1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

এভাবেও ফিরে আসা যায়

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৯৫ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

ফাইজা ও মাহির একজন আরেক জনকে প্রচুর ভালোবাসতো। ফাইজা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার, মাহির ইন্টার শেষ করল, রেজাল্ট ও ভালো ছিলো। বলা যায় ফাইজা মাহির দুজনই মেধাবী ছিলো।সম্পর্কের শুরুটাও ছিলো কাকতালীয়। দুই জন দুই ডিস্ট্রিক্ট এর।ডিস্ট্রিক্ট আলাদা হলেও গ্রামগুলো পরিচিত তাই বেশি একটা দূর ছিলোনা। পরিচয় ফেসবুকে তবে চেনা-জানা ছিলো। ফাইজা পরীক্ষা দিলো ইন্টার এর, ঐ দিকে মাহির ও কোচিং শেষ করলো এখন কোনো একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে চান্স পেলেই এডমিশন নিয়ে নিবে। হয়েও গেলো সেই সুযোগ, তবে অনেক দূরে।
একদিন-তো লাগেই ঐখানে পৌঁছাতে। দুই জনেরই মন খারাপ। ফাইজার ইন্টার পরীক্ষার ফলাফল দিলো, সে জি.পি.এ ফাইভ (A+) পেলো। সে’তো মহা খুশি আর মাহির ও। ও হ্যা মাহির ও কিন্তু ইন্টার পরীক্ষায় (A+) পেয়েছিলো। তাই দু’জনই অনেক খুশি।

 

দিন যেতে লাগলো তাদের সম্পর্কটাও অনেক গভীর হতে লাগলো। মাঝে মাঝে মাহির বাড়িতে আসলে দু’জন দেখা করতো। মাহিরের কাছে ফাইজার ছোট ছোট আবদার থাকতো, কখনো চুড়ি কখনো চকোলেট কখনো বা আইসক্রিম। খুব বেশি চাওয়া পাওয়া ছিলোনা তাদের। বিশেষ করে ফাইজা ছিলো অনেক আবেগী।তার কাছে সম্পর্কটার অনেক মূল্য ছিলো। যখনি কোনো কারণে ঝগড়া হতো ফাইজাই প্রথমে কথা বলতো।আর মাহির? সে তো ছেলেরা সচরাচর যেমন হয় তেমনই।মনে হতো যে তার কাছে সম্পর্কটার কোনো মূল্যই নেই, তবে সে যে অভিমান করে তা ফাইজা বুঝতো, সে কারনেই ও বেশি যত্নবান ছিলো এই বিষয়গুলাতে।মাহিরের যখন মন খারাপ হতো ফাইজা তা বুঝতো আর যাই হোক না কেনো ফাইজা এই বিষয়টা খুব ভালো করেই বুঝতো। দীর্ঘ দিন হয়ে গেলো সম্পর্কের।ফাইজা যেনো একদিন কথা না বললেই পাগলের মতো হয়ে যায়। ঝগড়া হলেও খুব কস্ট পেতো ফাইজা। মাহির একটু ব্যাতিক্রমধর্মী ছেলে। এই আবেগ অনুভূতি কম বুঝতো, “ঐ যে ছেলেরা ভাবে যুক্তি দিয়ে আর মেয়েরা আবেগ দিয়ে”।
হঠাৎ করেই মাহির প্রায় দুই দিন নিরব বনে গেলো।ফাইজা তো অনেক চিন্তায় পড়ে গেলো। ফাইজা ম্যাসেজ দিলেও তার যেনো কোনো কাজের তারা অথবা মহা ব্যাস্ত। এড়িয়ে চলে মনে হয়, ফাইজা তো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে কথা বলতে না পারার কষ্টে, ও জে কথা না বলে থাকতে পারে না। ফাইজা ও ভাবলো যা আমিও আর এতো আবেগ দেখাবো না, ভালো তো আমি একা বাসিনা, তাহলে আমি একা কেনো এতো ভেবে কস্ট পাবো। ও ভালো থাকলে আমিও থাকতে পারবে। কিন্তু না আর কতক্ষণ? ফাইজা এবার সত্যিই কষ্ট পাচ্ছে তাই অভিমান ভেঙ্গে আবারো ম্যাসেজ দিলো মাহিরকে। রাতে অল্প কথা হলো, মাহির বললো অনেক পড়ার চাপ, পড়তে হবে। ফাইজাকে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো কি অবস্থা। ব্যাস, কথা শেষ। ফাইজা তো অনেক কস্ট পাচ্ছে তা কি মাহির বুঝে?
না, কারণ ও এখন পড়ার চাপে আছে। পরীক্ষা রাত পোহালেই তাও প্রি টেস্ট, হঠাৎ করেই পরীক্ষার কথা জানলো তাই এতো চাপে পড়ে গেছে।

 

পড়া শেষ করে ফাইজার সাথে কথা বললো। ফাইজা তো বেজায় রেগে আছে। সে আজকে সব রাগ ঝাড়লো যে হয়তো সম্পর্ক টিকবে না হলে শেষ হবে। মাহির এর আগেও অনেকবার ফাইজাকে এই ব্যাপারে বলতে চেয়েছিল কিন্তু ফাইজা কষ্ট পাবে ভেবে আর বলা হয়নি কখনো।তবে মাহিরের ও তো কষ্ট হতো, ও কিভাবে সামাল দিবে, কিভাবে বুঝাবে। ওর ও তো খারাপ লাগে। একদিন হঠাৎ করে মাহির একটা ইসলামিক বই পড়তে ইচ্ছা পোষণ করলো, বইটির নাম ছিলো তখন কোথায় পালাবে।মাহির এক পর্যায়ে গিয়ে নিজের প্রতি তার ঘৃনা জম্মালো যে কি করছি! সত্যিই তো কাল হিসাব- নিকাশের দিনে কোথায় লুকাবো নিজেকে ? সে তার সমস্ত জীবনের জন্য লজ্জিত।চরম লজ্জিত! সে এই বইটি পড়ে নিজেকে শুধরাবার কথা চিন্তা করলো, আর ভাবলো আস্তে আস্তে ফাইজাকে বুঝিয়ে ফিরে আসবে এই হারাম সম্পর্ক থেকে৷ যেই ভাবনা সেই কাজ!!মাহির তাই একটু নিরব হয়ে গেলো, ফাইজার সাথে কথা বলার থেকে নিজেকে কিছুটা বিরত রাখার চেষ্টা করলো।

মাহির ফাইজা কে বললো চলো আমরা এই সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটাই।অনেক তো হলো, ভুলে লিপ্ত ছিলাম এতো দিন, আল্লাহ মাফ করুক। ফাইজা বললো মানে? মানে আমি এই হারাম সম্পর্কটার কথা বলছি, আর কতো? তুমিও বুঝো এটা যে হারাম, এতো দিন ভাবিনি কতো শত গুনাহ কামাই করতেছি। এবার তাহলে ফিরা যাক রবের পথে। …..মাহির বললো আর কতো এই হারাম সম্পর্কে?

আমি অনুতপ্ত! ফাইজা চুপ, একদম নিরব বনে গেলো। তারপর বললো আমরা খারাপ কিছু না করলেই’তো হয়। সুন্দর ভাবে থাকবো, মাহির, যেখানে ইসলামে নন মাহরাম ছেলেমেয়ে কথা বলা নিষেধ সেখানে প্রেম ভালোবাসাতো বিলাসিতা।
হ্যা, সত্যিইতো! তবে এখন কেনো ? ফাইজা বললো। এতোদূর এসে এখন সব শেষ? কিভাবে পাড়বো কোনো সমাধান আঁছে? মাহির, আমার জানা নেই এর থেকে মুক্তির উপায় কি। তবে আর আগাতে চাইনা। ভেবে দেখো তো যে সম্পর্কটা হারাম দিয়ে শুরু হবে সেখানে জীবনে শান্তি কই? শুধুই অন্ধকারে আছি। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা না করলে শেষ। দুনিয়া ও শেষ আখিরাত ও শেষ। ফাইজা ও এবার সত্যিই অনুতপ্ত! ফাইজা ও জানে এটা যে হারাম কিন্তু কষ্ট হবে বলে ও কখনো ফিরতে চাইতোনা। তবে কষ্ট হলেও এটাই’তো সত্য। যেখানে আল্লাহ তায়ালা বিয়ের আগে মিলামেশাকে হারাম করেছে সেখানে আমরা কতো পাপাচারে লিপ্ত। তবে এবার মাহিরের কথায় ফাইজা ও একমত। তাদের মন্তব্য আমরা আল্লাহর কাছে একজন আরেকজনকে চাইবো, আল্লাহ যদি ভাগ্যে রাখে তবে আমরা এক হবো ইন শা আল্লাহ। তবে এই হারাম সম্পর্কে আর থাকতে চাইনা। সত্যিই তো!! “রবের পথে ফিরার জন্য খুব ঝমকালো আয়োজন এর দরকার হয়না”।

আর কতো থাকবো আঁধারে ডুবে? আঁধারে কাটালে জীবন মুখে কি হাসি ফুটবে অপেক্ষার শেষ প্রহরে?
ফাইজা ও মাহির এই বিষয়টাকে মানতে কষ্ট হলেও নিজেদের এতো দিনের সম্পর্কটা কে রবের জন্য শেষ করে দিলো।কারণ তারা হারামে আর থাকতে চায় না, যেখানে রবের ভালোবাসা নেই, পরতে পরতে যেখানে গুনাহ আর গুনাহ সেখানে কি কোনোদিন রবের রহমত পৌছাবে? নিশ্চয়ই না! “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার কাছে মন থেকে কিছু চাইলে নাকি তিনি কখনো ফিরিয়ে দেন না”।

তাই এই অনুশোচনার জন্য হলেও, এই পথ ছেড়ে ফিরে আসার জন্য হলেও যেনো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এই দুটি মনকে মিলিয়ে দেয়। সম্পর্কটা যদি হয় হালাল, অপেক্ষাটা যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তবে,,,
অপেক্ষার শেষটা হবে আনিন্দময়, সুখময় ও প্রফুল্ল।

আর এভাবেই শেষ হলো একটি হারাম সম্পর্ক। রবের প্রতি অনুশোচনায় দুটি আত্না অননুতপ্ত। ফিরে আসলো ফাইজা ও মাহির অনুশোচনায় পরে রবের পথে। তবে এই ফিরে আসাটা কিন্তু এতো সহজ ছিলোনা,
নফসের বিরুদ্ধে লড়াই করবার শক্তি সবার থাকেনা। এটা অনেক বড় একটা যুদ্ধ, নিজের আত্নার সাথে আত্মার যুদ্ধ, নফসের সাথে যুদ্ধ।

এই অনুশোচনার গল্পে আমি সত্যিই অবাক!! এভাবেও ফিরে আসা যায়? …… দিনশেষে এমন চিন্তা – ধারার মানুষদের জন্য আল্লাহ নিশ্চয়ই ভালো কিছু রেখেছে। এই অনুশোচনার জন্য হলেও, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এই দুটি আ্ত্নাকে মিলিয়ে দিক অপেক্ষার শেষ প্রহরে। “অপেক্ষার শেষটা হোক আল্লাহর ফয়সালা নির্ধারণ এর উপর। প্রশান্তি পাক প্রতিটি কলুসিত অন্তর। এই হোক প্রতিটা অন্তরের চাওয়া, ফিরে আসুক সবাই রবের পথে। এই হোক প্রতিটি মানুষের রবের পথে ফিরে আসার গল্প,এভাবেও ফিরে আসা যায়।

হ্যা! এভাবেও ফিরে যায়।

 

খাদিজা আক্তার

চান্দিনা, কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

 

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park