বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকরির পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মেধা, যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, মাঝে মাঝে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পুরো ব্যবস্থাপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
প্রশ্ন ফাঁস শুধু একটি পরীক্ষার অনিয়ম নয়, এটি পুরো জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। মেধার মূল্যায়ন যেখানে চাকরি পাওয়ার প্রধান মাপকাঠি, সেখানে প্রশ্ন ফাঁস এই প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে। এতে শুধু প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয় না, বরং সিস্টেমে অযোগ্য এবং অযোগ্যরা ঢুকে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে প্রশাসন ও সেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কেন ফাঁস হয় প্রশ্ন?
প্রশ্ন ফাঁসের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ।
নৈতিক অবক্ষয়: যারা প্রশ্নপত্র তৈরি বা সরবরাহের দায়িত্বে থাকেন, তাদের কিছু সংখ্যক ব্যক্তির লোভ ও অসততা।
টাকা ও প্রভাব: প্রশ্ন ফাঁস একটি লাভজনক কালোবাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থের লোভে অসাধু চক্র প্রশ্ন ফাঁস করে।
প্রযুক্তির অপব্যবহার: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খুব সহজে প্রশ্ন ফাঁস ছড়িয়ে পড়ছে।
দুর্বল নজরদারি: প্রশ্নপত্র তৈরি, সংরক্ষণ এবং বিতরণ প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব।
এর প্রভাব কী? প্রশ্ন ফাঁসের ফলে সমাজের একাধিক স্তরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে:
মেধাবীদের হতাশা: প্রকৃত মেধাবীরা যখন ন্যায্য মূল্যায়ন পান না, তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে চান।
বিশ্বাসের সংকট: পরীক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবার বিসিএস প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে।
প্রশাসনে অযোগ্য ব্যক্তির প্রবেশ: অযোগ্য ব্যক্তিরা প্রশাসনে ঢুকে পড়লে সেবার মান নিম্নগামী হয়।
জাতীয় ক্ষতি: একজন অযোগ্য কর্মকর্তা একটি দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সমাধানের পথে কী করা উচিত?
এই সমস্যার সমাধানে আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
কঠোর নিরাপত্তা: প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে পরীক্ষার দিন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
আইনগত ব্যবস্থা: প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং এ বিষয়ে কোনো প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া যাবে না।
জনসচেতনতা: সমাজে নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে এবং পরীক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে যে অন্যায়ভাবে সফল হওয়া দীর্ঘস্থায়ী নয়।
প্রশ্নপত্রে পরিবর্তন: একই ধরনের প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং পরীক্ষার প্রশ্ন সেট প্রক্রিয়া আরও গোপনীয় রাখতে হবে।
প্রযুক্তি ব্যবহারের সঠিক প্রয়োগ: প্রশ্ন ফাঁস রোধে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বিসিএস শুধু একটি পরীক্ষা নয়; এটি জাতির ভবিষ্যৎ তৈরির একটি প্রক্রিয়া। প্রশ্ন ফাঁসের মতো অবক্ষয় আমাদের নৈতিকতা এবং উন্নয়ন উভয়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ বিষয়ে প্রশাসন, পরীক্ষার্থী এবং জনগণ সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। মেধার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি সুষ্ঠু প্রশাসনই পারে আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ ও গৌরবময় করতে।
লেখকঃ মোছাঃ সাথী খাতুন
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com