1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

বিমূর্ত রজনী  — জাকির আলম

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫
  • ৫৫ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

বিমূর্ত রজনী 

জাকির আলম

 

শতকোটি বছরের পুরনো হাড় কাঁপা মাঘের কনকনে শীতের নীরব নিস্তব্ধ বিমূর্ত রজনী কৃষ্ণপক্ষে বিরাজমান। জীবনের প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়ে ঘুমের অতল দেশে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার একান্ত তৃষ্ণা বোষ্টমীর অজান্তে। অভিমানের জাল বুনে কাঁটাতারের মতো খুঁটি নোঙর করে দু’জনার এক পৃথিবীকে বিভক্ত করার নিরলস প্রচেষ্টা। ঘুমলি স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলার দৃঢ়প্রত্যয় অবচেতন চিত্তে। যাকে বলে উড়নচণ্ডী জীবন থেকে নির্বিকার ভাবে পালানোর প্রচেষ্টা। তাইতো শেষ পর্যন্ত এপথই বেছে নিয়েছি সব দুঃখ যন্ত্রণাকে চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেওয়ার জন্য। সাত-পাঁচ ভেবে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানিনা। শিয়রের বালিশটি মাথার নিচে না রেখে পায়ের তলায় রেখে ডান হাতটা ভাঁজ করে মাথার নিচে বালিশ করে যন্ত্রণার ঘুমে নিমগ্ন। অমানিশার অন্ধকারে তলিয়ে গেছে চিরচেনা পৃথিবীর সমস্ত অলিগলি।

 

ধীরে ধীরে বিমূর্ত রজনীটা ভরা যৌবনের দিকে অবিরাম ছুটে চলেছে। হু হু করে নিরন্তর বয়ে চলেছে উত্তরের হাড় কাঁপানো শীতল হাওয়া। ঘুমের অতলে সমস্ত পৃথিবী অচেতন। হঠাৎ করেই যেন বাতাসে ভেসে এলো জোড়ালো কণ্ঠে বিকট কান্নার বীভৎস নিনাদ। তা শুনে আমি আৎকান হয়ে তৎক্ষনাৎ উঠে বিছানায় বসে পড়ি যন্ত্রণার ঘুমকে উপেক্ষা করে। কান্নার ধাঁচ শুনে বুঝতে আর কোনো সমস্যা হলো না। কারণ পাশের বাড়ির বৃদ্ধ লোকটা আর বেঁচে নেই বলে তার বান্ধবরা শোকে কেঁদে চলেছে। বয়সের ভারে চলে গেছে এ যন্ত্রণার পৃথিবী থেকে না ফেরার দেশে। বেচারা বেঁচে গেছে। কারণ পৃথিবীর কোনো যন্ত্রণা তাকে আর ভোগ করতে হবে না। তাকে আর কাতরাতে হবে না নিস্তেজ হওয়া শরীরে কঙ্কালসার দেহের অস্থিমজ্জার অসহন ব্যথায়। অসহ্য যন্ত্রণা ধীরে ধীরে আমার শরীর জুড়ে ঘাঁপটি মেরে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।

 

প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শরীরটা বরফের মতো জমে যেতে শুরু করেছে। নিজেকে কোনোক্রমেই ঠাণ্ডার হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারছি না। কাঁপন ধরেছে শরীরের সর্বস্তরে। ওদিকে দেওয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দে কেমন যেন ভয় ভয় অনুভূত হচ্ছে হৃদয়ের অতল গহ্বরে। শীতকালে যদিও বেশি লোডশেডিং হয় না, কিন্তু আজ সারা রাত ভর চলছে লোডশেডিং। এমন অন্ধকারে নিজেকে চিনতেও বড্ড ভুল হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে একের পর এক জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁট দিয়ে টেনে বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভাসিয়ে দিচ্ছি সমস্ত কুটির আমার ! কী যে যন্ত্রণার এই বিমূর্ত রজনীগুলো তা আমি ব্যতীত আর কেউ বুঝবে না। আলোকিত জীবন থেকে ধীরে ধীরে অন্ধকার জগতে উপনীত আমি। জীবনের সমস্ত বিশেষত্ব চিরতরে ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনেই। চির সুখের নিদ্রা চিরতরে বিলীয়মান হয়ে যাচ্ছে জীবনের সব গতিবিধি থেকে। হৃদয়ের অতল গভীরে সারাক্ষণ অন্তর্দাহ জ্বলে-পুড়ে জ্বলন্ত অঙ্গারের মতো প্রতিনিয়ত কয়লা হয়ে যাচ্ছে। কোনো চিকিৎসকের সাধ্য নেই অন্তর পোড়া রোগের ঔষধ দেওয়ার।

 

এ রোগ যার হয়েছে সেই বুঝেছে এ রোগের কী বিষম যন্ত্রণা ! চিন চিন করে ব্যথা অনুভূত হয়। কিন্ত কোনো প্রকার ঔষধ নেই এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার। সুতরাং ধুকে ধুকে মরে যাওয়া ব্যতীত এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বেঁচে থাকার। যার আরাধনায় ভাবাত্মক এই রাতগুলো অতিবাহিত হয় সে নিতান্তই অভিমানী। তাকে কোনো মতেই বোঝাতে পারি না যে, তার প্রতি আমার ভালোবাসার গভীরতা ঠিক কতটুকু। বিছানা থেকে উঠে অবচেতন চিত্তে বাতায়ন খুলে তাকাতেই চোখে পড়লো ললিতাদের হুনা পড়ে থাকা বাস্তুভিটা। ললিতারা অনেক আগেই গ্রামীণ জীবন থেকে সপরিবারে স্বপ্নের শহরে পাড়ি জমিয়েছে। যার কারণে ললিতাদের বাস্তুভিটা এখন হিন্দু বাবুদের দখলে। পুকুরপাড়ে সুদর্শনগুলো উড়ে উড়ে কী যে আনন্দ উপভোগ করছে তা কেই বা জানে। জলে ভেসে থাকা কস্তুরীপানাগুলো যেন ঘুমন্ত শিশির মতো নিশ্চুপ হয়ে চিতনা থালার উপর চির সুখের নিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে।

 

নিশাচরেরা অন্যের গৃহের সম্পদ লুট করার জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছে। অজানা দূরের সবুজ ফসলের ক্ষেত থেকে ভেসে আসছে শিয়ালের হাঁক। উঠানে ঘুমানো কুকুরগুলো জেগে উঠে শিয়ালের হাঁক শুনে তারাও যেন প্রতিবাদীর ধ্বনিতে হাঁক ছেড়ে উঠে জানান দিচ্ছে আমরাও জেগে আছি। খেটে খাওয়া দিন মজুরের ঘরে পেটের ক্ষুধায় অবিরাম কেঁদে চলেছে অবুঝ শিশু সন্তানটি। কিন্তু শিশুটির মা তার মৃত্যক্ষুধা নিবারণ না করে কিল থাপ্পড় দিয়ে তাকে আরও কাঁদিয়ে চলেছে। দিন মজুরে বাবা সারাদিন হাড় খাটুনির পর রাতে যে একটু ঘুমিয়ে তার ক্লান্ত শরীরটাকে বিশ্রাম দিবে তারও কোনো উপায়ন্তর নেই। তারপাশে যদি বিছুটির মতো দজ্জাল বউ থাকে তবে কেমন করে সুখের নিদ্রা হয় ? বেচারা সাহস করে বউকে কোনোকিছু বলতেও পারে না। সে জানে কোনোকিছু বলতে গেলেই সর্পের মতো ফসকে উঠবে। তার চেয়ে বরং চোখ বুঁজে সব সহ্য করাই শ্রেয়। ওদিকে বারুণীরা ঝিলের জলে অবিরাম আলেয়ার বাষ্প ঝরিয়ে সৌন্দর্য ভরা প্রকৃতিকে বিবর্ণ করে ফেলছে। বিষাদিত ভাবে দেখে যাচ্ছি তাদের দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রণার সারথি হয়ে।

 

অবিনীত জীবনকে তারা নৈবেদ্যের থালে অবিন্যস্ত ভাবে সাজিয়ে রেখেছে। তারা খুব খুশি হতো যদি এক পেয়ালা বিষাক্ত গরল পান করে নিজ হাতে মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে পারতো। আকয়ের কার্বনে তারা নিরবধি জীবন্মৃত অবস্থায় জ্বলে-পুড়ে ধুকে ধুকে নিঃশেষিত হচ্ছে। তাদের দুর্বিষহ জীবন দেখে ভগ্ন হৃদয় মর্মাহত। বিমূর্ত রজনী ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে শেষ রাত্রির দিকে। মৃত্যুনিথর অঙ্গনে শ্রাবণের বারিধারার মতো অবিরাম ঝরে পড়ছে রাতের জড়ায়ু দিয়ে শিরীষের স্তন থেকে ফোঁটা ফোঁটা মুক্তার মতো শিশিরের কণা। ঘন কুয়াশার আবরণে চিরচেনা পৃথিবীর রূপ চশমার ফাঁকে বড্ড ধোঁয়াটে মনে হচ্ছে।   বায়স ডাকা প্রভাত এলেই বোঝা যায় রাত বুঝি শেষ। কিন্তু আমার চিরসাথী বিমূর্ত রজনীর কোনো শেষ নেই। তখন বোষ্টমীর উদ্দেশ্যে বলতে ইচ্ছে করে- তোমার কথা ভেবে যে রাতগুলো আমি একান্ত নির্ঘুমে কাটিয়েছি, যদি তার একটি রাত তোমাকে আমি উপহার স্বরূপ দিতে পারতাম, তবে বুঝতে তুমি আমার ঐ সমস্ত রাতগুলো কতো বেশি যন্ত্রণামুখর ছিলো !

 

একবিন্দু চোখের জলে লণ্ঠনের প্রদীপ জ্বালিয়ে বিষাদ এক ট্র্যাজেডি লেখার অন্তরে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বিমূর্ত রজনীর এক বাস্তবিক উপাখ্যান ভগ্ন চিত্তের একান্ত খায়েশ।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park