ভালোবাসার সমীকরণ (৬ষ্ঠ পর্ব)
জাকির আলম
শ্রাবণের মনটা আজ ভীষণ খারাপ। মন ভালো করার মতো কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না। প্রিয় মানুষ মোনাও তার কাছে নেই। তার মন ভালো করার একমাত্র মাধ্যমে হতে পারে মোনা। অথচ সেও গাজীপুরে অবস্থান করছে বোনের বাসায়৷ ফিরবে সেই শনিবার। এই শনিবার যেন শ্রাবণের কাছে আসছেই না। মোনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে শ্রাবণ অস্থির হয়ে পড়েছে। খাওয়াতে অরুচি, চোখে ঘুম নেই। চোখের নিচে কালি পড়েছে না ঘুমানোর বদৌলতে। মোনার বিরহ আর ভালো লাগছে না শ্রাবণের কাছে। ভীষণ কষ্টে এক একটি দিন চলে যাচ্ছে শ্রাবণের। অথচ সে ঘটনা মোনার অজানা। এমন অনেক কষ্ট আছে যা মোনাকে শ্রাবণ বলতে পারে না। বললে মোনা কষ্ট পাবে তাই এড়িয়ে যায় শ্রাবণ। শ্রাবণ মোনাকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। মোনার ভালোবাসায় একদম ডুবে গেছে শ্রাবণ। আষাঢ় মাসের ভরা নদীর মতো নব যৌবনে ভরপুর মোনার দেহ।
মোনার দেহের সেই যৌবন সুধা পান করার জন্য শ্রাবণ অস্থির। কাছে পেলেই যেন ঝাপটে ধরবে। শ্রাবণের ইচ্ছা মোনাকে বিয়ে করে ঘর সংসার করবে। এমনকি বিয়ের পর হানিমুনেও যাওয়ার ইচ্ছা কক্সবাজার। হানিমুনের দিনগুলো মোনার সাথে শ্রাবণ একান্ত সময় কাটাবে ভীষণ ভালোলাগায়। রাত এলেই ঝলমলে আলোয় মোনার সাথে রোমান্সে জড়াবে এটাই তার প্রত্যাশা। মোনাকে শ্রাবণ নিজ হাতে সাজাবে, নিজ হাতে খাইয়ে দিবে, গোসল করিয়ে দিবে, অনেক বেশি কোয়ার করবে। মোনার চোখে তাকিয়ে শ্রাবণ তার পূর্ণ ভালোবাসা প্রকাশ করবে। কাছে পেলে সারা রাত ঘুমাতে দিবে না মোনাকে। গল্প কথায় কাটিয়ে দিবে সারা রাত। মোনার কভুও মন খারাপ হলে কবিতার সংমিশ্রণে ভালো করে দিবে মোনার মন। মোনার বুকে মাথা রেখে গল্প কথায় মেতে থাকবে সারা রাত। এভাবেই মোনাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছায় শ্রাবণ মনের মধ্যে ভালোলাগার স্বপ্ন এঁকে যায় প্রতিনিয়ত। অথচ সে সবে মোনার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। শ্রাবণ নিজের জীবনের চেয়েও বেশি মোনাকে ভালোবাসে৷ মোনার কখনো মন খারাপ হলে মন ভালো করার জন্য শ্রাবণ অস্থির হয়ে যায়। অসুস্থ হলে সেবা যত্নের মাধ্যমে সারিয়ে তোলে। মোনা চাইলে প্রিয় কোনো জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসে মন ভালো করার জন্য। মোনার সব পরিস্থিতিতে শ্রাবণ পাশে থাকে ছায়ার মতো। তার জীবনে মোনা ছাড়া বিকল্প কেউ নেই। গভীর ভালোলাগায় মোনার মাঝে শ্রাবণ মিশে থাকে। মোনার মুখে হাসি ফোটানের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতেও দ্বিধা নেই শ্রাবণের।
মোনাকে সবসময় হাসি খুশি রাখবে এটাই তার একমাত্র ব্রত। শ্রাবণের আপাদমস্তক সবটা জুড়ে মোনা। শ্রাবণ যখন নবম শ্রেণিতে পড়ে তখন থেকেই মোনা শ্রাবণের মনে জায়গা করে আছে। শ্রাবণ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ুয়া ছাত্র। কিছুদিন পর লেখাপড়ার চাপ কমে যাবে। শ্রাবণের ইচ্ছা লেখাপড়া শেষ করে ভালো একটা জব নিয়ে মোনাকে বিয়ে করবে। মোনাকে নিজের করে পেয়ে সব স্বপ্ন পূরণ করবে। মোনাকে ছাড়া তার আর চলছে না। দিন কাটে না, রাত কাটে না মোনাকে ছাড়া। মোনার সৌন্দর্য আর সরলতা শ্রাবণকে পাগল করে দিয়েছে। এমন একটা মানুষ জীবন থেকে হারালে শ্রাবণের জীবনে কষ্টের কোনো সীমা থাকবে না। গভীর ভালোবাসায় মোনাকে শ্রাবণ জয় করতে চায়। মোনার হাতে রাখ রেখে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সম্মুখ পথে হেঁটে যেতে যায়। চাঁদের জোছনায় মোনার সাথে কাটাতে চায় প্রেমিকের বেশে। মোনার খোলা চুলে প্রজাপতির মতো দোল খেতে চায়। মোনার তীক্ষ্ণ নাকে নাক ঘষে দৈহিক সম্পর্কে জড়াতে চায় মোনার সাথে। মোনার সাথে শ্রাবণ প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে চায় স্বর্গীয় ভালোলাগায়। মোনার উপচানে বুকে মাথা রেখে জোনাকির আলোয় শ্রাবণ হারিয়ে যেতে চায়।
মোনার গোলাপি ঠোঁটের লালি অধরে মেখে শ্রাবণ হতে চায় পূতপবিত্র। বৃষ্টি মুখর শ্রাবণ রাতে মোনার সাথে ভিজে কাটাবে এটাই তার ব্যাকুল মনোবাসনা। শীতার্ত রাতগুলো মোনাকে বুকে জড়িয়ে উষ্ণ আমেজে ঘুমিয়ে কাটাবে। পরম তৃপ্তি মনে ঘুম ভাঙবে ভোর বেলায়। তারপর দুই কাপ গরম কফিতে মোনার সাথে শ্রাবণের সকাল কাটবে অন্য রকম ভালোলাগায়। শ্রাবণ চায় মোনাকে বিয়ে করে নতুনত্বে জীবন সাজাতে। সবকিছু মোনার ইচ্ছে মতো সাজিয়ে তুলবে। এটা যদিও শ্রাবণের একান্ত মনোবাসনা।
এভাবে কয়েক দিন পর সেই শনিবার চলে এলো। শ্রাবণের কাঙ্খিত দিন বলা চলে। মোনা চলে এলো নিজ বাসায়। মোনাকে অবশ্য শ্রাবণ এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করেছে। হাত পায়ে মোজা এবং হিজাব পরিহিত বাস থেকে নামার পর মোনাকে চিনতে শ্রাবণের কোনো কষ্ট হয়নি। তারপর দু’জনে কুশল বিনিময় করে চলে এলো মোনার বাসার পথে।
মোনা : তারপর বলো কবি সাহেব কি অবস্থা তোমার ?
শ্রাবণ : ( শ্রাবণকে মোনা সম্মান করে কবি নামে ডাকে। শ্রাবণ বলে কখনোই ডাকে না।) তেমন ভালো না। তুমি না থাকায় এই কয়েকটা দিন আমার খুব কষ্টে কেটেছে। খুব মন খারাপ ছিলো এই কয়েকদিন তোমার সাথে থাকতে না পেরে।
মোনা : আহারে প্রেমিক কবি ! এতো ভালোবাসা আমার জন্য। কোথা থেকে আসে এতো ভালোবাসা শুনি !
শ্রাবণ : সরাসরি অন্তর থেকে আসে। মনের অনেক গভীর থেকে আসে। ভালোলাগার কোনো জগৎ থেকে আসে৷
মোনা : ওরে বাপরে… কথার যেন কই ফোটে। একবার কথা বলার সুযোগ পেলেই শুরু হয়ে যায় কবিতার ফুলঝুরি। তুমি পারো বটে…
শ্রাবণ : সবাইকে নিয়ে কবিতা আসে না। শুধুমাত্র প্রিয় মানুষ না হলে কখনো কবিতা আসে না। কবিতা অনেক কঠিন জিনিস। চাইলেই কেউ কবিতা লিখতে পারে না। এর জন্য অনেক সাধনা প্রয়োজন। অনেক গভীর ভাবনার প্রয়োজন।
মোনা : হুমমম একদম সত্যি বলেছো। তোমার সাথে আমি মজা করছিলাম। আমি অনেক ভাগ্যবান যে একজন কবির সাথে আমার পথ চলা। এভাবেই পাশে থেকো কবি সাহেব। অনেক দিন তোমার কবিতা শুনি না। পথ চলতে চলতে একটা কবিতা শোনাওতো এখন…
শ্রাবণ : কেমন কবিতা শুনতে চাও প্রিয়তমা ?
মোনা : তোমার পছন্দ মতো একটা হলেই হবে। তোমার সব লেখাই আমার অনেক প্রিয়। সেখান থেকে শোনাও একটা…
শ্রাবণ : ওকে শোনো তাহলে…
উর্বর মৃত্তিকার একটা গর্ভাশয় পেলে
তোমার সাথে কাটাবো পরিহিত আয়ুষ্কাল।
চৈতালী নদীর বুকে বালিকার নব যৌবনে
সাঁতার কেটে পার হবো অনাগত মহাকাল।
মাতাল হাওয়ার রাতে একটা শয্যাগৃহ পেলে
তোমার সাথে কাটাবো মধু জোছনার নিমেষ।
সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে যৌনবাসের প্রাক্কালে
সমাগমে ডুবে যাবো দ্রিদির সুখের প্রদেশ।
পঁচিশ পেরিয়ে ছাব্বিশে একটা বসন্ত পেলে
তোমার সাথে কাটাবো ফাগুন দিনের নিশি।
তৃষ্ণার্ত মনের জৈবিক ক্ষুধার ছাঁচে সাহসী জোয়ান
প্রথম সঙ্গমের ছোঁয়া পেতে ভীষণ ভালোবাসি।
পুরুষোত্তম জীবনে রঙিন একটা আকাশ পেলে
তোমার সাথে কাটাবো ঈশ্বর প্রেমে চিরদিন।
অভিলাষের রাতে প্রিয়জনের ভালোবাসা পেতে
ছুটে চলে পাগল মন ঝড়ের বেড়ে অমলিন।
মোনা : কি বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না গো। এতো সুন্দর করে তুমি লিখো আর এতো সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করো – সত্যি আমার কোনো ভাষায় নেই তোমাকে বলার মতো। খুব সুন্দর হয়েছে। অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। এই দেখো তোমার কবিতা শুনতে শুনতে একদম বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি।
শ্রাবণ : হুমমম তাইতো…
মোনা : আজকের মতো তাহলে তুমিও বাসায় যাও। ফোনে কথা হবে রাতে।
শ্রাবণ : ওকে চলি তাহলে… বাই…
মোনা : হুমমম…বাই…
(চলবে…)