
দুঃস্বপ্নের বাসর
জাকির আলম
কনে : কি ব্যাপার, এতোক্ষণ যাবৎ বসে আছি কথা বলছেন না কেন?
বর : কি বলবো কথা খুঁজে পাচ্ছি না।
কনে : তাহলে আমি বলি আপনি উত্তর দেন।
বর : রাত অনেক হলো ঘুমান। একটু পরেই রাত শেষ হয়ে যাবে।
কনে : আজ কি রাত জানেন না?
বর : হুম জানি।
কনে : তাহলে?
বর : কিছু না।
কনে : আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে।
বর : কেন?
কনে : আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?
বর : সে রকম কিছু না।
কনে : তাহলে আপনার ব্যবহার তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
বর : এই বিয়েতে আমার মত ছিলো না।
কনে : তাহলে বিয়ে করেছেন কেন?
বর : পরিবারের চাপে করতে হয়েছে। ভেবেছিলাম জীবনে কোনোদিন বিয়ে করবো না।
কনে : এমন সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন?
বর : এমনি।
কনে : যেটা জানতে চেয়েছি তার সরাসরি উত্তর দেন। কথা বাড়িয়েন না।
বর : এক মেয়ের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিলো। হঠাৎ করে তার বিয়ে হয়ে যায়। তাকে হারিয়ে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাও করতে পারিনা আমি।
কনে : এই ব্যাপার তাহলে? তো এতো ভালোবাসা তার প্রতি, বিয়ে হতে দিলেন কেন?
বর : আমার পরিবার মেনে নেয়নি তাই।
কনে : মেনে নেয়নি কেন?
বর : তাকে আমার পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি। আসলে তাকে তো নয় তার পরিবারের মানুষ তেমন ভালো নয় সেজন্য কেউ মেনে নেয়নি।
কনে : তাহলে পালিয়ে যেতেন দু’জনে।
বর : আমি চেয়েছিলাম কিন্তু মেয়েটি রাজি হয়নি পালাতে।
কনে : সে আপনাকে কেমন ভালোবাসে ছিলো যে পালাতে পারেনি?
বর : তার পরিবারকে সে অনেক ভয় করতো। তাছাড়া সে মান সম্মানের ভয়ও করতো।
কনে : হুম ঠিকই তো। আমি মেয়েটির কোনো দোষ দেখছি না।
বর : মেয়েটির দোষ আমিও দেইনা।
কনে : তো এখন তো আমাকে বিয়ে করেছেন তাহলে কী করবেন এখন?
বর : আমার ভুল হয়েছে।
কনে : মানে? কী ভুল হয়েছে ?
বর : আপনাকে বিয়ে করা আমার ভুল হয়েছে।
কনে : তো এই ভুল আগে বোঝেননি কেন?
বর : পরিবারের চাপের কারণে বলতে পারিনি।
কনে : আমার জীবনটা কি আপনি ধ্বংস করে দিতে চান?
বর : কি যা তা বলছেন, তা করবো কেন?
কনে : তাহলে আমাকে মেনে নিচ্ছেন না কেন?
বর : আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন। আমি কোনোদিন আপনাকে মেনে নিতে পারবো না। আপনার জন্য অবশিষ্ট কোনো ভালোবাসা নেই আমার কাছে। সব ভালোবাসা সেই মেয়েটিকে দিয়ে ফেলেছি। এখন আমি শূন্য। কিন্তু আপনার প্রতি আমার অনেক সম্মান এবং শ্রদ্ধাবোধ আছে।
কনে : আপনার কাছে অনুরোধ আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েন না।
বর : ভয় পাবেন না। আমি নির্বোধ নই। সম্মানের সাথেই আপনার পরিবারের কাছে আপনাকে ফেরত দিবো। আপনাকে আমি কোনো স্পর্শ করবো না। এখন যেহেতু রাত কোথাও যাওয়া যাবে না। সকাল হোক আপনাকে আমি আপনার বাসায় পৌঁছে দিবো।
কনে : প্লিজ এমন সর্বনাশ করবেন না আমার। আপনার দু’টি পায়ে ধরি। আমাকে ডিভোর্স দিয়েন না। আপনার কাছে আমি কোনোদিন কিছু চাইবো না। আমাকে শুধু আপনার স্ত্রীর মর্যাদাটুকু দিয়েন। তাই নিয়েই আমি থাকবো।
বর : আমাকে আপনি মাফ করবেন। আপনার এই কথাটা আমি রাখতে পারবো না। কথা না বলে ঘুমান এখন। আমি নিচে মেঝের উপর শুয়ে পড়ছি। আপনি খাটেই ঘুমান। ভয় পাবেন না আমি আপনার কাছে আসবো না।
কনে : আমাকে আপনি এতো বড় শাস্তি দিয়েন না। আমিতো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।
বর : হুম সেজন্যই তো আপনাকে সম্মানের সাথে আপনার পরিবারের কাছে আপনাকে ফেরত দিবো।
কনে : এটা না করে আপনি আমাকে মেরে ফেলেন। তাতেও খুশি হবো আমি। তবুও আমাকে আপনি ডিভোর্স দিয়েন না।
বর : এটা না করে আমার আর কোনো উপায় নাই। আমি বহু দূরে চলে যাবো এ শহর ছেড়ে।
কনে : আপনাকে আমি কোথাও যেতে দিবো না।
বর : না আমাকে যেতেই হবে। দূরের পৃথিবী প্রতিনিয়ত ডাকছে আমাকে। সে ডাকে আমাকে সাড়া দিতেই হবে।
কনে : এমন করছেন কেন?
বর : আমি করছি না, আমার ভাগ্য করছে। আমার কপালে সুখ নেই।
কনে : আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসা দিবো। আমার ভালোবাসা দিয়ে সবসময় আপনাকে আগলে রাখবো।
বর : ভালোবাসার লোভ দেখিয়েন না। পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই। আমি এটা বিশ্বাস করি না। ভালোবাসা থাকলে আমার জীবনটা এমন হতো না। জীবনে কিছু চাওয়ার ছিলো না হারানো মানুষটিকে কাছে পাওয়া ছাড়া।
কনে : আপনার সে হারানো মানুষটির নাম কি?
বর : ধোঁকা।
কনে : কি বলছেন ধোঁকা কোনো মানুষের নাম হয় নাকি?
বর : হুম হয়। আমি তার নাম দিয়েছি ধোঁকা।
কনে : আমার কাছে আপনি এখন কি চান?
বর : মুক্তি, আপনার কাছে আমি মুক্তি চাই। যে মুক্তি কখনো আমাকে পিছু টানবে না।
কনে : তাতেই আপনি খুশি?
বর : সেটা জানিনা। তবে আপাতত আমার মুক্তিই চাই।
কনে : ঠিক আছে আপনাকে আমি মুক্তি দিয়েদিলাম।
বর : আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাকে বিয়ে করে আমি বড় অন্যায় করেছিলাম। এতো বড় অন্যায় করা আমার আদৌ ঠিক হয়নি।
কনে : কথা আর বাড়িয়েন না। যেটা ভাগ্যে ছিলো সেটা তো হবেই।
বর : আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
কনে : আচ্ছা ঘুমান।
বর : আপনিও ঘুমাও।
কনে : বাতিটা নিভিয়ে দেন।
বর : হুম দিচ্ছি।
কনে : আর কোনো মেয়ের জীবনে যেন এমন দুঃস্বপ্নের বাসর না হয়। কোনো মেয়ের জীবন যেন বিয়ের প্রথম রাতেই শেষ না হয়ে যায়।
বর : আপনি কান্না করবেন না প্লিজ। আপনার চোখে কান্না দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয়। এটা সত্যি আপনার কোনো তুলনা হয় না। সবদিক দিয়েই আপনি পারফেক্ট। আপনি খুবই সুন্দরী।
কনে : থাক আমার কোনো প্রশংসা করতে হবে না। আমি একটা হত ভাগা মেয়ে।
বর : এমন করে বলবেন না প্লিজ।
কনে : আপনি না বললেন ঘুম ধরেছে। তাহলে ঘুমানো বাদ দিয়ে কথা বলছেন কেন?
বর : ঘুম চলে গেছে।
কনে : রাত শেষ। আজান দিচ্ছে নামাজ পড়তে যান।
বর : নামাজ পড়বো না আজ। ভালো লাগছে না।
কনে : আপনার আবার কি হলো?
বর : টেনশন কইরেন না। সে রকম কিছু হয়নি।
কনে : মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো?
বর : না, আপনার কষ্ট হবে।
কনে : আপনার সেবাযত্ন করতেই আপনার জীবনে এসেছিলাম। না করবেন না প্লিজ।
বর : আপনি খুব ভালো মেয়ে।
কনে : থাক মিথ্যে বলতে হবে না। যদি ভালোই হতাম আমার সাথ আপনি এমন অন্যায় করতে পারতেন না।
বর : এমন করে বলবেন না প্লিজ। মিথ্যে স্বপ্ন আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। কিছু নেই আমার দেহে। মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
কনে : আপনি চাইলে আপনার ভাঙা মন আমি জোড়া লাগিয়ে দিতাম আমার ভালোবাসা এবং আদর সোহাগ দিয়ে।
বর : সে রকম কিছু লাগবে না।
কনে : আপনি এখন ঘুমান।
বর : ঠিক আছে।
কনে : আপনার কপালে একটা চুমু দেই?
বর : না না তা করবেন না।
কনে : খুব মন চাইছিলো।
বর : পরে যাকে বিয়ে করবেন তাকে দিয়েন।
খুব শীঘ্রই বিয়ে করে নিয়েন ভালো ছেলে দেখে। দেখবেন আপনার স্বামী আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে।
কনে : জীবনে একবার বিয়ে করে ভুল করেছি, আর নয়। তাতে যা হয় হবে। বিয়ের মাঝেও কোনো সুখ নেই। এখানেও কষ্ট। কষ্ট যা পাবার একবারই পেয়েছি। নতুন করে আর কষ্ট পেতে চাই না। আপনিই আমার একমাত্র স্বামী হয়ে বেঁচে থাকবেন আমার স্বপ্নের মাঝে। আপনি অনেক ভালো থাকবেন যেখানে থাকেন।
বর : যদি কখনো ফিরে আসি গ্রহণ করে নিবেন আমাকে?
কনে : সেটা সময় বলে দিবে। আপনাকে আর ফিরে আসতে হবে না। যেখানে সুখ দেখেছেন সেখানেই থাকবেন সারা জীবন।
বর : এমন করে না বলবেন না প্লিজ।
কনে : ভোর হয়েছে। আমি চলে গেলাম। ভালো থাকবেন আপনি।
বর : সে কি একাই যাবেন ! আমি এগিয়ে দিয়ে আসি।
কনে : তার কোনো প্রয়োজন নেই।
বর : ঠিক আছ যান, আপনিও অনেক ভালো থাকবেন। বাই…
কনে : বাই…
এভাবেই শেষ হলো দু’টি মানুষের জীবন। জীবনে কখন কি ঘটে তা কেউ বলতে পারে না। এটাই জীবন। কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি। জীবন কখনো থেমে থাকে না। জীবনের কোনো ব্যাপ্তি বা সীমা পরিসীমা নেই। এখানেই জীবনের অর্থ নিহিত। জীবন, আহা জীবন !