গত মাস তিনেক আগে রাজিবের সাথে মুন্নীর বিয়ে হয়েছে। সেই সূত্রে মুন্নী এখন রাজিবের ঘরের মানুষ। মুন্নীর প্রতিটি ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আবদার পূরণে সর্বদা সচেষ্ট থাকে রাজিব। মুন্নীকে বিয়ে করার পর রাজিবের অগোছালো জীবনটাকে সুন্দর রূপে সাজিয়ে হতে চেয়েছে তার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। মানুষ হিসেবে মুন্নী অসম্ভব কেয়ারফুল একটা মেয়ে। বলতে গেলে অত্যন্ত স্বামী ভক্ত। বিয়ের পর থেকে মুন্নীকে ছাড়া দ্বিতীয় কিছু ভাবনায় আসেনি রাজিবের। এমন একটা মানুষকে কাছে পেয়ে সত্যি অনেক ভাগ্যবান রাজিব। মুন্নীর কাছে ভালোবাসার জাদু আছে। মুখে আছে মধুর চেয়েও বেশি মিষ্টি কথামালা। ওর ঠোঁটের হাসির কাছে পৃথিবীর সবকিছুই বেমানান। ফুলশয্যা রাতের পর থেকে আজ অব্দি কোনো রাতে মুন্নীকে ছাড়া ঘুমাতে পারেনি রাজিব। রাত এলেই সারাদিনের জমানো কথাগুলো দু’জনে খুব কাছাকাছি এসে গল্প-কথায় কাটিয়ে দেয় সুন্দর মুহূর্তগুলো। মুন্নী অনেক আবেগ প্রবণ একটা মেয়ে। রাজিবের শূন্যতা একদম সহ্য করতে পারেনা। রাজিবের বুকে জায়গা না দিলে রাতে ওর ঘুম হয় না।
মুন্নী ভীষণ মায়ায় জড়িয়ে থাকে রাজিবের বাহুবন্ধনে। ওদের দু’জনের ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো নরম কাশফুলের মতোই অনেকটা পরিপাটি। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারে না। বিয়ের আগে থেকেই দু’জনের সমুদ্র সৈকতে হামিমুনে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। সেই সূত্রে মুন্নীকে সাথে নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিয়ে পরবর্তী প্রথম হানিমুনে সাত দিনের অবসরে এসেছে রাজিব। তাই এই সাত দিন ওদের জীবনে সবচেয়ে বিশেষ দিন হতে চলেছে। প্রথমেই তারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি ভিআইপি একটা হোটেলে উঠে। সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র রেখে দু’জনেই ফ্রেশ হয়ে নেওয়ার পর কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী পরিকল্পনা মাখিক কাজ করতে শুরু করে। এখানে এসে প্রথম দিন মুন্নী যে নীল রঙের শাড়ির সাথে গোলাপি কালার ব্লাউজ পরেছে তা দেখেই ফিদা হয়ে গেছে রাজিব। তখন মুন্নীকে এতো সুন্দর লাগছিলো, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মুন্নীকে তখন খুব কাছে পাওয়ার বাসনা হলো রাজিবের৷ কাছে আসতে বলতেই মুন্নী রাজিবের উপরে ঝাপিয়ে পড়লো। নিজেকে তখন নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়লো রাজিবের পক্ষে। খানিক ব্যথাও পেল রাজিব খাটের সাথে। এতেও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই রাজিবের। মুন্নীকে কাছে পেলে সবকিছু রাজিব ভুলে যায়। লেপটে থাকে মুন্নীর পুরো শরীর জুড়ে। মুন্নীর খুব ইচ্ছে জোছনা রাতে সমুদ্র বিলাসে গিয়ে রাজিবের সাথে হারিয়ে যাবে অচেনা পৃথিবীতে। তাই ওর মনোবাসনাকে গুরুত্ব দিয়ে যথারীতি রাজিব সঙ্গ দিতে থাকে। ধীরে ধীরে রাত ঘনিয়ে আসে। ক্রমশ চাঁদের আলো বাড়তে থাকে। চারদিকে সমুদ্রের গর্জন। পাহাড় সমান উঁচু উঁচু ঢেউগুলো দূর থেকে ভেসে এসে আছড়ে পড়ছে সমুদ্র উপকূলে। সমুদ্রের বেলাভূমি তখন চাঁদের আলোয় ঝিকিমিকি তারার মতো লাগছে।
অতঃপর মুন্নী এবং রাজিব জোছনা রাতে সমুদ্র বিলাসে সময় কাটাবে বলে অভিসারে বের হয়। খানিক হাঁটার পরেই তারা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে উপনীত হয়। মুন্নী তখন ধীরে ধীরে অবাক হতে থাকে নান্দনিক সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণ করে।তখন মুন্নীর সমস্ত অনুভূতি জুড়ে রোমাঞ্চকর উচ্ছ্বাস ভর করতে থাকে। মুন্নী শক্ত করে রাজিবের হাত ধরে আছে৷ চাঁদের আলো তার কোমল জোছনা দিয়ে দু’জনকে আপাদমস্তক ডুবিয়ে রেখেছে। মুন্নীর তীক্ষ্ণ নাকে যে হিরার নাকফুল পরেছে চাঁদের আলোয় তা ঝিকিমিকি তারার মতোই মনে হচ্ছিলো। মুন্নীর হাত ধরে রাজিবও সমুদ্রের হাঁটু জলে নেমে হাঁটতে শুরু করলো। মাঝেমাঝে সমুদ্রের ঢেউ এসে তাদের ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। তখন মুন্নীর চোখে মুখে যে আনন্দ রাজিব দেখেছিলো বোধ হয় বিয়ে পরবর্তী কোনোদিন সে দেখেনি। মুন্নীর সবকিছু রাজিব মুগ্ধ দৃষ্টিতে উপভোগ করতে ছিলো। রাজিবের সব আনন্দ তখন মুন্নীকে ঘিরেই। এভাবে অনেকটা সময় কাটানোর পর তারা হোটেলে ফিরে আসে। যথারীতি ফ্রেশ হয়ে হালকা খাবার খেয়ে দু’জনে পাশাপাশি শুয়ে গল্প করতে থাকে। এমতাবস্থায় মুন্নী রাজিবের বুকে আসে।
মুন্নী হালকা একটা তৃপ্তির চুমু দেয় রাজিবের ঠোঁটে। তখন রাজিবের ফিলিংস বলতে গেলে আকাশচুম্বী। রাজিব তখন মুন্নীকে বুকে জড়িয়ে সঙ্গমে ডুবে যায়। ক্লান্ত শরীরে ঘুমানোর পর ভোর না হতেই মুন্নীর সামনে গরম গরম কফি নিয়ে হাজির হয় রাজিব। মুন্নী তখন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রাজিবের কাছে আসে। দু’জনে তখন মুখোমুখি বসে কফি পান করার ছলে গল্প কথায় খুনসুটি করতে থাকে। হানিমুনে এসে মুন্নীর চোখে মুখে আনন্দের জুরি নেই। এভাবেই সাত দিন সাত রাত হানিমুনে কাটিয়ে তারা বাসায় ফিরে আসে সম্ভবত তিন জন হয়ে। তাদের ইচ্ছে ছিলো হানিমুনে তারা প্রথম বেবির জন্ম দিবে। সেই মাফিক তারা প্রয়োজনীয় কাজগুলো করেছে। আল্লাহ চাইলে তাদের প্রথম বেবি হতে চলেছে। সেই আনন্দে তারা অপেক্ষা করতে থাকে কিছুদিন। দেখা যাক ভাগ্য তাদের কতোটা ফেভার করে। জীবনের সবচেয়ে আনন্দ মুখর সময় কাটিয়ে শুরু হয় তাদের নতুন রূপে জীবন চলা। আকাশসম ভালোবাসায় মুন্নীকে জড়িয়ে কাটতে থাকে রাজিবের দৈনন্দিন কার্যক্রম। প্রতিদিন অফিস শেষে রাজিব বাসায় এসেই মুন্নীর কাজে কামে সাহায্য করে রাতের খাবার খেয়ে তারা শুতে যায় যুগলের সন্নিকটে। এভাবেই চলছে তাদের দৈনন্দিন ভালোবাসার ঘর সংসার। সুখের কোনো অন্ত নেই তাদের জীবনে।
প্রচণ্ড ভালোবাসায় ভরপুর তাদের দাম্পত্য জীবন। কেউ কাউকে তারা অবহেলার চোখে দেখে না। কয়েক বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা পেয়েছে উভয় পরিবারের যৌথ প্রচেষ্টায়। একে অন্যের প্রতি তাদের প্রচণ্ড পরিমাণ ভালোবাসা এবং সম্মান বোধ বিরাজমান। যুগলে পাশাপাশি থেকে তারা বাঁচতে যায় সহস্র জনম। ভালোবাসার পূর্ণ চন্দ্র তারা গোগ্রাসে গিলে খেয়েছে। এই ভালোবাসার পথ ধরেই তারা হাঁটতে চায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।