1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ফুলের মতোnঝড়ে গেলো  —-  মাহমুদ হাফিজ 

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৭৩ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

একটু একটু করে নরম সূর্য উঠছে পুবাকাশে।কুয়াশার কারণে ডিমের কুসুমের মতো দেখতে সূর্যটা। নরম রোদ ছড়িয়ে পড়ছে শীতসকালের গায়ে।ভীষণ রকমের সুন্দর এ সকালটা।মায়াবী মায়াবি একধরনের আবেশ মিশে আছে তাতে।ঝাঁকে ঝাঁকে গ্রামীণ মানুষরা বাইরে বেরোচ্ছে এ আবেশ কুড়োতে।গায়ে গায়ে এর কোমলতার ছোঁয়া নিতে। আদিবও বের হলো।কায়দা হাতে ওর।মক্তবে যাচ্ছে। সাথে আরোও দুজন। তানিয়া।মিহির।কাপড়ে জড়ানো দুটো কুরআন শরীফ তানিয়া ও মিহিরের বুকে।মিহির কচি হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কুরআন শরীফজড়ানো কাপড়টায়; যেন কুয়াশায় ভিজে না যায় পবিত্র কুরআন । আর্দ্রতা যেন না ঢুকে ভেতরে।আদিব বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে কায়দাটা।গায়ে একটা চাদর।গেঞ্জি তার নিচে।গেঞ্জির নিচে কায়দা।পরম যত্নে কায়দাটা নিয়েছে ও।যেন পৃথিবীর সবসম্মান কায়দাটার ওপর ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে ।

 

 

মকতবখানা একটু দূরে।হেঁটে দশ মিনিটের পথ বাড়ি থেকে।সাত মিনিটেও পৌঁছা যায় দ্রুত চললে।সময় কম বলে তড়িঘড়ি করে হাঁটছে মিহিররা।মকতবে যাবার পথে সারি সারি খেজুর গাছে চোখ আটকে যায় ওদের ।শ্রমজীবীরা এসময়ই খেজুরের রস নামায় গাছ থেকে।রসের হাড়ির চারপাশে বুড়িয়ে যাওয়া মানুষের ভীড় থাকে।বিশ টাকার বিনিময়ে তাজা রস নেয় অনেকে।মিহির ও তানিয়া আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে ; আজ ওরা রস কিনবে।দাদার পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট সরিয়ে রেখেছে ওরা।দাদা টাকার কথা জানলে বকবে না— এটা নিশ্চিত। কিন্তু সাতসকালে ঠাণ্ডা রস খাবার কথা শুনলে দাদা বেজায় বকবে— এজন্য এই দুর্বুদ্ধিটা এঁটেছে মিহির ও তানিয়া মিলে।

 

 

ফোটানো পানি থেকে ভাপ উঠার মতন শীতের কুয়াশা উঠছে পুকুর থেকে। ওদিক তাকিয়ে দাঁড়ানো আদিব।একা ও। মিহিররা খেজুরের রস খেতে গেছে। ওকে সাথে নিতে টেনেছে মিহিররা।কিন্তু যায়নি।ঠাণ্ডার সমস্যা আছে বলে নিজেকে আলাদা রেখেছে ।ওদের সাথে না যাওয়ার কারণ হলো— পকেট শূন্য আদিবের।টাকা নেই । কাছে টাকা না-থাকলে কেউ নাস্তা করার সময় পাশে যায় না আদিব; এটা ওর প্রশংসনীয় অভ্যেস।এজন্য দূরে আছে।অপেক্ষা করছে তানিয়ারা আসার।

 

 

অল্প সময়েই ফিরলো তানিয়া ও মিহির।আদিব ওখানেই দাঁড়িয়ে। হুট করে ওর চোখ বরাবর রসভরা দুটো গ্লাস চকচক করতে লাগলো।তানিয়া ও মিহির দুজনেই আদিবের জন্য রস কিনেছে।হতভম্ব আদিব।কারটা গ্রহণ করবে; দ্বিধায় পড়ে গেল।কিছু একটা ভেবে দুগ্লাস থেকেই একটু একটু রস খেলো।বাকি রইলো অর্ধেক করে দুটো গ্লাসেই।আদিব খাবার পর বাকিটুকু খেয়ে নিল মিহির – তানিয়া।

 

 

কিছুক্ষণ একই জায়গায় খেজুরের রস নামানোর ব্যাপারে বুড়োদের অভিজ্ঞতা দেখে আবারো চলল মক্তব পানে। তখনো সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়েনি ভালো মতো।

 

মকতবে যেতে দেরি হয়ে গেছে আজ।আদিব ভয়ে কাঁপছে। উস্তাদ যদি পিটুনি দেন, কিংবা বকেন— এ নিয়ে ওর ভয়।আজ কায়দার শেষসবক পড়ে হাতে কুরআন শরীফ নেয়ার কথা আদিবের। কুরআন শরীফ হাতে নেওয়ার খুশিতে ওর বাবা,দাদা আসবেন একটু পর। তাঁরা এসে মকতবের বাইরে দাঁড়ানো দেখলে মন খারাপ করবেন,কষ্ট পাবেন।আদিব উস্তদদের থেকে শুনেছিলো, ‘বাবা-মা ও মুরুব্বিদের কষ্ট দিতে হয় না কখনো। তারা কষ্ট পেলে আল্লাহ তায়ালা বেজার হন’— এসব নিয়ে ভাবনার শেষ নেই আদিবের। ও বাবা,দাদাকে কষ্ট দিতে চায় না। এজন্য বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে উস্তাদের সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। উস্তাদের রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো। চোখে ভোরের শিশিরের মতন পবিত্র জল এনে, অনুনয়-ভরা সুরে বলল— ‘উস্তাদ জ্বি! আজ ভুল হয়ে গেছে।ক্ষমা করে দিন। সামনে থেকে কখনো আর দেরি হবে না। সময় মতো চলে আসবো।’

 

 

মুচকি হাসলেন উস্তাদ। আদিবের কাঁধে হাত রেখে বললেন — ‘ তুমি কাঁদছো কেন! আজ তো কুরআন শরীফ হাতে নিবে তুমি। এ দিনে কাঁদতে হয় না। তোমার বাবা ও দাদা আসবে এক্ষুণি। কাঁদতে দেখলে ভীষণ রকমের মন খারাপ করবেন তাঁরা।কেঁদো না আর। চলো, ভেতরে যাই।’

 

পেছনে ফিরে উস্তাদ তানিয়া, মিহিরকেও ভেতরে যাবার অনুমতি দিলেন।

 

‘আদিবের কারণে আজ রক্ষা পেলাম। নয়তো শীতে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। আদিব খুব ভালো ছেলে।কম কথা বলে।সবার সাথে মিশে না। অন্যের খাবার থেকে দূরে থাকে।বাবা-মা’র কথা শুনে। শিক্ষককে সম্মান করে। তা-ই না মিহির?’

 

তানিয়া মিহিরকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বলল।

 

মিহির সম্মতি জানালো তানিয়ার কথায়।

 

★★★

গ্রামের মকতবটা এখন ফাঁকা। মুরুব্বি উস্তাদ জনাদশেক ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে মকতবের এককোণায় বসে থাকেন প্রতিদিন। মরামনে কায়দা-কুরআন শেখান।অথচ গতক’দিন আগেও সকালের মক্তবটা জমজমাট থাকত।উস্তাদ বুড়ো হয়েও এতোগুলা কচিকাঁচা শিশু-কিশোরদের দেখে নব – উদ্দিপনা খুঁজে পেতেন।মকতবটা ছিলো তাঁর কাছে সাজানো এক সংসারের মতো।যেদিন থেকে মিহির ও তানিয়ার মতো ভালো ছাত্র-ছাত্রীরা মক্তবে আসা ছেড়ে দিয়েছে, সেদিন থেকে মকতবে নেমেছে বহুবছরের শূন্যতা। এই শূন্যতা বুড়ো উস্তাদের মনকেও শূন্য করে দিয়েছে। ভালো ও শিষ্টাচারসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী হারাবার ব্যথা সইতে পারছেন না তিনি।মনের বধ্যভূমিতে তিনি খুঁজছেন আদিবের মতো আদববান ছাত্র।একা হলে ভেবে বসেন — আহ্ আদিব যদি ফিরে আসত! কিন্তু, যে একবার আল্লাহর কাছে চলে যায়, সে তো আর ফিরে না।কখনো না।আদিবও চলে গেছে আল্লাহর কাছে।

 

আদিব যেদিন কুরআন শরীফ হাতে নেয়, সেদিনটি ছিলো বছরের শেষ দিন। ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানোর জন্য এলাকার যুবকরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।অনেক মুরুব্বিদেরও দেখা যাচ্ছে এ আয়োজনে। এরকম দিনের শেষসময়ে,সন্ধ্যের কোলে ভর করে আদিব, তানিয়া ও মিহির যাচ্ছিলো মকতবের উস্তাদের বাড়ীতে। আঁকাবাঁকা পথ পেরুচ্ছিলো ওরা। একদল যুবকের হাতে ফানুস দেখতে পায় হঠাৎ। ফানুসগুলোর গায়ে আগুন জ্বলছিলো। মিহির ও তানিয়া ভয়ে দৌঁড়ে ছুটে।আদিব সেসুযোগ পায় না।ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে একা।ঠিক তখন একটা ফানুস আদিবের দিকে এগিয়ে আসে। আকাশ ভেঙে যাবার মতো বিকট শব্দ ছুড়ে ফানুসটা ফাঁটে।আদিবের ছোট্ট সহনশক্তির বাইরে ছিলো শব্দটা। সইতে পারেনি ও।চোখের পলকে বেহুশ হয়ে পড়ে যায় ঠাণ্ডা মাটিতে,সন্ধ্যের কোলে।

তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেয়া হয় আদিবকে। রাত বারোটার পর সংবাদ আসে— আদিব আর নেই পৃথিবীতে। চলে গেছে পরপারে। ওর মৃত্যুসংবাদ যখন স্বজনদেরকে কাঁদিয়ে তুলে, সমগ্র দেশ তখন আতশবাজি ও ফানুস উড়ানোয় ব্যস্ত। ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নামক অপসংস্কৃতিকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নেয়া মানুষগুলো আমোদ – আহ্লাদে মত্ত। তারা নতুন বছরের খোঁজ রাখলো,কিন্তু বছরটাকে স্বাগত জানানোর নিষিদ্ধ আতশবাজির আয়োজনের কারণে আদিবের মতো কতো শিশু-কিশোর ফুলের মতো ঝড়ে গেলো— সেটার খোঁজ নেয়ার সুযোগ তাদের হলো না!

 

আদিবকে দাফন করা হয় মকতবের পেছনে।যেখানে শুয়ে ও প্রিয় উস্তাদের তেলাওয়াত শুনতে পারবে। ওর মতো কিশোরদের মুখে উচ্চারিত তেলাওয়াত শুনে মুগ্ধ হতে পারবে প্রতিনিয়ত। কিন্তু সহপাঠী ও প্রতিবেশি ‘ তানিয়া -মিহির ‘-এর তেলাওয়াত কখনো হয়তো শুনবে না।কারণ, তানিয়া-মিহির আতশবাজির শব্দ সইতে না পেরে আহত। হাসপাতালে ভর্তি দুজনেই। কিছুক্ষণ আগে হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিলো। ফোন রিসিভ করেই তানিয়ার মা চিৎকার করে ওঠেন। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।হাসপাতাল থেকে কী সংবাদ এসেছে, ছোট্ট কবরটায় শুয়ে থাকা আদিব এটা জানে না। হয়তো কোনো দুঃসংবাদ!

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park