1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

বাংলাদেশের নব্য রাজাকার

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১০২ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের নব্য রাজাকার

ইয়াকুব আলী তুহিন

 

বাঙালি জাতির জীবনে রাজাকার শব্দটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং নৃশংসতা আমাদের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান বাধা হলো দুর্নীতি। দেশের টাকায় পেট ভরে, দেশের টাকা পাচার করে, ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে এবং দেশের সম্পদ লুটপাট করে পাহাড় সমপরিমান সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাই বর্তমান বাংলাদেশের নব্য রাজাকার। এরা জাতির শত্রু, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে, জাতির পিঠে বোঝা বাড়ায় এবং সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাদের কার্যকলাপ কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকেও দেশের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

১৯৭১ সালের রাজাকাররা যেমন আমাদের স্বাধীনতার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল, আধুনিক রাজাকাররাও তেমনি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা জাতির শত্রু এবং তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপন্ন করছে। তাদের দমন করতে না পারলে আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব না।

বাংলাদেশে দুর্নীতি সর্বব্যাপী। প্রশাসন, রাজনীতি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—প্রায় সবক্ষেত্রেই দুর্নীতি বিরাজমান। এই দুর্নীতি শুধুমাত্র নিম্নস্তরের নয়, বরং উঁচু পর্যায়েও বিস্তৃত। সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, কেউই এই দুর্নীতির কালো হাত থেকে মুক্ত নয়।

দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা একটি গুরুতর সমস্যা। ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও নানাবিধ পন্থা ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রচুর অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচার হওয়া অর্থ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হতে পারত, কিন্তু তা দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। দুর্নীতির আরেকটি প্রধান রূপ হলো ঘুষ। প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ঘুষের প্রভাব বিস্তৃত। চাকরি পেতে, চিকিৎসা সেবা নিতে, এমনকি ন্যায় বিচার পেতেও ঘুষ দিতে হয়। এই ঘুষের প্রচলন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। অপরদিকে, যারা ঘুষ খেয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অসাম্য সৃষ্টি করছে।

নব্য রাজাকাররা শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে দেশের ক্ষতি করছে না, তারা দেশের সামাজিক ও নৈতিক ভিত্তিকেও ধ্বংস করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে দেশের আইন ও শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘুষ দিয়ে নিজেদের অপরাধ আড়াল করছে। তাদের এই অপকর্মের ফলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়েছে।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না, কারণ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বিদেশে পাচার হচ্ছে। এছাড়া, দুর্নীতির কারণে জনগণের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দুর্নীতি বিরোধী আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। এছাড়া, জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

দুর্নীতি রোধে সুশাসনের বিকল্প নেই। দেশের প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জনগণ প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারে। দুর্নীতি রোধে শিক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে, যাতে তারা দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে সচেতন হয় এবং ভবিষ্যতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য দুর্নীতি ও অর্থ পাচার একটি বড় বাধা। দেশের টাকায় পেট ভরে, দেশের টাকা পাচার করে, ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে, দেশের সম্পদ লুটপাট করে যারা পাহাড় সমপরিমান সম্পদের মালিক হয়, তারাই বাংলাদেশের নব্য রাজাকার। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুশাসন, শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। তবেই সম্ভব হবে দুর্নীতিমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park