মোহাম্মদ মোহছেন মোবারক
বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম রক্তের নদী পাড়ি দিয়ে, লাখো শহীদের আত্মত্যাগ আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ড অর্জনের লড়াই ছিল না এটি ছিল একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের সংগ্রাম। অথচ আজ স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে এসেও যখন বিচার ও ন্যায়ের জন্য জনসাধারণকে রাজপথে নামতে হয়, তখন প্রশ্ন উঠে এই রাষ্ট্র কি এখনো কেবলমাত্র দেশপ্রেমিকদের জন্যই?
আমরা এখনো বাস করছি একটি দ্বৈত নীতির ছায়াতলে, যেখানে একদল শাসনের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, জনগণের কণ্ঠরোধ করে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নিজেদের রক্ষাকবচে পরিণত করে। এই বৈষম্যের শুরু কিন্তু আজকের নয় শুরু হয়েছিল সেই ১৯৭১ সালেই, যখন কিছু গোষ্ঠী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, এ দেশের মাটিকে রক্তাক্ত করেছিল, এবং বাঙালির স্বপ্নকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।
৭১ এর প্রতিক্রিয়াশীলতা এবং ২৪ এর প্রতিরোধ একই ন্যায়ের দাবিদার
সেই ৭১-এ যারা পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগী হয়ে, এই মাটিতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা ছিল এ দেশের জন্মের শত্রু। তাদের বিচার হয়েছে, তবে পূর্ণাঙ্গ নয়। আজো তাদের ভাবাদর্শ ও উত্তরসূরীরা নানা মুখোশে সমাজে সক্রিয়—রাজনীতির নামে আবারো ঘৃণা, সহিংসতা ও বিভাজন ছড়াচ্ছে। তাদের কার্যকলাপেই বোঝা যায় তারা এখনো সেই একই স্বাধীনতাবিরোধী চেতনার ধারক।
অন্যদিকে, ২০২৪ সালের গণআন্দোলন ছিল এই চেতনাবিরোধীদের এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়কদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রকৃত জবাব। সজনগণ দাঁড়িয়েছিল ন্যায়বিচারের পক্ষে, বাকস্বাধীনতার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে।
একটি মানদণ্ডেই হোক বিচার ৭১ হোক বা ২৪
ন্যায়বিচার তখনই প্রকৃত হয়, যখন তা পরিচয়, দল কিংবা সময় দেখে নয় বরং অপরাধ দেখে হয়। ৭১-এ যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিল তাদের যেমন বিচার হওয়া জরুরি ছিল, তেমনি আজ যারা ক্ষমতার মোহে জনগণের অধিকার হরণ করছে, তারাও যেন ছাড় না পায়।
৭১-এর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আজ যদি আবার ভিন্ন রূপে ফিরে আসে, এবং রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় পুনরায় সঙ্ঘবদ্ধ হয়, তবে তাদের প্রতিহত করাও হবে আমাদের প্রজন্মের দায়। তারা যেন কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশ নিতে না পারে, রাষ্ট্রকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে না পারে এটাই হওয়া উচিত সময়ের প্রধান দাবি।
এই দেশ কেবলমাত্র বাংলাদেশপন্থীদের জন্য
যারা এই দেশকে ভালোবাসে, যারা স্বাধীনতার মূল্য বোঝে, যারা ন্যায় ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী এ দেশ তাদের। যারা বারবার ঘৃণার রাজনীতি করে, বৈষম্যের চর্চা করে, মুখে দেশপ্রেমের বুলি আওড়িয়ে রাষ্ট্রের সর্বনাশে লিপ্ত হয়, তারা কখনোই এ দেশের প্রকৃত বন্ধু নয়। তাদের মুখোশ উন্মোচন করে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
শেষ কথা
৭১ মানে প্রতিরোধের সূচনা,
২৪ মানে অধিকার রক্ষার শপথ।
৭১-এর সন্ত্রাসীদের যেমন ছাড় ছিল না,
২৪-এর নিপীড়করাও যেন না পায় ছাড়।
চাই এক মানদণ্ডে বিচার,
চাই কলুষমুক্ত বাংলাদেশ।