উত্তরবঙ্গ দেশের প্রাচীন জনপদ। উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী বিভাগ ও রংপুর বিভাগকে একত্রে বলা হয় উত্তরবঙ্গ। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ বসবাস করে রংপুরে। দারিদ্র্যতা, ক্ষুধা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনসঙ্গী। একজন গুরুজন আমার বাসা দিনাজপুর শুনেই ডেকে উঠলেন কি বাহে মঙ্গা এলাকার লোক কেমন আছেন? তিনি কিন্তু অন্য বিভাগের মানুষ। অর্থাৎ মঙ্গা শব্দটি পরিচিত শুধু মাত্র এই বিভাগের মানুষের জন্য। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের মধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট এই পাচটি জেলা সবথেকে দরিদ্র।
উত্তরবঙ্গের মূল অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। সারা বছর বিভিন্ন কৃষি ফসল উৎপন্ন হয়। তার মধ্যে অন্যতম ফসল ধান, আলু, তামাক ও সোনালী আাশ পাট ইত্যাদি উৎপাদনে রংপুর শীর্ষ। দেশের চাহিদার বেশিরভাগ কৃষিপণ্য উৎপাদন করে মফিজখ্যাত এই সরল মানুষ গুলো। তবে এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের প্রতিদান তারা কখনোই তাদের প্রাপ্যটা বুঝে পায়নি। প্রকৃতিও যেন মানুষের মতোই কঠোররুপ প্রকাশ করে। কখনো অতিবৃষ্টির কারণে ঘরবাড়ি, ক্ষেতখামার, ফসলি জমি পানিতে প্লাবিত হয় বা অনাবৃষ্টির কারণে ফসল মারা যায়। ফলে বাড়িঘর, ফসল, গবাদি পশু হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে এখানকার স্থানীয় মানুষজন। আবার খরার সময় তিস্তা নদীর পানি ব্যাবস্হার কারণে সঠিক সময়ে কখনোই পানি পায় না এই এলাকার কৃষকেরা।
উজানের পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে হু হু করে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওইসব অঞ্চল। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষগুলো অনাহারে বসবাস করছেন, কেউ তাদের দুঃখ দেখতে পায় না।
গত মাসের বন্যায় প্লাবিত কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ইত্যাদি শহরগুলোতে ট্রাক বোঝাই করে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে গেছে দেশের আপামর জনতা। উত্তরবঙ্গের মানুষেরাও পিছিয়ে ছিলোনা তারাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য নিয়ে পৌঁছে গেছিলো বন্যার্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু সেই আজ তারাই দুর্যোগে কবলিত হওয়ায় তাদের কাছে সেরকম কোনো সাহায্য পৌছায় না। তারা বরাবরের মতোই মিডিয়া কভারেজ পায় না, সামাজিক মাধ্যমে তাদের নিয়ে কোনো মাতামাতি নেই কারণ সবাই জানে ও মানে যে এটা রুটিনমাফিক বন্যা।তাই তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই।
দক্ষিণের বন্যা মানবতাকে জাগ্রত করলেও উত্তরের বন্যা মানবতাকে স্পর্শ করতে পারে না। ইহা কি মানবতার বৈষম্য নহে?যেহেতু উত্তরবঙ্গের সবকিছু সবার আড়ালেই থাকে তাই উত্তরবঙ্গসহ দেশের সকল জেলার মানুষেরা এগিয়ে আসুন রংপুর কুড়িগ্রাম সহ বাকী জায়গার বন্যাকবলিত লোকজনকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করুন। নুরলদিনের কণ্ঠের সাথে মিলিয়ে বলতে চাই ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’।
আল মাসুম হোসেন
শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
নিজ জেলা: দিনাজপুর।