতিধ্বনি তুমি। তোমাকে বাসি ভীষণ ভালো। এক আকাশ ভালোলাগায় আরো একটি বিকেল কেটে গেলো তোমার সান্নিধ্যে।

মোনা : ফেরার পথ চলতে চলতে তোমার আরো একটি কবিতা শুনবো। এখন যেহেতু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, তাই সন্ধ্যা নিয়ে কোনো কবিতা শোনাও…

শ্রাবণ : ওকে। হাতে হাত রাখো… তাহলে শোনো সেই কবিতা…

 

তোমার নামে সন্ধ্যা নামে অঝোর ফুলের বনে

ফাগুন হাওয়া ছুঁয়ে যায় নত অবুঝ প্রাণে।

প্রজাপতির পাখনা মেলে তোমার উড়ে চলা

প্রাণের অধিক ভালোবাসি হয় না কভু বলা।

বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনে তোমার ঠোঁটের হাসি

মন ছোঁয়া সুর-সঙ্গীতে প্রেম যমুনায় ভাসি।

নিঝুম রাতে চাঁদের আলোয় শুক্ল মাখামাখি

দৃষ্টি জুড়ে তোমার ছবি বিভোর নয়নে দেখি।

রাত্রি যখন আঁধার নামে খুঁজি তোমার মুখ

হৃদয় মাঝে এলে তুমি পাই যে অপার সুখ।

হাজার তারার মাঝে তুমি মিহি সোমের আলো

মনের ঘরে তোমায় রেখে বাসি অনেক ভালো।

কাব্য কথায় তোমার নামে লিখি প্রেমের চিঠি

সঁপে দিলাম জীবন তরী যাওগো তুমি উঠি।

কাছে পাওয়ার অভিপ্রায়ে তোমার কাছে আসি

এই জন্মে তুমি আমার শ্যাম কালিয়ার বাঁশি।

 

ক্লান্ত বিকেলে ওরা বাসায় চলে গেলো। মনে হলো দু’টি পাখি সারাদিন দূরের কোথাও অবকাশ যাপন করে চলে গেলো নীড়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। একটু পরেই রাত নামবে। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ঘুমিয়ে যাবে। এভাবেই দিনের পর রাত আসে, রাতের পর দিন। তার মাঝে সাক্ষী হয়ে থাকে হাজারো রোমাঞ্চকর ঘটনা। তেমনি আরো একটি দিন কেটে গেলো শ্রাবণ এবং মোনার জীবনে। এমন ঘটনা ওদের জীবনে এই প্রথম নয়। দু’জন একত্র হলেই স্বর্গীয় ভালোলাগায় মগ্ন হতে থাকে। ওরা ভালো থাক প্রকৃতির নান্দনিক উপাখ্যান হয়ে।

 

(চলবে…)

 

ভালোবাসার সমীকরণ (৭ম পর্ব)

জাকির আলম 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park