মিথ্যে ভালোবাসায় প্রতারিত হওয়া এমন একজন নারীর সান্নিধ্য পেতে দিগ্বিদিক নিরন্তর ছুটে চলেছি। আদৌ তাকে খুঁজে পাবো কিনা জানা নেই। চেষ্টা এবং অধ্যবসায়ে সফল হলে সংবেদনশীল থেকে যাবো অনন্তকাল। এইযে রোজ রোজ ভাঙা মনের মানুষগুলোর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে যাচ্ছে শ্যামলিমা আকাশ, তার খবর কেউ রেখেছে কিনা বোধগম্য নেই। পরোপকারী মানুষের খুব অভাব দুনিয়া ব্যাপী। মহাপৃথিবী যতোই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততোই জটিল আকার ধারণ করছে দিনের পর দিন। কোথাও কোনো সভ্যতার পিরামিড গড়ে উঠছে না। পারমাণবিক অস্ত্রের যাঁতাকলে ক্রমাগত পিষ্ট হচ্ছে মানব সভ্যতা। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকেও কেউ বেরিয়ে আসতে পারছে না। মুসলিম বিদ্বেষী দেশগুলো ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছে। মানুষ তথা জীবজন্তুর বেঁচে থাকার পরিবেশ জ্যামিতিক হারে নষ্ট হচ্ছে। অথচ এই দায় কোনো সভ্য মানুষ এড়িয়ে যেতে পারে না। অতিরিক্ত গাছপালা নিধনের ফলে বেড়ে যাচ্ছে বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড। এতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে। কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই এভাবে পরিবেশ নষ্ট হতে থাকলে একটা সময় পর জীব বৈচিত্র্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিপর্যয় নেমে আসবে পৃথিবী জুড়ে। ইতোমধ্যে পরিবেশ থেকে অনেক বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে সকল প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই সেই সময় আসার আগেই পরিবেশ সুরক্ষায় জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পৃথিবী ধ্বংসের খুব সন্নিকটে। গল্পের শুরুতে বলতে ছিলাম ভাঙা মনের মানুষগুলোর কথা। আসলে মন ভাঙা মানুষগুলো জীবিতাবস্থায় কখনো আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তারা এমন ভাবে ভেঙে যায়, যার কোনো সুচিকিৎসা নেই। এই মন ভাঙা মানুষের অভাব নেই আশেপাশে। এদের প্রতি তেমন কাউকে সহানুভূতি হতে দেখা যায় না। বরং এদের সবাই এড়িয়ে চলতে চায়। এই মানুষগুলো একটা সময় পর তার পরিবার থেকেও বিতাড়িত হতে থাকে৷ কটাক্ষের শিকার হয় আশেপাশের মানুষগুলো কর্তৃক। তখন তারা চরম মাত্রায় একাকীত্ব বোধ করে। এদের সাথে কেউ মিশতে চায় না৷ কারো সাথে কথা বলার ভাষা তারা হারিয়ে ফেলে। কেউ কেউ মানসিক রোগী হয়ে যায়। অথচ যে মানুষগুলো এই অপরাধ মূলক কাজের সাথে জড়িত তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা বোধ কাজ করে না। এই অসুস্থ্য মস্তিষ্কের মানুষগুলো জাতির শত্রু, দেশের শত্রু। এদেরকে প্রতিহত করাও সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
আমরা হতে চাই মানবিক মানুষ। কারো কোনো কষ্টের কারণ হতে চাই না। বরং কেউ বিপদে পড়লে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। কারো কষ্ট দেখে না হেসে সহমর্মিতার জায়গা থেকে পাশে দাঁড়াতে চাই। দেশ ও জাতির ভেদাভেদ ভুলে মৈত্রী স্থাপনে সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে একতাবদ্ধ হয়ে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। তবেই না আমাদের বসবাসের প্রাণকেন্দ্র স্বপ্নের পৃথিবী হয়ে উঠবে। সেদিক থেকে আমি জীবন সাথী হিসেবে একজন অমানুষ কর্তৃক প্রতারিত হওয়া নারীকে বেছে নিতে চাই। যাকে পুনর্বার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে তার ভাঙা মনটাকে জোড়া লাগিয়ে স্বাভাবিক মানুষে পরিণত করতে পারলে নিজেকে সত্যিকার মানুষ বলে মনে হবে। আদতে কাজটা কঠিন মনে হলেও আমি সহজ করতে চাই ভালোবাসা এবং যত্নের মাধ্যমে। যত্ন এবং পরিচর্যা করলে সবকিছুই বেগবান করে তোলা যায়। সেটা হোক কোনো মানুষ অথবা জীবকুল। জল পেলে বৃক্ষ যেমন সজীব হয়ে ওঠে, তেমনি ভালোবাসা পেলে নারী আরো সতেজিত হতে থাকে। তাই আমার সমস্ত ভালোবাসার বিনিময়ে নিঃসঙ্গ কোনো নারীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই। যে আমার ভালোবাসার জ্যোতিতে অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে আসতে পারবে।
তাকে দেখিয়ে দিবো বেঁচে থাকার পথ। তাকে ভুলিয়ে দিবো অতীতের স্মৃতি। কোনো অবস্থায় তাকে অতীতে ফিরে যেতে দিবো না। কখনো তার চোখে জল ঝরতে দিবো না। তার আকাশে কখনো বিষণ্ণতার মেঘ জমতে দিবো না। মুক্তপাখির মতো খোলা আকাশে তাকে উড়তে শিখাবো। নদীর জলের মতো তাকে বয়ে চলতে শিখাবো। কখনো তার উপর কোনো অধিকার ফলাতে যাবো না। তার মনের বিরুদ্ধে কখনো আলিঙ্গন করতে যাবো না। সবসময় তাকে হাসিখুশি রাখার মন্ত্রগুলো ছড়িয়ে দিবো। তার ঠোঁটের পাপড়িতে কখনো কলঙ্কের দাগ লাগতে দিবো না। সে যখন নীমিলিত পায়ে প্রখর রোদে হাঁটতে যাবে তখন তার ছায়ার সাথে মিশে যুগলে হারিয়ে যাবো। ভালোবাসার মানুষগুলো সবসময় অনেক শখের হয়। এদের সবকিছু উপভোগ করার মতো। নারীকে যে ভালোবাসতে শিখে গেছে সে পেয়েছে অনির্বাণ সুধা। আদতে নারী শুধু কামনার বস্তু নয়। এদের ভালোবেসেও অমরত্ব লাভ করা যায়৷ যারা শুধু নারীকে কামনার বস্তু হিসেবে দেখেছে তারা কখনোই নারীর ভালোবাসায় স্নাত হতে পারেনি। সত্যি বলতে নারীর ভালোবাসার মতো বিশুদ্ধ সুখ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কিছুতে নেই। যে পুরুষ সেই ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছে সে কখনো ধোঁকাবাজ হতে যাবে না। নারীর সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে না। নারী হচ্ছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের বাহার। পুরুষ তার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বরং যুগলের ভালোবাসা ছুঁতে পারে ঈশ্বর অন্তঃকরণ। নারীর শরীর কেন্দ্রিক ভালোবাসা কখনো বিশুদ্ধ ভালোবাসা হতে পারে না। যে পুরুষ এই ভালোবাসায় সীমাবদ্ধ থাকতে চায় সে কখনো প্রেমিক হতে পারে না।
সে হয় ধর্ষক নয়তো বেশ্যালয়ের খদ্দের। প্রকৃত প্রেমিক কখনো ধর্ষক হতে যাবে না। সে জানে কেমন করে নারীত্বের ভালোবাসায় সিক্ত হওয়া যায়। সে জানে নারী ভালোবাসা পেলে কোনো একটা সময় অবলীলায় ধরা দিবেই। নারীকে বদ করার মাধ্যম বিশুদ্ধ ভালোবাসা এবং প্রচণ্ড শ্রদ্ধাবোধ। অন্যথায় বৃথা সব আয়োজন। জোর করে কেউ কখনো নারীর ভালোবাসা আদায় করতে পারে না। পারে না বিধায় সব পুরুষ প্রেমিক নয়। প্রেমিক হতে গেলে জানতে হবে ভালোবাসার মূলমন্ত্র। মাছের সাথে যে কখনো বঁড়শি দিয়ে খেলা করেনি, সে কখনো নারীর ভালোবাসা বুঝবে না। যে নদীরপাড়ে দাঁড়িয়ে কখনো নীরব কল্পনায় হারিয়ে যেতে পারেনি, সে কখনো নারী মনের গভীরতা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না। যে সবুজ ফসলের জমিতে প্রজাপতির মতো উড়তে পারেনি, সে কখনো নারীর অভিমানের ভাষা বুঝবে না। সে পুরুষ কেবল ছ্যাবলামিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। নারীকে বুঝে ওঠা এতো সহজ নয়। নারীকে বুঝতে হলে প্রচণ্ড আত্মসংযম দরকার। এটা না থাকলে পুরুষ তুমি নারীর কাছে যেওনা। নারীর ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসার জাল বোনা আগে শিখতে হবে। অন্যথায় তুমি ধূলিসাৎ হয়ে যাবে৷ জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাবে। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে তোমার পরিব্যাপ্তি।
এই পৃথিবীতে ধোঁকাবাজের কোনো জায়গা নেই। ধোঁকাবাজরা কখনো মানবিক হতে পারে না। মনুষ্যত্ববোধ বলে এদের কিছু নেই। যে নারীকে আমি কল্পনার রঙে এঁকেছি তার প্রতি আমার কোনো লোভ লালসা নেই। নেই কোনো দাবি দাওয়া। বরং তাকে ভালোবেসেই আমি কৃতার্থ থাকতে চাই। তাকে বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ গড়ে দিতে চাই। এর ব্যত্যয় ঘটলে নিজেকে আমি ক্ষমা করতে পারবো না। আমার ভালোবাসার মানুষটি হবে ভীষণ আবেগ প্রবণ। অল্পতেই যে কেঁদে ফেলবে। বুকে মুখ লুকিয়ে জড়িয়ে ধরে চিমটি এঁকে দিবে পিঠের ভাঁজে ভাঁজে। কখনো বা চোখে চোখ রেখে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবে। আসলে নারীর ভালোবাসার চেয়ে গভীর অনুভূতি আর কিছুতে আছে কিনা আমার জানা নেই। এদের যতোই ভালোবাসা যায় ততোই সুখের আস্বাদন উপভোগ করা যায়। ভালোবাসা হচ্ছে বিধাতার দেওয়া এক অমূল্য উপহার। নারী হচ্ছে তার কেন্দ্রবিন্দু। যে পুরুষ নারীর প্রেমে আসক্ত হয়েছে সে কখনো খারাপ কাজে রত হবে না। সত্যিকার ভালোবাসা মানুষকে মানবিক করে তোলে। সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। প্রচণ্ড ভালোবেসেও যারা ধোঁকা খেয়েছে তারাই বুঝবে কতোটা ভয়ানক ভালোবাসার আঘাত। এর আঘাতে ওই মানুষগুলো চিরতরে থেমে যেতে বাধ্য। কেউ কেউ জীবন্মৃত হয়ে প্রতিকূলতার মাঝে বেঁচে থাকে। অথচ পবিত্র ভালোবাসাকে যারা অপবিত্র বানিয়ে ফেলে তারা কখনোই অনুশোচনায় ভোগে না। বরং তারা মনের সুখে হৈ-হুল্লোড় করে আড়ালে-আবডালে ঠোঁটে চেপে হাসতে থাকে। তাদের ব্যবহার হিংস্র পশুর চেয়েও জঘন্য। অথচ এটা তারা আঁচ করতে পারে না।
ভালোবাসাহীন কোনো প্রাণীই স্বাভাবিক অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে না। ভালোবাসা এবং প্রচণ্ড অনুভূতি প্রবণ মানুষগুলো সুন্দর মনের অধিকারী হয়। যাদের মধ্যে এর কোনোটিই নেই তারা কখনোই প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। ভালোবাসা থেকেই মানুষ প্রকৃত মানবিক হতে শেখে। আমার শখের মানুষটাকে পূর্ণিমা আলোর ঝলমলে জোছনায় নিরন্তর ভাসাতে চাই। বৃষ্টিস্নাত দিনে প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতে চাই সবুজ গালিচার প্রান্তরে। গাঙের জলে নৌকা ভাসিয়ে ছুটে যেতে যেতে দেখতে যাবো সন্ধ্যাবেলায় নদীপাড়ে সূর্যাস্ত। আমার কল্পনার আকাশ জুড়ে শুধু তার অবস্থান হোক, যে ভালোবাসার বিনিময়ে ধোঁকা খেয়ে আপাদমস্তক ভেঙে পড়েছে। তার ভেঙে যাওয়া মনের ক্ষতস্থানে মাখিয়ে দিবো আমার ভালোবাসার এন্টিবায়োটিক মলম৷ অতঃপর বুকে টেনে নিয়ে বাহুবন্ধনে জড়িয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো খোলা আকাশে তাকে উড়তে দিবো। পূর্ণ ভালোবাসার মায়াজালে তাকে বেঁধে থাকতে দিবো হৃদয়ের মণিকোঠায়। কখনো দূরে সরিয়ে নরক যন্ত্রণায় তাকে কাঁদতে দিবো না।
তাকে সার্বিক সুখের মাঝে রেখে অনন্তকাল একসাথে চলার অঙ্গীকারে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হতে চাই। সর্বোপরি তার বিপরীতে ভাবনার মাঝে কিছু রাখতে চাই না। এমন একজন মানুষের সন্ধান পেলে ঐশ্বরিক সুখ পাবো হাতের মুঠোয়। তাকে খুঁজে না পাওয়া অব্ধি আমার কোনো নিস্তার নেই।