1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ফোনের নেশা সর্বনাশা 

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৪ মে, ২০২৫
  • ৫০ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

লেখকঃ গোলাম সরোয়ার

 

বর্তমান বিশ্বে দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে স্মার্টফোন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক সব কাজেই এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ঢুঁ না মারলে আমাদের দিন শুরু হয় না। ইনস্টাগ্রামের রিল চেক করা যেন একপ্রকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক নজরে সারাদিনের খবরা খবর পেতে ইউটিউবে ঢুকতেই হচ্ছে। এভাবেই ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। এই সবকিছু কম্পিউটারের মাধ্যমে করা গেলেও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা আমাদের এর দিকেই ঝুঁকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এটিই যেন আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোননির্ভর হয়ে তরুণ সমাজ এর প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে। আর স্মার্টফোনের এই আসক্তি আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে না তো?

 

প্রশ্ন জাগে, আমাদের তরুণ সমাজ স্মার্টফোনের প্রতি কতটা আসক্ত। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে জানা যায়, ৪৬ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারী ‘ফোন ছাড়া জীবন অসম্ভব’ বলে মনে করেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, তরুণরা এখন মুঠোফোনকে তাদের শরীরের অঙ্গ বলে মনে করেন। ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন, স্বাভাবিক ব্যক্তিদের চেয়ে মুঠোফোনে আসক্ত ব্যক্তিদের উচ্চরক্তচাপ, হƒদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শতকরা ৬৩ ভাগ মানুষ ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে আগে চোখ রাখেন। মুঠোফোনে আসক্তিকে তো বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা প্লেগ রোগের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

 

আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি পরিমাণে লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের তরুণদের ওপর চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এদের ৮৪ শতাংশই দৈনিক ২ ঘণ্টা থেকে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করেন। ২ ঘণ্টার কম সময় ব্যয় করেন প্রায় ১৫ শতাংশ তরুণ-তরুণী। এ থেকেই স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’ দেশের ২ হাজার ২৬ জন ব্যক্তির স্মার্টফোনের ব্যবহারের ওপর একটি জরিপ করেছে। ‘আত্মহত্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তরুণদের ভাবনা’ শিরোনামে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে সংগঠনটি। এতে দেখা যায়, দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করেন ২৭ শতাংশ তরুণ তরুণী। ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ দৈনিক ৪-৬ ঘণ্টা ও ৩১ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী দৈনিক ২-৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। দৈনিক সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন ১৪.৯ শতাংশ। জরিপের তথ্য বলছে, তরুণ বয়সীদের ঘুমের পরিমাণ কমে আসছে। ২৩.৯ শতাংশ তরুণ-তরুণী বলেছেন, তাদের পরিমিত বা পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। ৭৬.১ শতাংশ বলেছেন তাদের পরিমিত ঘুম হয়।

 

স্মার্টফোনের অতিরিক্ত আসক্তি অনেকাংশে মানসিক অশান্তি, ঘুমে ব্যাঘাত ও আত্মহত্যার মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটতে পারে। ওই জরিপে গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, দৈনিক গড়ে ৩০ মিনিটের বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

 

বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। দেশে গত তিন মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। এ সময় গ্রাহক ৩০ লাখের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৩৮ লাখ। আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই ফেসবুক ব্যবহার করেন। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। দেশে ২০২৩ সালের শুরু থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

 

অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে নোমোফোবিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। নোমোফোবিয়া মনের এমন একটি অবস্থা যখন সব সময় মোবাইল আছে কি না, নাকি হারিয়ে গেল মনের মধ্যে এমন একটা ভয় তৈরি হয়। যুক্তরাজ্যের ও ভারতের তরুণরা যথাক্রমে ৫৩ ও ২৯ শতাংশ এ রোগের শিকার। এ ছাড়া মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের ওপরও যার প্রভাব পড়তে দেখা যায়। মোবাইলনির্ভরতা যথাসম্ভব কমিয়ে আনাই হতে পারে এর কার্যকর সমাধান।

 

মোবাইল ফোন সুলভ হওয়ায় বর্তমানে সব বয়সী মানুষের কাছেই এটি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে পর্নোগ্রাফির হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েই চলেছে। আকাশ সংস্কৃতির ফলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তরুণরা অনলাইন গেমিং ও জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।

 

বেসরকারি সংগঠন ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, রাজধানী ঢাকার ৭৭ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি আসক্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং এর ফলস্বরূপ পর্নোগ্রাফি আসক্তি অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

স্মার্টফোনের আসক্তি কমাতে সবার আগে যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হচ্ছে আত্মনিয়ন্ত্রণ। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় নিয়মতান্ত্রিকতা নিয়ে আসলেই এ ভয়াবহ আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের আড্ডা, পারিবারিক মিলনমেলায় কিংবা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের মাঝে স্মার্টফোনে উঁকি দেয়ার বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ঘুমানোর সময় বালিশের পাশে মুঠোফোন নিয়ে ঘুমানো যাবে না। এতে ফোনের তেজস্ক্রিয়জনিত ঝুঁকি থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তেমনি ঘুম থেকে উঠেই স্মার্টফোনে চোখ রাখার অভ্যাস থেকেও মুক্তি মিলবে। গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল কাজের জন্য মুঠোফোনে ই-মেইলের উত্তর দেয়ার বদলে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে অভ্যাস করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকালে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও রাতে বই পড়ার অভ্যাস স্মার্টফোনে আসক্তি অনেকটা কমিয়ে আনে। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য দিনের একটা সময় নির্ধারণ করে নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। ই-বুক পড়ার অভ্যাসের বদলে বাজার থেকে কেনা বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে।

 

স্মার্টফোন বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের এক অন্যতম অনুষঙ্গ। একে এড়িয়ে যাওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। বরং ব্যবহারকারীদের নিজেদেরই এর ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে ফোন তুলে দেয়ার আগে শতবার ভাবতে হবে। তা না হলে সম্ভাবনাময় প্রজন্ম বাস্তব দুনিয়া থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park