1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

বিলের ধারে কাশফুল  —- মাসুদ রানা 

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫
  • ১০৪ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

গ্রামের বিলের ধারে যখন শরৎ আসে, তখন চারিদিকে এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের জন্ম হয়। ভরা বর্ষার পানিতে মাঠ-ঘাট ভেসে থাকে, নদীর বুক ফেঁড়ে স্রোত বইতে থাকে। কিন্তু বর্ষার রুদ্রমূর্তি শেষে যখন আকাশে মেঘের দল ভেসে যায়, হালকা রোদ ঝরে পড়ে মাঠের ওপর, তখন হাওয়ার ডাকে জেগে ওঠে কাশফুল। সেই সাদা রঙের লম্বা সরু ফুল যখন হাওয়ায় দুলতে থাকে, তখন মনে হয় যেন আকাশের মেঘ মাটিতে নেমে এসেছে।

 

কাশফুল শুধু একটি ফুল নয়, কাশফুল হলো গ্রামের মানুষের হৃদয়ের আবেগ। শরৎ এলেই কাশবনের সৌন্দর্য যেন প্রকৃতির সাজপোশাক। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার মনেই কাশফুল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি। কারো কাছে কাশফুল প্রথম প্রেমের স্বপ্ন, কারো কাছে কাশফুল শৈশবের স্মৃতি, আবার কারো কাছে কাশফুল প্রকৃতির শান্তির প্রতীক।

 

১। শরতের হাওয়ায় কাশফুলের নৃত্য

কাশফুলের ডগাগুলো যখন বাতাসে দুলতে থাকে, তখন মনে হয় হাজার হাজার সাদা পাখি একসাথে উড়ছে। শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ আর মাঠের ধারে দুলতে থাকা কাশফুল—এই দুই মিলেমিশে এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরি করে। গ্রামের মানুষ হাটে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, মনে হয় একে দেখেই মন ভরে যায়।

 

শরতের হাওয়া আলাদা। এতে নেই বর্ষার ভেজা গন্ধ, আবার নেই গ্রীষ্মের দমবন্ধ করা গরম। শরতের হাওয়া হালকা, কোমল, যেন ভালোবাসার স্পর্শ। সেই হাওয়ায় কাশফুল মাথা দুলিয়ে নাচে। যেন প্রতিটি কাশফুল বলছে—”আমি আছি, শরৎ এসেছে, প্রকৃতির রূপ খুলে গেছে।”

 

২। কাশফুল ও শৈশবের স্মৃতি

গ্রামে বড় হওয়া অনেকেরই কাশফুল নিয়ে শৈশবের মধুর স্মৃতি আছে। বর্ষার পানি নামতে না নামতেই বিলের ধারে গিয়ে বন্ধুরা একসাথে কাশফুল তুলত। কেউ বানাত মুকুট, কেউ বানাত লম্বা ঝাড়, কেউবা বানাত নৌকার সাজ। মেয়েরা মাথায় কাশফুল গুঁজে আয়নায় তাকিয়ে হাসত, আর ছেলেরা মজা করে বলত—”তুই তো শরতের রানি!”

 

কেউ কেউ আবার কাশবনের ভেতরে লুকোচুরি খেলত। চারিদিকে সাদা কাশফুলের দোলায় মিশে গিয়ে খেলতে খেলতে সময় কেটে যেত। সন্ধ্যার আকাশে যখন সূর্য ডুবে যেত, তখন সেই সাদা কাশফুলের ওপর পড়া লাল আভা এক অন্য জগৎ তৈরি করত।

 

৩। কাশফুলের প্রেমকাহিনি

গ্রামের তরুণ-তরুণীদের প্রেমের সাথে কাশফুলের গভীর সম্পর্ক আছে। শরতের বিকেলে প্রেমিক-প্রেমিকা হাঁটতে হাঁটতে কাশবনের ধারে গিয়ে বসে থাকত। হাওয়ার দোলায় কাশফুল নড়ত, তারা হাত ধরে স্বপ্ন দেখত। অনেকে বলে, কাশবন হলো গ্রামের প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিরব সাক্ষী।

 

অনেক কবিতা ও গানেও কাশফুল এসেছে ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। সাদা রঙ মানেই পবিত্রতা, সরলতা। কাশফুলের মতোই ভালোবাসাও হওয়া উচিত নিখুঁত, স্বচ্ছ আর নির্দোষ। তাই গ্রামীণ জীবনে কাশফুল যেন প্রেমের এক চিরন্তন ভাষা।

 

৪। প্রকৃতির সাথে কাশফুলের বন্ধন

প্রকৃতির সৌন্দর্য কাশফুল ছাড়া পূর্ণ হয় না। আকাশের মেঘ, নদীর কলকল ধ্বনি, শরতের পাখির গান—সব মিলিয়ে কাশফুল যেন প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ ঘটায়। কৃষক যখন মাঠে কাজ করে, তখন দূরে কাশবন দুলতে দেখে তার মনেও এক ধরণের শান্তি আসে।

 

কাশফুলকে দেখে মানুষ বোঝে ঋতু পরিবর্তনের কথা। বর্ষার বন্যা শেষে শরৎ এসেছে, সামনে হেমন্ত আসবে, ফসল ঘরে উঠবে। তাই কাশফুল শুধু সৌন্দর্যের নয়, আশা আর নতুন জীবনেরও প্রতীক।

 

৫। উৎসবের রঙে কাশফুল

শরৎ মানেই দুর্গাপূজা। গ্রামে যখন ঢাক বাজে, তখন কাশফুল দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়। দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা যেন কাশফুলের সাদা রঙে লুকিয়ে থাকে। গ্রামের মেয়েরা কাশফুল কেটে এনে দেবীর পায়ে অর্ঘ্য দেয়।

 

আবার মুসলিম পরিবারেও ঈদের সময় কাশফুল দিয়ে ঘর সাজানো হয়। ছোটরা কাশফুল দিয়ে খেলতে খেলতে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়। তাই ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ছাড়িয়ে কাশফুল সবার আনন্দে জায়গা করে নেয়।

 

৬। কাশফুল ও কবির কলম

বাংলা সাহিত্যে কাশফুল অনেক কবি-লেখকের অনুপ্রেরণা হয়েছে। শরতের কাশফুল নিয়ে লেখা কবিতায় থাকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ভালোবাসার সরলতা, আর জীবনের গভীর অনুভূতি।

 

কবিরা কাশফুলকে তুলনা করেছেন প্রিয় মানুষের হাসির সাথে, কারো চোখের গভীরতার সাথে। কারণ কাশফুল যেমন নিখাদ আর নির্মল, তেমনি ভালোবাসাও হওয়া উচিত নির্মল।

 

৭। কাশফুলের জীবনের শিক্ষা

কাশফুল আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়—সরলতাই আসল সৌন্দর্য। কাশফুলের কোনো রঙিন পাপড়ি নেই, নেই সুগন্ধ, তবুও তার মধ্যে আছে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। কেন? কারণ কাশফুল স্বাভাবিক, সহজ, সাদা।

 

এই শিক্ষা আমাদের জীবনে জরুরি। আমরা যদি সহজভাবে বাঁচতে শিখি, অযথা জটিলতা না বাড়াই, তবে জীবনও কাশফুলের মতো সুন্দর হয়ে উঠবে।

 

৮। আজকের চোখে কাশফুল

আজ যখন শহরে কংক্রিটের দালান উঠছে, গাড়ির ভিড়ে আকাশ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে, তখন কাশফুল যেন এক হারানো সৌন্দর্যের নাম। গ্রামের পথে হাঁটতে গিয়ে এখনও কেউ যদি কাশবন দেখে, তার চোখ জুড়িয়ে যায়।

 

অনেকে শহর থেকে গ্রামে ছুটে আসে শুধু কাশফুল দেখতে। শরতের ছবি তুলতে কাশবন এখন জনপ্রিয় জায়গা। কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে কাশফুল কেবল ছবির বিষয় নয়, কাশফুল হলো তাদের শিকড়ের টান, তাদের ভালোবাসার অংশ।

 

কাশফুলের ভালোবাসা আসলে প্রকৃতির ভালোবাসা। কাশফুল আমাদের শেখায় সরল হতে, স্বচ্ছ হতে, ভালোবাসায় নিখুঁত হতে। শরতের হাওয়ায় কাশফুলের দোলা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হয়।

 

যেদিকে তাকাই কাশফুল, যেন সাদা সমুদ্র দুলছে। মনে হয় প্রকৃতি বলছে—”দেখো, আমি এখনও বেঁচে আছি, আমি এখনও সুন্দর।”

 

তুমি কাশফুল, তুমি আকাশে-বাতাসে উড়ো, তুমি ভালোবাসার দূত হয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নাও। শরৎ যতদিন থাকবে, কাশফুল ততদিন থাকবে, আর কাশফুলের ভালোবাসা চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park