কোঁচড় ভরা শিশির — মাহমুদ হাফিজ
ভোর হয়েছে।চকের গুঁড়োর মতন শুভ্র আভা ভোরের গায়ে।প্রকৃতির কোলে শীতলা বাতাস।টুপটুপ করে কুয়াশা ঝড়ছে টিনের চালে।এতে তৈরী হচ্ছে উন্মাতাল এক ঝঙ্কার। মায়াবী এক সুর।আমার খুব প্রিয় সুরটা।প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠি সুরটা শোনার জন্য। আজও ওঠলাম।অন্যদিন কুয়াশা থাকে বাইরে; শীত থকে না।ব্যতিক্রম আজ।কুয়াশা কম।শীতের প্রতাপ বেশি।গা থেকে গরম কোম্বল আলাদা করতে ইচ্ছে করছে না শীতের কারণে। জুবুথুবু হয়ে বসে রইলাম কতক্ষণ। হঠাৎ পাশের রুম থেকে আব্বার ডাকাডাকি।মায়া জড়িয়ে বলতে লাগলেন — নামাজ পড়তে যাবে না; ওঠো। জলদি।সময় ফুরোলে বলে।
নামাজ শেষে ইচ্ছে করছিলো বাইরে হাঁটবো।প্রকৃতির গায়ে মাখনের মতো মিশে থাকা স্নিগ্ধতা কোঁচড় ভরে লুফে নেবো।তাই ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে বেরোলাম প্রকৃতি বিলাশে।
বাড়ির উঠোনের বুকে পাকঘর।ছোটো একটা বাঁশঝাড় পাকঘর ঘেঁষে। ওখানেই একটা সরু পথ।তৃণলতা ভরপুর পথটার দুপাশে।একটু একটু ভয় লাগে এ পথের সামনে এলে।আমারও ভয়ভয় ঠেকছিলো।এজন্য সংকোচ ভরে দাঁড়িয়ে থাকলাম কতক্ষণ। হঠাৎ পেছনে ফিরে দেখি—আব্বা বাইরে।মুখ ধুতে বেরিয়েছেন তিনি। এই সুযোগ! তাকে পাশে পাবার সাহস নিয়ে চট করে হাঁটা দিলাম এ সরু পথ ধরে।কিছুক্ষণ পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম চাষোপযোগী কতোগুলো বিস্তৃত ক্ষেতে।ভোরের মাদকতা যেন ছিঁটকে পড়ছে ক্ষেতগুলো থেকে।সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো প্রতিটা ক্ষেতের আইলে। ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরবিন্দু। পুবের সোনালী সূর্যের আলো ঝড়ছে শিশির ভেজা ঘাসে।আমি টুপ করে একটা ঘাস ছিঁড়লাম। তাতে জমে থাকা শিশির মাখতে লাগলাম কোঁচড়দ্বয়ে।