তাওয়াককুল আলাললাহ
আঁধারের বুক চিরে আলো উঁকি দিচ্ছে আরবের মরুপ্রান্তরে। প্রভাতের মৃদু বাতাসে বাবলাগাছের পাতাগুলো নৃত্য করছে ।সাহসা হুদহুদ পাখির ঝাঁক এসে বাবলাগাছের ডালে বসে কিচিরমিচির করছে। নিত্যদিন প্রভাতে হুরাইরা ও হুমায়রা কোরআন তিলাওয়াত করে বাড়ির উঠানে ঘুরে বেড়ায়। প্রভাতের নির্মল বাতাস তাদের ভীষণ ভালোলাগে। ওরা দু’জন সহোদর ভাই-বোন। হুমায়রা বললো, চলো ভাইয়া বাবলাগাছের নিচে যাই! সেখানে হুদহুদের ঝাঁক বসে আছে। হুরাইরা বললো, তাহলে চলো!
ওরা হাঁটি হাঁটি পা-পা করে গাছের সমীপে যেতেই পাখিগুলো উড়ে গেল। এই উড়ে যাওয়া যেন হুমায়রাকে ভীষণ আনন্দে আন্দলিত করে তোলে। গাছের ছায়ায় ভেড়ার পাল বসে আছে। হুমায়রা গাছের নিচে বসতে বসতে বললো, ভাইয়া! “একটি গল্প শোনাও”
হুরাইরা বললো, তোমাকে তাহলে “রবের উপর তাওয়াককালের” চমকপ্রদ গল্প শোনাই। গাছের ডালকে ভেদ করে আসা সূর্যের প্রদীপে হুমায়রার কেশগুচছ ঝিলিক মারছে। এদিকে হুরায়রা বলতে লাগলো, আদি যুগে একজাতি ছিল।নাম তার “বনি ইসরাইল”, তারা মিশরের আসওয়ান জায়গায় বসবাস করত। একদিন আসওয়ান বাজারের একপ্রান্তে বাবলাগাছের নিচে “এক ব্যবসায়ী “আনমনে বসে আছে গাছের সাথে হেলান দিয়ে। সাহসা এক আগন্তুক এসে তাঁর সাথে সালাম- বিনিময় করে বসতে বসতে বললো, হে আমার ভাই!
আমি তোমার সমীপে ‘কিছু টাকা ঋণ’ চাইছি, তুমি কী আমাকে দিবে?
ব্যবসায়ী একটু নড়েচরে বসে বললেন, আমি তোমাকে দিবো, তবে তুমি দু’জন সাক্ষী হাজির করো ! আগন্তুক ভাবনার ভবঘোরে হারিয়ে গেলেন। একটু পর বললেন, আমাদের “রব আল্লাহই “যথেষ্ঠ।ব্যবসায়ী ইতস্ততবোধ করে বললেন, ঠিক আছে। পরস্পর কথোপকথন শেষ করে কাজে মনোনিবেশ করল। হুমায়রা বললো, আমার তৃষ্ণা পেয়েছে। পানি পান করে আসি?
হুরাইরা বললো, যাও, দ্রুত ফিরে এসো !
হুমায়রা আসতেই “মজার গল্প“ শুরু হলো। হুরাইরা বললো: এরপর অনেক দিন গত হলো।আকষ্মিক আগন্তুকের মনে হলো ”অদ্য ঋণ “ফিরতি দিতে হবে ।প্রভাতের কাঁচা রোদে “মরুভূমিউরোজাহাজ” নিয়ে আগন্তুক চলতে লাগলেন আসওয়ান বাজারের অভিমুখে।
পথের ধারে একটি ‘সাগর’ অতিক্রম করতে হয়। তাই, আগন্তুক সাগরের তীঁরে হন্তদন্ত হয়ে নৌযান খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে পড়েন। আগন্তুক বিষন্ন, নিরাশা, হতাশা, মন নিয়ে রবের সঁমীপে হাত তুলে বললেন:” হে আমার প্রতিপালক! সেদিন আপনাকে সাক্ষী রেখে ঋণ নিয়েছি”আজ ফিরতি দিবো। আমি কঠিন বিপদে আক্রান্ত, আপনি সাহায্য করুন।
“বলতে বলতে দু’নয়ন ঝরে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগলো” সাহসা তার মনে হ’ল, পড়ে থাকা কাঠের টুকরোর সাথে বেঁধে ভাঁসিয়ে দিবো। আর রব আমার সাথেই আছেন। আগন্তুক তাই করল। এদিকে ব্যবসায়ী বসে অবলোকন করছে ‘প্রবাহমান পানির ‘দিকে। সাহসা কাঠ দেখতে পেয়ে বোধ হলো, বাড়িতে লাকরির কাজে লাগতে পারে। ব্যবসায়ী তা নিয়ে বাড়ির অভিমুখ হলো…
হাত দিয়ে আলতো করে খুলতে খুলতে দেখেন ভেতরে “কিছুটাকা ও একটি চিঠি” রাখা আছে। তিনি তা নিজের সঁমীপে সুপ্ত রাখলেন। দু’জনের আসওয়ান বাজারে সখ্য হতেই আগন্তুক বলতে লাগলেন, “আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলাম যে, অমুক তারিখে ফিরিয়ে দিবো “কিন্ত, দিতে পারিনি।
এই নিন…
ব্যবসায়ী মৃদু হেসে সম্ভবাষণ জানিয়ে বললো: আমি এরুপ…….পেয়েছি। আগন্তুক হতভম্ব -হতবুদ্ধি হয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেল তার কথা শ্রবন করে।তারপর ইতি…
হুমায়রা বলছে :ভাইয়া, আরেকটি বলো না! অসম্ভব রকমের ভালো লাগছে। হুরাইরা বললো: আল্লাহ চাহেতো অন্যদিন শোনাবো।
লেখক: ইয়াকুব বিন আব্দুর রহিম।
দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসা।
আশকোনা, আমতলা।