1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

জলের ঊর্ধ্বমুখী জীবন  — জাকির আলম 

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ৪৩ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

জলের ঊর্ধ্বমুখী জীবন  

জাকির আলম 

চৌহালী, সিরাজগঞ্জ 

 

জন্মের দায় এড়িয়ে যেতে পারিনি বলে জড়বস্তুর মতোই বড্ড অবহেলার মাঝে কোনোরকম বেঁচে আছি। একজীবনে সহস্র ফুলের ঝরে যাওয়া দেখেছি। দেখেছি সবুজ পাতা এবং গাছের শাখা-প্রশাখার ফাঁকে চুপসে যাওয়া ফুলের বোবা আর্তনাদ। তেমনি নদীর জল শুকিয়ে গেলে জলজপ্রাণীদের কান্না শুনেছি। শেষ রাতে ডুবে যাওয়া তারাগুলো খুব অভিমানে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে। আমিও শামুকের ভিতর বারংবার লুকানোর চেষ্টা করেছি। রাতের অন্ধকারে বাদুড়ের ওড়াউড়ির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে লক্ষাধিক বার। পত্রিকার পাতা খুলতেই যখন বড় বড় অক্ষরের শিরোনামে কোনো অবলা নারীকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলার ঘটনাপ্রবাহ চোখে পড়ে তখন পরিবেশ পরিস্থিতি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধ বড্ড ভয়ানক ! যারা এই কাজের সাথে জড়িত তারা দেরিতে হলেও উপযুক্ত শাস্তি অবলীলায় পেয়ে যান। এখান থেকে বাঁচার কোনো পথ অবশিষ্ট থাকে না। শীতের কুয়াশা ভেদ করে যখন সোনা রোদ উঁকি দেয় তখন শরীরের পক্ষে খুব আরাম লাগে। সবার জীবনে রংধনুর দেখা মেলে না। আবার এমন যারা আছে কখনো কল্পনার আকাশে তারা উড়তে পারে না। সব মাটিতেই ফসল ফলে না। কিছু মাটি আছে তামাটে কয়লার মতো।

 

যেখানে কোনো উর্বরতা নেই। সাথী হারা কাক যেমন দ্বিতীয় বার জোট বাঁধে না, তেমনি কিছু মানুষের জীবনে কখনো প্রেম আসে না। অনুভূতি চুরি হয়ে গেলে মনুষ্যত্ববোধ তখন কাজ করে না। আজ যাদের উপকার করি কাল তারা ক্ষতি করার অপেক্ষায় থাকে। মাঝেমাঝে নিজেকে খুব বোরিং লাগে। তখন মনের ইচ্ছাশক্তি একদম উধাও হয়ে যায়। বসন্ত এলেই সবার জীবনে ফাগুন আসে না। এমন অনেক প্রাণী আছে যারা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি প্রবল কষ্টের মাঝে পুরো জীবন কাটিয়ে দেয়। বর্ষণ মুখর দিনের মতো কেউ কেউ অবিরত চোখের জলে বুক ভাসায়। শরতের সাদা মেঘের ভেলায় চোখ রেখে সবসময় অভিভূত হতে নেই। কেননা কখনো কখনো তা বিষণ্ণতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় মনের আকাশ জুড়ে। প্রচণ্ড নিঃসঙ্গতার মাঝে যখন কেউ একান্ত সঙ্গ দেয় তখন তাকে স্বয়ং ফেরেস্তার মতো মনে হয়। নির্ঘুম রাতগুলোর যন্ত্রণা মৃত্যুর চেয়েও দুর্ধর্ষ ভয়ানক ! অনেক না পাওয়াগুলো যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন অভিশপ্ত মনে হয় মানব জীবন। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য আজো আমি খুৃঁজে পাইনি। অথচ আমার দায়ভারের বোঝা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে নিজেকে প্রকৃতির বোঝা বলে মনে হয়। কেন জানিনা চতুর্দিকেই আমি প্রগাঢ় অন্ধকার দেখি। চরম হতাশার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে আমার প্রতিটি মুহূর্ত। কোনোভাবেই নিজেকে মুক্ত করতে পারছি না।

 

আমি কখনো নাস্তিকতায় বিশ্বাসী নই। ঈশ্বরের প্রতি প্রবলভাবে আস্তিক। সেজন্য ধর্ম নিয়ে আমার কোনো বাড়াবাড়ি নেই। আমি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও সকলধর্মের প্রতি সমান ভাবে শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ধর্মের নামে গোঁড়ামি এটা আমি কখনোই ভালো চোখে দেখি না। পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষকে সুপথে পরিচালিত করে। কিন্তু মানবজাতি তার উল্লোটা করে বসে থাকে। অধিকাংশ মানুষ যার যার স্বার্থ হাসিলের জন্য সদা তৎপর থাকে। অথচ এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ক্ষণিকের জন্য পৃথিবীতে এসে কোনো অন্যায় কাজে না জড়ানোই উত্তম হিসেবে বিবেচ্য বিষয়। আজকাল মানুষকে বিশ্বাস করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় সব মানুষ কম-বেশি বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে সর্বদা তৎপর থাকে। কারো গোপনীয় বিষয় কেউ নিজের মাঝে আটকে রাখতে পারে না। বরং অন্যের গীবত করতে তাদের মুখে আদৌ বাঁধে না। আজকাল মানুষ হয়ে পড়েছে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী। এই মানুষ রূপী হিংস্র প্রাণীর হাত থেকে বেঁচে থাকাটা ভীষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর কথা চিন্তা করে না কেউ। অথচ মৃত্যু তাদের খুব নিকটে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ু ফুরিয়ে গেলেই তারা মরা লাশ হয়ে কবরে প্রবেশ করবে। এই মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি। হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি মানুষ কতোটা নিষ্ঠুর প্রাণী। জন্মের পর থেকে ক্রমাগত মৃত্যুর পথেই হাঁটছি। কখনো স্থির দাঁড়িয়ে থাকার অবকাশ খুঁজে পাইনি। জানিনা কতোটা আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি। কখনো ভালো কাজ করেছি কিনা তাও জানিনা। বরং পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে অবিরাম বয়ে বেড়াচ্ছি। এতোটুকু জীবনে সুখী হওয়ার মতো কোনো মন্ত্র খুঁজে পাইনি। যা পেয়েছি তা সীমাহীন কষ্টের যন্ত্রণা।

 

লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে যেমন বিভিন্ন উপকরণ বানানো হয় ঠিক তেমনি ভাবে আমিও প্রতিনিয়ত জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছি। একজীবনে এতোটা কষ্টের দায়ে কাউকে অভিযুক্ত করতে পারিনি। সর্বক্ষণ মনে হয়েছে আমার সব অক্ষমতা থেকে যতো সব কষ্ট পেয়েছি। এখনো কোনো কাজে নিজেকে ঠিক ভাবে মেলে ধরতে পারিনি। যে কাজেই হাত দেই সেখানেই ব্যর্থতার হাতছানি আলিঙ্গনে ডুবিয়ে রাখে। কোনো সুসংবাদ বা সফলতার দেখা আজ অবধি পাইনি। এমতাবস্থায় বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। ভেবে উঠতে পারিনা আমার এখন কি করা উচিত। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিতে আজ আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কোনোকিছু আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে পারছি না। বুকের ভিতর অথৈ জ্বালা-পোড়া সতত বেড়েই চলেছে। চোখের পাতায় কোনো ঘুম নেই। হাসতে ভুলে গেছি পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগেই। সারাক্ষণ মানসিক চাপ এবং হতাশার মাঝেই অবস্থান করছি। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায়ন্তর খুঁজে পাচ্ছি না। জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্নগুলো ফ্যাকাশে মলিন হয়ে গেছে। প্রাপ্তির খাতায় কোনো সফলতা নেই। যা আছে তা শুধু মরীচিকার বীভৎস আস্ফালন। মাঝেমাঝে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে৷ কিন্তু সেটাও করতে পারিনা। পৃথিবীর বুকে আমাকে বোঝার মতো মানবিক মানুষ খুৃজে পাইনি। কেউ আমার সঙ্গী হতে কখনো আগ্রহ বোধ করেনি। আজকাল নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়। মনে হয় পৃথিবীতে জন্ম নেওয়াটা আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। যদি তাই না হবে তাহলে আমার জীবনটা এতো কঠিন হতো না। আমি হাফসে গেছি বিস্তীর্ণ বন্ধুর পথে একাকী হাঁটতে হাঁটতে। এমন একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি যার কোনো পরিবর্তন নেই।

 

এক ভাবেই পেরিয়ে যাচ্ছে জীবন নামের রেলগাড়ি। আঁধারে ঢেকে গেছে জীববৈচিত্র্যের চারপাশ। ঝলমলে আলোর কোনো অনুপ্রবেশ নেই এখানে। এখানে করুণ মৃত্যুর আহাজারি খুব কাছ থেকে শুনতে পাই। দেখতে পাই রক্তাক্ত গোলাপের কাঁটা। হাসপাতালে পড়ে থাকা অসুস্থ্য রোগীর অন্তিমযাত্রার প্রাক্কালের মতো আমিও মৃত্যুর প্রহর গুনে চলেছি। কেউ এগিয়ে আসেনি আমাকে সাহস যোগাতে। বরং বাঁকা চোখে সবাই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখেছে। যাকেই আপন ভাবতে গেছি কিছু সময়ের ব্যবধানে সবাই আঘাত দিয়েছে। আমার প্রতি কখনো কাউকে মানবিক হতে দেখেনি। জীবনে কারো ক্ষতি করা তো দূরের কথা কখনো কারো খারাপ কামনা করিনি। সবাইকে সমান চোখে দেখেছি। মানুষ হিসেবে আমি কতোটা মানানসই সেটা জানিনা৷ তবে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য কখনো চেষ্টার ত্রুটি করিনি। তবুও অমানুষ থেকে গেলাম কারো কাছে। এতো শত অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত আমি। বিনিময়ে পেতে ইচ্ছুক যাবতীয় শাস্তি। এরপরেও আমি মানুষ হতে চাই। মানবিক মানুষ। প্রয়োজনে ভুলের পথ ধরে হেঁটে যাবো গন্তব্যহীন জলের ঊর্ধ্বমুখী জীবনের গতিপথে। তখন মুক্তির গান গেয়ে হাসি মুখে বিদায় নিবো কল্লোলিত নদীর বুকে মাথা রেখে এক চিলতে কোমল নমনীয়তায়।

 

আহারে জীবন তুই বড়ই অদ্ভুত ! তোর নেই কোনো সুবিচার। কেবল কষ্টের আগুনে সারাজীবন  আমাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিলি। আমি হেরে গেলাম তোর কাছে। কোনো আত্মসংযম আমার কাজে এলো না। সব না পাওয়ার আক্ষেপ আমাকে কুরে কুরে নিঃশেষ করে দিয়েছে। বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি আমি কোনোদিন পাইনি। জন্ম থেকেই কষ্টের ঘানি টেনে মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত ধাবিত হচ্ছি। এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ন্তর নেই। কেবল হতাশা আর আক্ষেপ নিয়েই একটা জীবন অতিবাহিত হয়ে গেলো। অথচ আমি কিছুই করতে পারলাম না। না পারলাম প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে সফলতার পথে পা বাড়াতে। আমি কেবল অন্ধকারেই থেকে গেলাম জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। কেউ আমার দিকে কখনো ফিরেও তাকায়নি। বাড়িয়ে দেয়নি কেউ ভালোবাসার হাত। কেউ বুকে টেনে নেয়নি পরম মমতায়। আলিঙ্গনে জড়ায়নি রোমাঞ্চকতার মায়াজালে। ভালোবাসা এবং সুখ তুমি কতো দূর, তুমি কতো দূর !

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park