জীবনঘনিষ্ঠ ৩টি কবুলকৃত দোয়া, যার জবাব আল্লাহ সরাসরি দিয়েছেন
এস এম জাকারিয়া, মীরসরাই, চট্টগ্রাম।
জীবনঘনিষ্ঠ এমন ৩টি দোয়া আছে যা স্বয়ং আল্লাহ্ তায়া’লা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করে দিয়েছেন যেন কেয়ামত পর্যন্ত তাঁর বান্দারা এগুলো দিয়ে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী চাইতে পারে। আর ওই সকল দোয়া, যেগুলো আল্লাহ তায়া’লা কবুল করে দোয়া কারীকে জীবদ্দশায়ই প্রতিদান দিয়েছেন।
যার প্রথম দোয়াটি রোগমুক্তির জন্য, দ্বিতীয়টি বিপদমুক্তির জন্য আর তৃতীয় দোয়াটি হলো- সন্তানলাভের জন্য।
১) রোগ মুক্তির দোয়া –
” رَبِّ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ “.
অর্থ- ” হে আমার প্রভু! আমি দুঃখে কষ্টে পতিত হয়েছি, তুমিইতো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু ” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)
হযরত আইয়্যুব আঃ এর করা রোগ মুক্তির দোয়াটি কবুল করে আল্লাহ তায়া’লা উত্তর দিলেন সূরা আম্বিয়া ৮৪ নং আয়াতে এভাবে –
” فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ فَکَشَفۡنَا مَا بِهٖ مِنۡ ضُرٍّ وَّ اٰتَیۡنٰهُ اَهۡلَهٗ وَ مِثۡلَهُمۡ مَّعَهُمۡ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ ذِکۡرٰی لِلۡعٰبِدِیۡنَ “.
অর্থ – ” তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার পরিজন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তাদের সাথে তাদের মত আরও দিয়েছিলাম আমার বিশেষ রাহমাত রূপে এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ “।
২) বিপদ মুক্তির দোয়া –
” لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ “.
অর্থ : ” তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গোনাহগার ” -সূরা আম্বিয়া : ৮৭।
হযরত ইউনুস আঃ এর করা বিপদ মুক্তির দোয়াটি কবুল করে আল্লাহ তায়া’লা উত্তর দিলেন সূরা আম্বিয়া ৮৮ নং আয়াতে এভাবে –
” فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۙ وَ نَجَّیۡنٰهُ مِنَ الۡغَمِّ ؕ وَ کَذٰلِکَ نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ “.
অর্থ – ” তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা হতে এবং এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি “।
৩) সন্তান লাভ করার জন্য বরকতময় যে দোয়া তার দু’ভাগে ভাগ করে পবিত্র কোরআনের ভিন্ন দুই জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। যেমন –
ক.
” رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ “.
অর্থ: ” হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস ” সূরা আম্বিয়া : ৮৯
হযরত জাকারিয়া আঃ এর করা সন্তান লাভের এই দোয়াটি কবুল করে আল্লাহ তায়া’লা উত্তর দিলেন সূরা আম্বিয়া ৯০ নং আয়াতে এভাবে –
” فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۫ وَ وَهَبۡنَا لَهٗ یَحۡیٰی وَ اَصۡلَحۡنَا لَهٗ زَوۡجَهٗ ؕاِنَّهُمۡ کَانُوۡا یُسٰرِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ وَ یَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّ رَهَبًا ؕوَ کَانُوۡا لَنَا خٰشِعِیۡنَ “.
অর্থ – ” অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়াকে, আর তার জন্য তার স্ত্রীকে যোগ্যতা সম্পন্ন করেছিলাম; তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত “।
খ. একই বিষয়ে আরেকটি দোয়া –
” رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء”.
অর্থ: ” হে আমার পালকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করো, নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী ” সূরা আলে ইমরান: ৩৮
হযরত জাকারিয়া আঃ এর এই দোয়ার পর আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতারা এসে তাকে দোয়া কবুলের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।দোয়াটি কবুল করে আল্লাহ তায়া’লা উত্তর দিলেন সূরা আলে-ইমরানের ৩৯ নং আয়াতে এভাবে –
” فَنَادَتۡهُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ هُوَ قَآئِمٌ یُّصَلِّیۡ فِی الۡمِحۡرَابِ ۙ اَنَّ اللّٰهَ یُبَشِّرُکَ بِیَحۡیٰی مُصَدِّقًۢا بِکَلِمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ سَیِّدًا وَّ حَصُوۡرًا وَّ نَبِیًّا مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ “.
অর্থ – ” অতঃপর যখন সে মেহরাবের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিল তখন মালাইকা/ফেরেশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্বন্ধে সুসংবাদ দিচ্ছেন – তার অবস্থা এই হবে যে, সে আল্লাহর একটি বাক্যের সত্যতা প্রকাশকারী হবে, নেতা হবে, স্বীয় প্রবৃত্তিকে দমনকারী হবে এবং সৎ কর্মশীলগণের মধ্যে নাবী হবে “।
আসুন আমরা সকলে বর্ণিত দোয়াগুলো নিকটস্থ মসজিদের ইমাম-খতিব অথবা কোনো অভিজ্ঞ আলেমের কাছ থেকে সহিহ-শুদ্ধভাবে শিখে নিয়ে নিজেদের বাস্তব জীবনে আমল করি। আল্লাহ তায়া’লা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন।