বিলকিস নাহার মিতু
দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পরে মুসলিমদের জন্য আনন্দের দিন হলো ঈদুল ফিতর অর্থাৎ ঈদের দিন। ছোটবেলায় দেখতাম যখনই মাইকে জানান দিতো চাঁদ দেখা গিয়েছে তখনই সবাই সবাইকে ফোন করে বলতো ‘ঈদ মোবারক’। বিটিভিতে বাজাতো “রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”। মেহেদী লাগানো শুরু হয়ে যেতো মেয়েদের আর ছেলেরা দিয়াশলাই কিনে রাখতো বোম ফাটানোর জন্য এবং মাঝরাত পর্যন্ত বোম ফাটানোর ধুম পরে যেতো। সকাল হতে না হতেই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে সেমাই দেয়া-নেয়া হতো সঙ্গে আরও কিছু খাবার। এরপর বাড়ির পুরুষেরা ঈদগাহে যেতো আর নারীরা সাজের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো। তারপর সবাই সবার বাড়িতে বিশেষ করে ছোট ছেলে মেয়েরা বাড়ি বাড়ি আসতো সেজেগুজে এবং প্রতি বাড়ি থেকে সালামিও পেতো এমনকি স্কুল কলেজের বন্ধুরাও আসতো ঈদের দিনে।
আত্মীয় স্বজনরা আসতো আর নানান ধরণের খাবার দাবারের অনেক আয়োজন করা হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। আগের মতো সবার একসাথে আনন্দের মুহূর্ত এখন আর কোথাও চোখে পড়ে না। সেই সুখ সেই সম্পর্কের বন্ধন ডিজিটাল যুগে খুঁজে পাওয়াই দুস্কর। আগে ঈদের ছুটিতে সবাই বাড়ি আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো কিন্তু এখন আর ঈদের ছুটিতে কেউ বাড়ি আসেনা বললেই চলে। নানান ব্যস্ততায় মানুষ এখন আর পরিবার বা আত্মীয়দের সাথে বিশেষ মুহূর্ত কাটাতে পারেনা।
যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবার যেমন হয়েছে তেমনি পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ও একাত্মতাও কমে গিয়েছে পূর্বের তুলনায়। শুধু পরিবার নয় পাড়া-প্রতিবেশীদের একের প্রতি অন্যের যে টান সেটাও কমে গিয়েছে। যে যার মতো ঈদ পালন করে। এখনকার ঈদ শুধু স্বপ্ল পরিসরেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান সময়ে ঈদের দিন মানুষ বিভিন্ন পার্ক, রেস্টুরেন্ট বা রিসোর্টে যায় নিজেদের আনন্দের জন্য যা একপ্রকার স্বার্থপরতার লক্ষ্মণ। আর পূর্বে সবার সাথে আনন্দে থাকা যায় কিভাবে মানুষ সেটা বেশি ভাবতো। বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে নাতী-নাতনী আসতো কতো মজা হতো আর এখন একটু ভিডিও কলের মধ্যেই সবকিছু হচ্ছে। ডিজিটাল যুগে ঈদের আনন্দ এক কথায় যেন স্মার্ট ফোনের মধ্যেই রয়েছে।
আগে ঈদে কে কি জামা পড়বে জানতোনা পরিবারের বড়রা কিনে আনতো কেউ কেউ হয়তো আগের দিন দেখতো ঈদের জামা আর এখন অনেকেতো মার্কেটেও সরাসরি যায়না। ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করে কাপড়। ছোটবেলা দেখতাম দর্জিদের কাছে ভিড় জমে যেতো কখন জামা তৈরি হবে আর এখন সবকিছুই অনলাইনে রেডিমেট পাওয়া যায়। আগে টাকা কম আয় হলেও মানুষ আনন্দ পেতো অফুরন্ত কিন্তু এখন মানুষের প্রচুর টাকা আয় হলেও সেই আনন্দ আর নেই। গ্রামে ধনী-গরিব সবাই সবার বাড়িতে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতো এখন এই ভেদাভেদটা চরমভাবে বেড়ে গেছে। বাড়ি বাড়ি আর ঈদের আনন্দ হয়না ঈদ এখন রিসোর্ট জুড়ে। অত্যন্ত হতাশ হয়ে মাঝে মাঝে ভাবি ছোটবেলার সেই ঈদ আনন্দ যদি আবার ফিরে আসতো, তবে হয়তো প্রতিটি ঘর আবার খুশির বন্যায় উচ্ছ্বসিত হতে পারতো!