নূরনবী ইসলাম সুমন
আজকাল দেখা যাচ্ছে, ফিলিস্তিনের বিপর্যয়ের মুহূর্তে কিছু ভাই হতাশ হয়ে, ক্ষোভে-দুঃখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন— “তালেবান কিছু করছে না কেন?”, “ছাত্র ভাইরা কী করছে?” এমনকি অনেক সময় কটাক্ষের সুরে দোষারোপও করছেন। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো কি আবেগের ফোয়ারা, না কি বাস্তবতাকে অস্বীকার?
বাইতুল মাকদিস আজকের দিনে প্রথম নির্যাতনের শিকার হয়নি। ইসলামের ইতিহাসে উমর (রা.) এর মাধ্যমে এই ভূমি বিজিত হয়, কিন্তু প্রায় পাঁচশ বছর পর তা খ্রিষ্টানদের দখলে চলে যায়। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.) আবার তা পুনরুদ্ধার করেন। এই পুনরুদ্ধারের পেছনে ছিল দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি, কৌশল, এবং সময়োচিত সিদ্ধান্ত।
সালাহউদ্দিন (রহ.) এর সময় মুসলমানদের ছিল খিলাফাহ, ছিল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব। তবুও তিনি সরাসরি কুদস মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। তিনি প্রথমে মিশরের ফাতেমী শাসন পতনের মাধ্যমে আহলুস সুন্নাহর শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। কেননা তিনি জানতেন— মিশর বিজয় ছাড়া কুদস বিজয় একপ্রকার অসম্ভব।
আফগানিস্তানে তালেবান বিজয় লাভ করেছে মাত্র কয়েক বছর হলো। তারা এখনো আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, অর্থনৈতিক চাপ এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সরাসরি কুদস যুদ্ধের ময়দানে প্রবেশ মানেই, একটি নবজন্ম প্রাপ্ত ইসলামী ইমারাতকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া।
সিরিয়ার মতো অঞ্চলে যেখানে প্রতিনিয়ত ভেতর ও বাইরের শত্রুর সঙ্গে লড়াই, সেখানে একটি সুসংগঠিত বাহিনী গড়ে তোলা এবং তা কুদস অভিমুখে পরিচালিত করা রাতারাতি সম্ভব নয়।
ছাত্র ভাইদের নিয়ে বিদ্রূপ করাটা নিছক এক আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া। তারা তো কুদসের পথে হাঁটা শুরু করেছে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— “কোন পথে হাঁটবে?” মিশরের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র যেখানে সামান্য ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে দেয়, তারা কি ছাত্র ভাইদের অস্ত্রসহ প্রবেশের সুযোগ দেবে?
আকাশ পথেও যাওয়া সম্ভব নয়, আর সমুদ্রপথ তো আরও দুর্গম। তাহলে কিভাবে হুট করেই এই লড়াই সম্ভব?
বাইতুল মাকদিস শুধু একটি শহর নয়— এটি একটি প্রতীক, একটি কেন্দ্র। এটি মুক্ত হলে বদলে যাবে গোটা দুনিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্য। তাই একে রক্ষা করতে একজোট হয়েছে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুশরিক এবং তথাকথিত মুসলিম শাসকগোষ্ঠী।
সালাহউদ্দিনের সময় যেভাবে বিশাল ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছিল, এবার তা হবে আরও ভয়ংকর, আরও বিস্তৃত। কুদস বিজয় মানেই হবে বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধ। এটি কোনো আবদার নয়, এটি এক মহাযজ্ঞের নাম।
আমাদের করণীয় হলো— নিজ নিজ ভূখণ্ডে তামকীন (স্থিতিশীলতা) অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করা। আজ যারা দোষারোপ করছে, তাদের বোঝা উচিত— ফিলিস্তিন থেকে নয়, কুদসের বিজয় শুরু হবে হিন্দ থেকে; এবং তা শেষ হবে বাইতুল মাকদিসে।
ইন শা আল্লাহ, হিন্দ বিজয়ের পর একদিন দেখা যাবে, উম্মাহর মু জা হি দ রা বাইতুল মাকদিসে মিলিত হয়েছেন। তাদের তলোয়ারে মেরিকার দম্ভ চূর্ণ হবে, সাপের মাথা গুঁড়িয়ে যাবে।
তাই কটাক্ষ নয়, প্রস্তুতি চাই।
তালেবান, ছাত্র ভাই, কিংবা সিরিয়ার মুজাহিদদের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের অবস্থান শক্ত করো। ইতিহাস, বাস্তবতা এবং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি সবই বলছে— কুদস বিজয় হবে, তবে প্রস্তুতির পর।