1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

তিন বন্ধু  — ইয়াছিন আরাফাত 

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ৭৪ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

তিন বন্ধু 

ইয়াছিন আরাফাত 

 

ফরহাদ, হৃদয় ও হিমেল তিন বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিয়মিত ঘুরাঘুরি, আড্ডা হলেও চাকরি জীবনে  তিনজনই ব‍্যস্ত হয়ে গেলেন। এরপর থেকে গত চল্লিশ বছর ধরে কারো সাথে কোন খোঁজ খবর নেই। একজন আরেক জনকে এভাবে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু কিসমত বলে তো একটা কথা আছে তাই না? সিলেট ভ্রমণ করতে গিয়ে ফরহাদ হোসেনের সাথে হৃদয় আলমগীরের দেখা হয়। সময়টা ছিল আছরের কিছু সময় পর মাগরিবের আগে তখন তারা জাফলং জিরো পয়েন্টে পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানি ধারার ওপরে নৌকায় ভ্রমণ করছিলেন আর ভারতের মেঘালয় রাজ‍্যের ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, উঁচু উঁচু পাহাড়ে সাদা মেঘের সাথে হালকা কালো মেঘের খেলা দেখছিলেন। ফরহাদ চতুর লোক ছিলেন, সাধারণত মানুষ চিনতে তার ভুল হওয়ার কথা না। নৌকা থেকে নেমে হৃদয়ের জন‍্য অপেক্ষা করেন।

 

হৃদয় কাছে আসতেই ফরহাদ বলে ওঠল আমি ভুল না করলে আপনি হৃদয় তাই না? হৃদয় বলল, হ‍্যাঁ। যদি আমিও ভুল না করি আপনি ফরহাদ? ফরহাদ বলল, হ‍্যাঁ’রে বন্ধু তোর কি অবস্থা বলে একজন অপরজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। অনেক বছর পর কিন্তু তুই সেই আগের মতো সুদর্শন’ই রয়ে গেছিস। হৃদয় বলল, তুইও কম কি? হৃদয় বলল, কোথায় ওঠেছিস? কোথাও না। চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই এসেছিলাম। হৃদয় বলল সমস্যা নেই চল আমাদের সাথেই থাকবি। ফরহাদ তার স্ত্রী ফারিহা এবং তার সাথে তার ছোট মেয়ে ফাহিমা এবং রিয়াদ কে নিয়ে হৃদয়ের বাসায় চলে যান। তাদেরকে রেখে অনেক দিন পর দুই বন্ধু ঘুরতে বের হলেন। আজকে রাতের আকাশ টা কেমন যেন নিরব, নির্মল শান্ত, হালকা বাতাস, চাঁদের হালকা আলো, দুইজন দুইজনের হাত  ধরে হাঁটতে মন্দ লাগছে না, লাগছে ভীষণ ভালো। হৃদয় বলল, সিলেট কখন আসলি?

 

এই তো গতকাল রাত এগারোটার দিকে কুমিল্লা থেকে গাড়িতে ওঠেছিলাম ফজরের নামাজ শাহজালাল দরগাতে আদায় করেছি, প্রায় সব দর্শনীয় স্থান শেষ করে মেঘালয়ের ঝর্ণা আর পাহাড় দেখতে দেখতে কখন যে জাফলং পৌঁছে গেছি বুঝতে পারি নাই। তবে মাঝখানে  শ্রীপুর চা বাগানে নেমে একটু ঘুরাঘুরি করেছি, কাছ থেকে মেঘালয়ের পাহাড় আর ঝর্ণা দেখতে প্রচন্ড রকমের ভালো লাগছিল, ইচ্ছে করছিল আল্লাহ্ যদি আমার শরীর টা পাহাড়ের ন‍্যায় বড় করে দিতেন তাহলে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতাম। কখনো এখানে আসি নাই তবুও এই পাহাড়,এই ঝর্ণা, এই চা বাগান, এই পানির স্রোত ধারা  কেমন যেন হাজার কোটি বছরের পরিচিত মনে হলো,এই আমার সবচেয়ে কাছের আপন মনে হলো কিন্তু আপন হয়েও যে নিজের করে পাওয়া হলো না। না হয়ে বোধহয় ভালোই হয়েছে। হৃদয় বলল কেন?

 

মাগরিবের পর যখন আসছিলাম, তখন দেখলি না ঐ পাহাড়ের ভিতরে আলো জ্বলছে। হৃদয় বলল হ‍্যাঁ দেখলাম তাতে কি? বুঝলি না। এর মানে এই জায়গা গুলো কেউ না কেউ দখল করে ভোগ করছে, এটা যতই আমার নিজের মনে করি না কেন তা আমার নয় অন‍্যের দখলে চলে গেছে। তা আর নিজের বলে দাবী করে লাভ কী? প্রিয় মানুষটি যেমন অন‍্য কারো হতে দেখলে খারাপ লাগে, সে রকমই আমার খারাপ লেগেছে,বুকের বাম পাশের একটু নিচে কেমন জানি লেগেছিল সেই ব‍্যথা প্রিয়জন হারানোর মানুষ ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। এই প্রিয় জিনিস গুলোর প্রতি ভালোবাসা টা সারাজীবন থেকে যায় কিন্তু আপন করে পাওয়ার যে ইচ্ছে টা সেটা মরে যায়। আমারও তাই মনে হয়েছে বন্ধু। রাতারগুল, জাফলং এবং এই সিলেটের প্রত‍্যেকটি চা বাগান আমাকে আকর্ষণ করেছে কিন্তু এই মেঘালয়ের পাহাড়,ঝর্ণা আমার মন, প্রাণ সব কেড়ে নিয়েছে।

 

যেমনটি কেড়ে নিয়েছিল তোর ভাবি ফারিহা। সেই জন‍্যই হয়তো কেউ একজন বলেছিল, বাংলাদেশে দুই ধরনের হতভাগা আছে, এক যারা সিলেটে জন্মগ্রহণ করেনি, দ্বিতীয়ত যারা সিলেট ভ্রমণ করেনি। আমারও তাই মনে হয়। তোর কথা না শুনলে ফারিহা তো আমাকে ছেড়ে প্রায় চলে গিয়েছিল, ফরহাদ একমনে বলতে থাকে, আমার এখনো মনে আছে তুই বলছিলি, আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষেরা বেশি শিক্ষিত ছিল না কিন্তু তিন চারটা বউ একসাথে অনায়াসে কারো কোনো অভিযোগ ছাড়া রাখতে পারতেন। স্বামীর প্রতি কেউ কোনো অভিযোগ দিত না, অকল‍্যাণ হবে বলে।

 

আর তুই শিক্ষিত হয়ে একটা বউ সাথে রাখতে পারছিস না, তাহলে আর শিক্ষিত হয়ে লাভ কি? সেই একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করত আর আমিও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতাম। দুইজনে ভালোবেসে বিয়ে করলেও চাকরি করার পর থেকে সে আমার সাথে ভালো আচরণ করত না। সারাদিন যার মতো সেই চাকরিতে চলে যেতাম, রাতে সেই মোবাইলে তার কলিগ তামজিদের সাথে কথা বলত। কিছু এনে দিতে বললে, খেতে দিতে বললে বলত,নিজে কর, নিজে করে খাও। তোমার টাকায় আমি চলি না, আমার কাজ আমি নিজে করতে পারলে তুমি কেন পারবে না এমনটাই বলত। বিয়ের আগে সে এমন কখনো ছিল না। সেই নিজ থেকে এসেই আমাকে বিয়ের কথা বলেছিল। আমিও তাকে ভালোবাসতাম তাই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের মাঝে কত ভালোবাসা ছিল একজন অপর জনকে কত যত্ন নিতাম, ভালোবাসতাম, একজন আরেকজনকে ছাড়া কখনো কোনো কিছু খেতাম না। সেই ভালোবাসা,যত্ন নেওয়া সব হারিয়ে দুইজনের মাঝে রোবটিক জীবন শুরু হয়েছিল ।

 

আমি এইসব সহ‍্য করতে না পেরে তোকে সমস্ত ঘটনা বলেছিলাম। আমার এখনো মনে আছে,তুই সেই দিন আমাদের আগের প্রজন্মের কথা বলতে গিয়ে তোর নানা-নানির কথা বলছিলি। তোর নানার বারোটা মেয়ে তিনটে ছেলে ছিল। মেয়েদের কে উপযুক্ত বয়সে ভালো ভালো জায়গাই বিয়ে দিয়েছেন এবং ছেলেদের জন‍্য বউ এনেছিলেন। তারা সবাই একসাথে থাকতেন এবং তোর নানা-নানির মাঝে খুবই মায়া মহব্বত ছিল জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত একজন অপর জনের পরিপূরক ছিলেন। এমনকি তোর নানি সাতাশি বছর  বয়সে মৃত্যুর পরও তোর নানা তার কবরে গিয়ে কান্নাকাটি করে দোয়া করত। এত ছেলে মেয়ের এবং স্বামীর সেবা যত্ন করতে গিয়ে স্বামী সন্তান ছাড়া কাউকে নিয়ে ভাবার সময়ই ছিল না,পরকীয়া করা তো দূরের কথা। আজ আমিও সাত ছেলে চার মেয়ের বাবা। একটা ছেলে একটা মেয়ে ছাড়া সবার বিয়ে হয়েছে। চারটা ছেলে দুইটা মেয়ে হওয়ার পর সেই নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। কারণ দুইজনে যা বেতন পাই তার অর্ধেক গাড়ির ড্রাইভার এবং কাজের লোকদের দিতে চলে যায় এবং সব কাজ মনের মতো হতো না। ছেলে মেয়েরা কাজের মেয়ের মতো আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে, তাতে সমস্যা নেই কিন্তু মাঝে মধ্যে কথায় কথায় গালি গালাজ করে, এই সবকিছু যাদেরকে মানুষের মতো মানুষ করার জন‍্য তারাই যদি অমানুষ হয় তাহলে ছোট এই জীবনে এই শিক্ষা, এই পরিশ্রমের কোনো মানে হয় না।

 

এই সব দেখে সন্তানদের  দায়িত্ব নেওয়ার জন‍্য সেই নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমাকে বলছিল। তার চাকরির ইচ্ছে থাকলে ওকে চাকরি রেখে আমি চাকরি ছেড়ে দিতে রাজি ছিলাম কিন্তু পরে সে বলল আমি আর পারছি না। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করি কিন্তু মাস শেষে ফলাফল শূন‍্য। বাচ্চা হওয়ার পর আমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সে যে না বুঝে পরকীয়া করেছিল সে জন‍্য এখনো কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাই। এরপর  বাচ্চাদের সামলাতে গিয়ে পরকীয়া করার সময় পাইনি। হৃদয় এতক্ষণ ধরে চুপ হয়ে শুনছিল, হঠাৎ হেসে বলে ওঠল, ইচ্ছে থাকলেও কি? এতো গুলো বাচ্চা থাকলে কোনো পর পুরুষ প্রেম করতে চাইবে বেটা। ফরহাদ বলল, তা ঠিক। পরক্ষণেই বলে ওঠল, হিমেলের সাথে কথা হয়েছে? হৃদয় বলল, হ‍্যাঁ। তার স্ত্রী দুই বাচ্চা রেখে বিয়ের পঁচিশ বছর পর ডিভোর্স দিয়ে ছেড়ে চলে গেছে। এরপর মেয়েদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে বেচারা আর বিয়ে পযর্ন্ত করেনি। সে আজ আমার কথা শুনলে এমনটা হতো না। এজন্যই হয়তো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বেশি বেশি সন্তান নিতে বলেছেন এবং বেশি সন্তান জন্ম দিতে পারে এমন নারী বিয়ে করতে বলেছেন। যদিও এর আরেকটি কারণ আছে তা হচ্ছে রাসূল ( সা:) এর উম্মাত বৃদ্ধি করা। গল্প করতে করতে ফজর হয়ে গেছে কাছের মসজিদে আযানের আওয়াজ আজ একটু বেশিই সুমধুর লাগছে।  হৃদয় বলল, চল এবার মসজিদে যাওয়া যাক।

                             সমাপ্ত 

 

শিক্ষার্থী,

ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ  

কবি ও গল্পকার।

অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park