সাদিয়া আক্তার
ব্যস্ততার এই যুগে আজকাল অনেকেই প্রেশার কুকারে রান্না করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কথা হচ্ছে সময় সাশ্রয়ী রান্না করতে কেই বা করতে না চাইবে। রান্নার সব উপকরণ প্রেশার কুকারের ভেতর দিয়ে ঢাকনা আটকিয়ে গ্যাস কিংবা ইন্ডাকশানে বসিয়ে দিলেই কাজ শেষ। মুহূর্তেই সব ধরনের খাবার রান্না করা যায় । এমনকি কেক বানাতেও প্রেশার কুকার ব্যবহার করা হয়। সব ধরনের রান্নার কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এই প্রেশার কুকার। যেসব খাবার সেদ্ধ হতে বেশি সময় লাগতো, সেগুলো এখন নিমিষেই করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে রান্নার জন্য কম সময় বরাদ্দ করলেই চলছে এবং কর্মব্যস্ত নারীরও অনেকটা সময় সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি অল্প সময়ে রান্নার কারণে সাশ্রয় হচ্ছে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসেরও।
প্রেশার কুকার হল এমন একটি জিনিস যাতে খুব দ্রুত রান্না করা যায় ৷ এটি ভিতরে বাষ্প এবং চাপ আটকে দ্রুত খাবারকে সিদ্ধ করে তোলে ৷ তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে হিতে বিপরীতও হতে পারে ৷ প্রেশার কুকারে বিস্ফোরণ ঘটে মানুষের মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে এমন নজিরও রয়েছে। যেমনটা ঘটেছে পঞ্জাবের পাতিয়ালার একটি বাড়িতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন প্রেশার কুকারে এমন বিস্ফোরণ ঘটে ?= প্রেশার কুকারে অতিরিক্ত খাবার ভর্তি করা হলে ভিতরের তরলটি প্রসারিত হয়ে ভেন্টটিকে ব্লক করে দেয়৷ ভেন্ট সাধারণত কুকারের ঢাকনার উপরে থাকে। যেখান দিয়ে বাড়তি বাষ্প বের হয়ে যায়, যাতে কুকারের ভেতরে অতিরিক্ত চাপ না জমে। অনেক সময় অতিরিক্ত চাপের ফলে কুকারটি বিস্ফোরিত হয় । সেক্ষেত্রে আপনি রান্নার প্রথম দিকে আপনার চুলার আঁচটা একটু বাড়িয়ে দিবেন। আবার শেষের দিকে চুলার আঁচটা একটু কমিয়ে রাখবেন। মনে রাখবেন, সবসময় উচ্চ তাপে রান্না করলে প্রেশার কুকারটি বিস্ফোরিত হতে পারে। তাই সাবধানতার সাথে রান্না করুন। প্রেশার কুকার যেমন রান্নাকে সহজ করে দিয়েছে সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করলে ঠিক তেমনি তা দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে। প্রেশার কুকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করবেন:
১. রান্নার আগে রাবার গ্যাসকেট চেক: প্রেশার কুকারে রান্না বসানোর আগে রাবার গ্যাসকেট চেক করুন। প্রেশার কুকারের ঢাকনাতে রাবারের একটা রিং রয়েছে, এটাকে গ্যাসকেট বলে। প্রেশার কুকারে থাকা এই রাবার বেল্টের কাজ হলো কুকারের প্রেশার বা চাপ নিয়ন্ত্রণ করা। সেইসঙ্গে এটি তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে রান্নার স্বাদ ও গুণগত মান বজায় থাকে। তাই নিরাপদে রান্না করতে হলে প্রেশার কুকারের বেল্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। গ্যাস কিংবা ইন্ডাকশানে কুকার চাপানোর আগে আপনি দেখে নিবেন এই রাবার গ্যাসকেটটা ঠিকমতো ঢাকনায় আটকানো আছে কিনা। যদি রাবার বেল্টটা ঢিলে হয়ে যায় তাহলে ২০ মিনিটের জন্য তা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিবেন। এর ফলে রাবার শক্ত হবে তখন প্রেশারে কুকারে পড়াতেও আর সমস্যা হবে না। তাছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতি বছর এই গ্যাসকেট পরিবর্তন করুন।
২. কুকারে অতিরিক্ত পানি ও খাবার : প্রেশার কুকার পরিমাণের অতিরিক্ত পানি ও খাবার দিয়ে ভর্তি করবেন না। কুকারে কেবল দুই-তৃতীয়াংশ খাবার দেবেন। কিংবা অর্ধেক ভর্তি করবেন। পাশাপাশি পরিমাণ মতো পানি দিয়ে প্রেশার কুকারের ঢাকনা আটকাবেন। খাবার বেশি থাকলে কিংবা পানি কম থাকলে প্রেশার কুকার সঠিকভাবে কাজ করবে না। আর পানি কম থাকলে খাবার ভালো করে সেদ্ধ হবে না। অর্থাৎ, প্রেশার কুকারে পানিটা এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে কুকারের ভেতর যথেষ্ট বাষ্প তৈরি হয়।
৩. ঢাকনা সঠিকভাবে বন্ধ করুন: প্রেশার কুকারে প্রতিবার রান্নার সময় খেয়াল রাখুন কুকারের ঢাকনা সঠিকভাবে আটকানো হয়েছে কিনা। কারণ ঢাকনা সঠিকভাবে আটকানো না গেলে তা হতে পারে দুর্ঘটনার কারণ। ঢাকনা খোলার আগে চুলা বন্ধ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ভেতরে চাপ কমলে তবেই ঢাকনা খুলুন। চুলায় থাকা অবস্থায় কখনো ঢাকনা খুলতে যাবেন না। এতে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
৪.তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন: উচ্চ তাপে রান্না শুরু করুন এবং চাপ তৈরি হলে আঁচ কমিয়ে দিন। কারণ অতিরিক্ত উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে কুকার বেশি চাপ তৈরি করতে পারে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
৫. তেলজাত খাবার রান্না: তেল বেশি গরম হয়ে গেলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকে। তাই তেল জাতীয় কিছু খাবার কুকারে রান্না করতে সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৬. তেল ছাড়া খাবার রান্না: তেল ছাড়া খাবার খাওয়ার জন্য অনেকেই প্রেশার কুকার বেছে নেন। কিন্তু প্রেশার কুকারেও রান্নার ক্ষেত্রে অল্প হলেও তেল ব্যবহার করতে হয়। তা না হলে প্রেশার কুকারের ক্ষতি হবে। এতে গ্যাসকেট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই তেল ছাড়া খাবার রান্নায় অল্প পরিমাণ হলেও তেল দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
৭. কুকারের ঢাকনা খোলার আগে করণীয়: কুকারের ঢাকনা খোলার আগে সব চাপ বের হয়ে গেছে কিনা তা আগে নিশ্চিত করুন। না বের হলে প্রেশার কুকারে সিটি বাজার সঙ্গে সঙ্গে চামচের সাহায্যে সব বাষ্প বাইরে বের করে দিন। এই বাষ্প ভিতরে থেকেই গেলেই হতে পারে মারাত্মক বিপদ। তখন প্রেশার কুকারের ঢাকনা খুলতে পারবেন না, বরং আটকে যাবে। প্রতিবার রান্না শেষ হলে রাবারের বেল্ট আলাদা করে খুলে পরিষ্কার করে নিন। রাবার সব সময় হাতে পরিষ্কার করবেন। শক্ত কোনো মাজুনি দিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না। তাতে রাবার বেল্ট ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। তখন ওটা আর ব্যবহারোপযোগী থাকবে না।
তাছাড়াও আপনার প্রেশার কুকারে বিপদের আশঙ্কা হলে রান্নায় বসানো গ্যাস কিংবা ইন্ডাকশন, যাতে কুকার বসানো রয়েছে সবার আগে তা বন্ধ করুন । তখন স্পর্শ তো করবেনই না, বরং সেই সময় প্রেশার কুকার থেকে অনেক দূরে থাকুন ৷ কারণ, আপনাদের সতর্কতাই হচ্ছে সঠিক অবলম্বন। আর তাই প্রেশার কুকার ব্যবহারের আগে সচেতনতার সাথে প্রেশার কুকারে থাকা নির্দেশিকা বইটি নিজেও পড়ুন এবং অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।