নিরব কবির ক্রন্দন
মোঃ আজহারুল ইসলাম (অপুর্ব)
শরৎকালের এক নিরব সন্ধ্যা। মেঘলা আকাশের নিচে বাতাস থমকে আছে, আর বৃষ্টি পড়ছে না, তবে মন যেন ভিজে যাচ্ছে। মোঃ আজহারুল ইসলাম (অপূর্ব) জানালার পাশে চুপচাপ বসে আছেন। তাঁর সামনে কাগজে কবিতার খসড়া, কিন্তু কলমটা থেমে আছে। একসময় যে কবিতা ছিল তাঁর আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ, আজ সেই কবিতাই যেন বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপূর্বের মুখে শুধু ক্লান্তির ছাপ। অনেক দিন ধরে লড়াই করছেন তিনি সাহিত্য জগতে একটি স্থায়ী জায়গা করে নিতে। প্রথম যখন সাহিত্য চর্চা শুরু করেন, তখন ভেবেছিলেন, নিজের প্রতিভা আর কাব্যের প্রতি ভালোবাসা দিয়েই তিনি সামনে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পেরেছেন, এ পথ কতটা কঠিন এবং প্রতারণায় ভরা।
কিছু কবিতা পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল, তখন খুব আশাবাদী ছিলেন তিনি। মনে হয়েছিল, এবার বুঝি সাহিত্য জগতে তার জায়গা হয়ে গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখলেন, এ জগতে প্রতিভার চেয়ে টাকার মূল্য বেশি। পত্রিকার সম্পাদকরা প্রায়ই প্রকাশের আগে টাকা চেয়ে বসেন। অপূর্ব, একজন বেকার ছাত্র, যার পকেটে টাকার অভাব, তার কি করে এভাবে কবিতা প্রকাশের সুযোগ আসবে? এদিকে, সমাজের চোখেও বেকারত্ব যেন অপরাধ। পরিবারও সমর্থন করছে না। সবাই বলছে, "কবিতা লিখে কি হবে? জীবনে বাস্তব কিছু করো।" এমন পরিস্থিতিতে অপূর্বর মন ভেঙে যাচ্ছে। তিনি লক্ষ্য করেছেন, মেয়েদের কবিতা প্রকাশ করতে সুবিধা হয়। যদি কোনো নারী কবি কবিতা প্রকাশ করতে চান, সম্পাদকরা বিনা দ্বিধায় তার কবিতা ছাপান। কিন্তু পুরুষ হলে সেই সুযোগ নেই। তিনি বুঝতে পারলেন, এই সমাজে প্রতিভার মুল্য নেই, মুল্য আছে শুধু টাকার।
প্রতিবারই কবিতা প্রকাশের চেষ্টা করেন অপূর্ব, কিন্তু কোথাও কেউ তাঁকে সুযোগ দিচ্ছে না। যদি দেয়ও, আগে থেকে টাকা চেয়ে বসে। বারবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়ে অপূর্বর মনে হলো, বেকার কবির জন্য সাহিত্য চর্চা যেন এক অবাস্তব স্বপ্ন। এক সময় ভেবেছিলেন, হয়তো সাহিত্যের মাধ্যমে একদিন তিনি নিজের পরিচয় গড়ে তুলবেন। কিন্তু আজ এত ব্যর্থতার পর তিনি বুঝতে পারছেন, সাহিত্যের জগতে তার জায়গা নেই। প্রতিভা নয়, টাকাই এখানে মূল। আর এই বোঝা তাঁর হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করছে।
অপূর্ব জানালার বাইরে তাকান। আকাশ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে, আর তার মনের ভেতরও যেন সেই অন্ধকার নেমে আসছে। হয়তো এই কবিতা তাঁর জীবনের শেষ কবিতা। "বেকার কবির এই জগতে কোনো ঠাঁই নেই," নিজের মনে ফিসফিস করে বলেন অপূর্ব, আর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
---শেষ পরিসমাপ্তি
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com