1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

দিদি — মাহমুদ হাফিজ 

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৬২ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

দিদি

মাহমুদ হাফিজ 

 

বর্ষার এক বিকেল।সারাদিন বৃষ্টি শেষে আলের ফুলকি ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমাকাশে।কেউ যেন আকাশটাকে শোণিতের ধারায় চুবিয়ে এনেছে, দূর থেকে তাকালে এমনই মনে হচ্ছে অনেকটা।অরুণিমারা যেন পর্বতমালায় নামবে প্রায়— পাহাড়ি শিশু,কিশোরদের চোখে আজকের পরিবেশটা এরকমই। ওরা খুব খুশি এজন্য। কারণ,  গত একসপ্তাহে এরকম একটা প্রকৃতির লাবণ্য খুঁজে পায়নি। একজনও না।

 

পাহাড়ের চঞ্চল শিশুদের হৈ হুল্লোড়ে বিকেল নামবে নামবে।সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরছে সবাই। রাতের প্রস্তুতির জন্য মোমবাতি কিনতে যাওয়া পাড়ার বুড়োরাও রওয়ানা করছে বাড়ির দিকে, ব্যস্ত ভঙ্গিতে। ব্যাট – বল হাতে মাঠ থেকে ফিরছে শিশুরা। হঠাৎ মাগরিবের আযান শুরু করলো মুয়াজ্জিন। আঁধার নামতে লাগলো ঘনঘনিয়ে, আযানের সুরে তাল মিলিয়ে। অন্ধকার ছেঁয়ে যেতে লাগলো মুহূর্তেই। মরে যাওয়া পুকুরের অল্প পানির চিকচিক আলো ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

 

চাঁদের আলোয় সাজলো পৃথিবী একটু পর।এ আলোয় ঝাপসা ভরে দেখা গেলো পুকুর পাড়ের কাশবন।  সেখানে কেউ বসে থাকার  ছায়া পড়ছে।হুম, সত্যিই কেউ বসা ওখানে।ওই তো পড়শি ছেলেটা।বাবা- মা নেই ওর।বড় বোনটাও হারিয়েছে দুদিন হলো। সব হারানোর ব্যথা নিয়ে এখানে বসে আছে।মত্ত আছে, আকাশ ও প্রকৃতির সনে নিজেকে মায়ায় জড়াতে।পৃথিবীর মায়া যখন মানুষ হারিয়ে ফেলে, তখন আকাশ – বাতাশের মায়া খুব কামনা করে মানুষ। হয়তো ছেলেটাও অভিন্ন মায়া কামনা করছে।নিজের হৃদয়কে সঁপে দিচ্ছে আকাশের দর্পণে!

 

পেছন থেকে ছেলেটাকে কেউ একজন ডাকলো— খোকা! চল, ঘরে যাবি।

একটু নড়ে বসলো ও। তারপর বসে রইলো আগের মতন।আবার ডাকলো পেছন থেকে—

খোকা! চল,  বাড়ি যাবি।রাত হলো যে! খোকা! চিনতে পারিসনি, আমি তোর দিদি। তোকে সেই কখন থেকে খুঁজছি।এখানে কেন তুই!

দিদির কথা শুনে চট করে দাঁড়িয়ে গেল ও।আঁধারের চাদরে হাত নাড়িয়ে খুঁজতে লাগলো দিদিকে। পাচ্ছে না।কাঁদো কাঁদো সুরে বলল—

দিদি! কোথায় তুমি! তোমার সুরের কবিতাটা শুনি না দুদিন হলো। কবিতাটা শোনাও না একটু!

 

মৃদু সুরে ভেসে আসতে লাগলো—

“লেবুর গন্ধ শুঁকি মোরা পুকুর পাড়ে বসে

কোমল ডানায় উড়ে যেন কে, মোদের কাছে আসে।

লেবুর ডগায় কী যে মায়ার অশ্রুমালা ঝড়ে

কে জানে কে ডাকে তখন, যাওনা একটু নীড়ে।

ঘুম কেড়েছে কষ্টগুলো, দিয়েছে হাজার ব্যথা

ফিরেই বলো করবো কী আর, ভাল্লাগে না সেথা।”

 

হাউমাউ করে কেঁদে ওঠলো ছেলেটা। মন খারাপ হলে মায়ের কোল কামনা করে অন্য দশজন শিশু যেভাবে কাঁদে, ঠিক সেভাবে। কবিতার সুর ভেসে আসার দিকটায় ফিরে বলল—

 

দিদি,  কোথায় তুমি!  আমাকে নিয়ে চলো। এখানে আমার একা থাকতে কষ্ট হয়। কেউ নেই আমার।দিদি, সামনে এসো!

খোকা! আমি তো আকাশে। তোর থেকে অনেক দূরে। ইচ্ছে হলেই এখানে আসতে পারে না কেউ।

 

জোসনা ভরা আকাশের দিকে তাকালো ও।একটু নীরবে কেঁদে বলল— দিদি! তুমি আকাশে নও।মিথ্যে বলছো।কেবলই তো পাশে ছিলে।সবার মতন তুমিও কী মিথ্যা বলছো আমার সাথে!

একটু আগে যে তোর পাশে ছিলো, তোকে কবিতা শোনালো, সে তোর দিদি নয়।অন্য কেউ।

একই কণ্ঠে অদৃশ্য থেকে কতাটা কেউ বলল।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park