1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

এ কেমন সকাল? — মোঃ নূরনবী ইসলাম সুমন

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
  • ৩৬ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

 মোঃ নূরনবী ইসলাম সুমন

ইচ্ছাশক্তি আইডি নং: 0020220648

 

রাত তিনটা বেজে পঁচিশ মিনিট।

সুমনের চোখে ঘুম নেই। অথচ পরশু তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। মায়ের নিঃশ্বাসের শব্দে ঘরটা ভারী মনে হয়। রাত যত বাড়ে, সুমনের মস্তিষ্কে অজানা এক হাহাকার বাড়ে।

 

তার জানালার বাইরে এখনো জোনাকিরা জ্বলছে। মিরপুরের এই উপশহরে রাত মানেই অস্পষ্ট কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আর ইটবালির গন্ধ। অথচ আজ সব কিছু যেন থেমে আছে। যেন এই শহরটাও তার মতো করে গভীর কিছু ভাবছে।

 

“সুমন, তুই ঘুমাস না?”

মায়ের ক্ষীণ গলা কানে এল।

 

“ঘুম আসতেছে না মা।”

“বুকে ব্যথা করতেছে না তো?”

 

“না মা, শুধু ঘুম আসতেছে না।”

 

মা উঠে এসে এক চামচ মধু দিলো, কপালে হাত রাখলো। এই হাতই তো তাকে একদিন রিকশার পেছনে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে যেত। এখন সেই মা দিনে কাজের বুয়া, রাতে মা।

সুমন জানে তার মা ঘুমান না। চোখ বন্ধ করে শুধু অপেক্ষা করেন—সেই দিনটার, যেদিন তার ছেলেটা মানুষের মতো মানুষ হবে।

 

সকাল ছয়টা।

ঘুম আসেনি ঠিকই, কিন্তু দরজা খুলে বারান্দায় এসে সুমন ভাবলো—এ কেমন সকাল?

রোদ নেই, বাতাস নেই। শুধু এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। পেছনের বাসার আंटी যে প্রতিদিন রান্নার শব্দে কাঁসরঘণ্টা বাজান, তিনিও আজ চুপ।

 

ঘর থেকে মায়ের কাশি শোনা গেল।

সুমন ছুটে গেল—মা সজোরে কাশছেন, মুখে রক্ত।

 

“মা!”

“কিছু না রে, পুরনো কাশি। তুই পড়িস।”

কিন্তু সুমন জানে—এই কাশি আগে এমন ছিল না।

 

হাসপাতালে যেতে চাইলে মা বললেন,

“তোর ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত আমি কিছু হব না। আল্লাহ আমারে রাখবেন। তুই এখন মন দে, তোর স্বপ্নে।”

কিন্তু সেই সকালে সুমন আর পড়তে পারলো না। তার বুকের ভেতর চাপা যন্ত্রণা আর আতঙ্ক নিয়ে সে তাকিয়ে থাকলো শূন্য দেয়ালে। বইয়ের অক্ষরগুলো যেন ঝাপসা।

 

বিকাল ৪টা।

প্রশিক্ষক ফোন দিয়ে বললেন,

“ভাই, কালকে একবার আসেন, মক টেস্ট হবে। প্রস্তুতি কেমন?”

 

সুমন বললো, “ভালোই, ভাইয়া। কালকে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।”

কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে জানে, সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।

তার ভিতরে এক শূন্যতা—যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবতার একটা ভয়ানক যুদ্ধ চলছে।

 

রাত ১০টা।

মা আজ আর উঠলেন না। সুমন লক্ষ করলো, তার মুখে কোনো রঙ নেই। দৌঁড়ে পাশের বাসার আন্টিকে ডাকতে গেল।

চিকিৎসক এলেন —

“আপনার মার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে, ইনফেকশন কনট্রোল না করলে বিপদ হতে পারে। কালই হাসপাতালে নিতে হবে।”

 

সুমন বোবা হয়ে গেলো।

কাল তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা।

কিন্তু মা?

সে যেনো এক ক্রুশিবন্ধু—একদিকে ভবিষ্যতের দ্বার, আরেকদিকে অতীতের আত্মা, মায়ের মুখ।

 

সকাল ৭টা — পরীক্ষার দিন।

সুমনের মা অসাড়ভাবে বিছানায় শুয়ে আছেন। মুখে মাস্ক।

ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়িয়েছে।

ড্রাইভার বলল, “ব্রাদার, আর দেরি চলবে না, হাসপাতালে নিতে হবে এখনই।”

 

সুমন মাকে শক্ত করে ধরে বলল—

“মা, আমি যাই, আমার পরীক্ষা আছে। ফিরেই তোমাকে নিয়ে যাব, কথা দিচ্ছি।”

 

মায়ের চোখে জল।

সেই চোখেই সে বললেন,

“তুই যা রে, এই দেশটা তোদের মতো ছেলেদের জন্যই অপেক্ষা করে। আল্লাহ আমাকে রাখবেন।”

 

সুমনের বুকের মধ্যে কিছু একটা হুহু করে উঠলো।

সেই সকালটায় রিকশা ছুটছে, চারপাশে ছাত্রদের ভিড়, কিন্তু তার বুকের ভিতর কেবল একটাই প্রশ্ন—

“এ কেমন সকাল?”

এই সকাল কি কেবল শুরু, না কোনো শেষ?

 

সুমন ভর্তি পরীক্ষা দিলো।

হল থেকে বের হয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটে গেল।

যখন পৌছালো, তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে।

রাত নামছে। সুমন মাকে ডাকলো—

কিন্তু মা চুপ।

ডাক্তার এসে বললেন—

“সরি। তিনি এক ঘণ্টা আগে মারা গেছেন।”

 

এক মুহূর্তে সব থেমে গেল।

সেদিন রাত দশটায়, সুমন হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিল।

তার কাঁধে ছিল একটা ব্যাগ, তাতে ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর স্লিপ আর মায়ের পুরনো ওষুধের খালি পাতাগুলো।

 

সে চেয়ে রইলো শূন্যতায়।

তার মনে পড়ছিল মায়ের শেষ কথাটা—

“তুই যা রে, এই দেশটা তোদের মতো ছেলেদের জন্যই অপেক্ষা করে।”

 

দুই মাস পর।

সুমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

ছাত্র হলের এক কোণে সে বসে আজও ভাবে—

সেই সকালে সে মানুষ হয়েছিল না ভেঙে পড়েছিল?

স্বপ্ন বেছে নিয়েছিল, না ভুল করে মাকে ছেড়ে গিয়েছিল?

 

তবে এই প্রশ্ন আজও তার মনে—

“এ কেমন সকাল?”

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park