1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ডায়েরি অব সিলেট লিখা থাকুক গল্প হয়ে! (১)

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ১৩২ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

ভ্রমন জীবনটা যেমন আনন্দদায়ক তেমনি কৌতূহল বটেও । সময় পেলে যেমন ভ্রমণে বের হতে মন চায় আমাদের ঠিক তেমনি ফিরে এসে মিস করা হয় সেই ভ্রমণের স্মৃতিখানিও। ঠিক তেমনি আমরাও একদিন হঠাতে প্ল্যান করে বসেছিলাম সিলেট ঘুরে দেখার উদ্দেশ্যে আর যেইখানে আমাদের প্রথম গন্তব্য সিলেটের সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্য জাফলং। প্ল্যানের শুরতে অনেকে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত সন্ধি কেবল আমরাই পাঁচজন।

২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার । পরের দিনটা বড়দিন হওয়াতে অফিস ছুটি ছিলো বেশ আর আমরাই বের হয়ে গেলাম জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে। তবে সন্ধ্যায় সাতটায় সব কাজ শেষ করে আমরা যখন চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সেপ্রস ধরতে স্টেশনে যাই তখন শুনি আরেক খারাপ খবর । নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে যাওয়ার পর ও প্রায় পাঁচঘন্টা সময় দেরি হয় ট্রেনে উঠতে আর ওইখান থেকে শুরু আমাদের ভোগান্তি । ৯:৪৫ মিনিটের চট্টগ্ৰাম স্টেশন থেকে রেল উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই ট্রেনে উঠতে হয় রাত দুইটায় আর আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় সকাল এগারোটায়….! তবে এই দেরি কিন্তু মনকে একটু সতেজ করার জন্য ভীষণ যথেষ্ট ছিলো, কারণ ভোর রাতের হালকা শীতের কাপুনি আওর ট্রেনের ঝকঝক আওয়াজের সাথে সকাল বেলায় চায়ের কণ্যা শ্রীমঙ্গলের অপরুপ দৃশ্য নিশ্চিত আপনার মনটা ভালো করে দিবে।

এইদিকে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে আমাদের একটু কষ্ট হলেও ট্রেন থেকে নামার পর দারুণ অনুভূতি জেগেছে সবার মনে। আর সেখান থেকে শুরু আমাদের সিলেট যাত্রা , চট্টগ্রামের মতো গাড়ীর কোলাহল আর বিরক্তিক কোন ঘটনা নেই এই শহরে। কেমন প্রান্তবন্ত আর চারপাশ মনের আনন্দ খোরাকের জন্য যথেষ্ট হয়ে গিয়েছিলো । ট্রেন থেকে নেমে আমরা উঠেছিলাম একটা সিএনজিতে আর সেই সিনজি যোগে পুরো সিলেটের যাত্রা থাকছে এক সাথে।……

No description available.

জাফলং: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত একটি পর্যটনস্থল হলো জাফলং। এটি সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত। পর্যটনের সাথে জাফলং পাথররের জন্যও বিখ্যাত। শ্রমজীবী মানুষেরা পাথরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে সেই বহু বছর যাবত৷ বইয়ের ভাষায় জাফলং নিয়ে অনেক কিছু শুনে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেও নিজের চোখে সত্যিইকারের জাফলং দেখার কৌতুহলটা ছিলো আলাদা। তাইতো সিলেটে গিয়ে আমাদের সর্বপ্রথম পছন্দের তালিকায় ছিলো এই দর্শনীয় স্থানটি। তাইতো সিলেটের কদমতলি থেকে নেমে আমরা একটা গাড়ি নিয়ে উদ্দেশ্য দিলাম জাফলংয়ের সৌন্দর্য দেখার জন্য । আশেপাশের মাঠ সবুজ চারপাশ আর কুয়াশাভেজা ভোরের শেষে মধ্যহ্নে দীর্ঘ এক লম্বা সময় গাড়িতে কাটিয়ে আমরা পৌঁছেছি জাফলংয়ে ! জাফলংয়ে পৌঁছে আমরা চলে গেলাম থাকার ব্যবস্থা করার জন্য । কারণ গতকাল রাতে উঠেছিলাম গাড়িতে তারপর থেকে বিরতিহীন এই লম্বা ভ্রমণে ক্লান্তি আর অবসাদ তো ছিলো বটে, তাইতো ছোট একটা বডিংয়ে উঠে আমরা সেই ক্লান্তির অবসাদ শেষ করি। বডিংয়ের পাশেই ছিলো একটা রেস্টুরেন্ট আর সেইখানে দুপুরের খাওয়া শেষ করে নতুন গন্তব্যের খোঁজে ছিলাম সকলে….লালাখাল কিংবা শাপলা বিল আমাদের উদ্দেশ্য থাকলেও একে তো শীতের বিকেল তার উপর হালকা কুয়াশা আবার এতো লম্বা পথ পিছনে যাওয়া সম্ভব ছিলো না তাই সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম রাতটুকু এইখানে থেকে জাফলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করার……

জাফলংয়ে আসলে আপনার একটা জিনিস খুবই নজরে আসবে তা হলো ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের ছোটছোট বসতিগুলোর সাথে এইপাশে পর্যটকদের বিকেলের উচ্ছেপড়া ভীড়..আমাদেরও তার বিকল্প ঘটেনি, জিরো পয়েন্টে নামার আগে থেকে দেখা যায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিয়ে উৎসাহ কতোখানি, আবার দুই একজনের সাথে কথা বলেও বোঝা গেছে আসলে কতটা কৌতূহলী হলে এইখানে এসে মানুষ আনন্দ উপভোগ করে , বিকেলে তখন প্রায় তিনটা কিংবা চারটা বাজার কাছাকাছি আমরা তখন সাদা পাথর আর বয়ে যাওয়া ছোট নদীর খুব কিনারে, দেখে যেন মনে হচ্ছে এই কোন এক নতুন গন্তব্যের শহরে, ছোট বড় পাথরের সাথে নৌকা আর মানুষের ছবি তোলার হুড়োহুড়ি দেখতেই বেশ ভালো লাগছিলো…

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যটকরা ফিরে যাচ্ছিলো আপন নীড়ে আমরাও আর বাকি রইলাম না। সেই নিজ থেকে উপরে উঠতে উঠতে কতো মানুষের সাথে হলো পরিচয়, এইখানে বাংলাদেশি কোন পন্য নেই যা আছে সব ভারতীয় দামটাও ভারতীয় রুপিতে দেওয়া আর যেই যেইভাবে পাচ্ছে সেইভাবে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দ মতো পন্য কৌতুহলে আমরাও নিয়ে নিলাম চকোলেট একদম ভারতীয় দামে দেখতে যেমন ভালো খেতেও তার ব্যতিক্রম নয় এই মুখরোচক…..! নিচ থেকে উঠে আমরা চলে এলাম আমাদের রুমে আর ক্লান্ত শরীর নিয়ে সারাদিন দৌঁড়াদোঁড়ি শেষে এক দিব্যিই প্রতিক্ষা ঘুমের তবে ঘুম আর হলো কই?

No description available.

জাফলংয়ের ওইপাশ থেকে ছুটে আসা একেকটা শব্দ ঘুম ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । বড়দিন হওয়ার কারণে সেইদিন ডাওকির আকাশের ফুটে উঠেছিলো একের পর এক আতশফাজি আর নাম না জানা কতো বে-রঙ্গিণ আলোর জলজলানি, বাকি পর্যটকরা যেমন সেই সৌন্দর্য দেখতে ছুটে এসেছিলো এইপাশ থেকে ঠিক আমরা ও তার ব্যতিক্রম করিনি ঘুম আর ক্লান্তি বাদ দিয়ে রাতের আকাশের উজ্জ্বল সৌন্দর্য দেখতে বেড়িয়ে গিছেন খোলা আকাশের নিচে, তারা আর আতশবাজির সেই বিকট শব্দগুলো যেন সত্যিকারের সিলেটে আসার আনন্দটা এক নিমিষে বুঝিয়ে দিলো……

বেশ কিছুক্ষণ জাফলংয়ের এমন সৌন্দর্য দেখার শেষে রাতের খাওয়াযের জন্য আমরা গিয়েছিলাম একটা ছোট হোটেলে, তবে হোটলের নাম দেখে চমকে উঠার মতো ঘটনা, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাবুর্চি হোটেল’। চট্টগ্রামের মানুষ এই সিলেটে থাকতে পারে ঠিকই কিন্তু হোটেল দিয়ে কি জীবিকা নির্বাহ করবে? এমন প্রশ্ন যখন মাথায় ঠিক তখনি দেখা সেই পাহাড়তলীর বাবুর্চির সাথে, দেখতে বয়স হয়েছে চুল দাঁড়ি সব সাদা হয়ে আছে, জিগ্যেস করতে বলে উঠলো, তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে এই সিলেট শহরে এসেছিলেন , এখনোর মতো কিছু ছিলো না এই শহরে তখন, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এইখানের সবকিছু বদলে গেলে তার বাবার গড়া ব্যবসা এখন তিনি বড় করে তুলেছে অনেক লোক আসে তার হোটেলে আর বিশেষ করে চট্টগ্রাম হলে তো আপ্যায়নের শেষ থাকে না…..

হোটেল থেকে ফিরে আমরা অনেকক্ষণ আড্ডা আর আনন্দে মাতলাম, বেসুরো কন্ঠে গাওয়া গানগুলো গেয়ে মনে হচ্ছে এক্ষুণি না আজব প্রাণী চলে আসে, তবে তারা কেউ আসেনি আমরা বেঁচে গেলাম, এরপর অধিক রাত পর্যন্ত জেগে রইলাম, বাইরে যাবো সেই সাহসটুকু পাচ্ছি না , একদিকে মোবাইলে ভুতুড়ে গল্প শুনছি তো অন্যদিকে বাইরের শুনশান নিরবতা যেন সেই ভয় আরো বেশি করে চেপে ধরতেছে …তবে সব ভয় জয় করে রাতের জাফলংয়ের নীরবতার চোখে ঠিকই ঘুম নেমে এলো…..!

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park