1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা

  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২০৭ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

শিক্ষা হলো জাতির মেরুদন্ড, আর সেই মেরুদন্ড পরিপক্ব করার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক।

একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মা’র যেমন অবদান থাকে, তেমন শিক্ষকেরও থাকে বৃহৎ ভূমিকা। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা তাই অনন্য উচ্চতায়। ইসলামেও শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনন্য সম্মানে ভূষিত করেছে ইসলাম।

ফলে মুসলিম সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি। শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে, শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। বলতে গেলে এর বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।

 

বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (স.) জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে সাহাবাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যারা উপস্থিত তারা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট এসব জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিও”। মহনবী (স.) এর এ আদেশ পালনার্থে মক্কা ও মদীনার পবিত্র জমিন থেকে হাজার হাজার সাহাবী শিক্ষকতার মহান পেশাকে ব্রত করে দেশ ও দেশান্তরে বেড়িয়ে পড়েন। যারা আর মক্কা-মদীনায় ফিরে আসেন নি।

রাসূলের প্রখ্যাত সাহাবী ও অন্যতম ওহী লেখক হযরত যায়েদ বিন সাবিত (রা.) একদা এক জানাজা নামাজে গমন করে নামাজঅন্তে প্রস্থানকালে উঠের পিঠে চড়ে বসার সময় রেকাবের (উঠের পিঠে উঠার বাহন) উপর পা দিয়ে উঠতে ছিলেন। এমন সময় আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) এসে তার পায়ের নিচে দু’হাতের তালু বিছিয়ে দেন। যায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি নবী (সা.) এর চাচাতো ভাই ও আহলে বাইতের লোক। জবাবে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) বললেন, শিক্ষকদের এভাবে সম্মান করার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে যে, ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) তার জীবদ্দশায় শিক্ষকের বাড়ীর দিকে পা বাড়িয়ে দেননি, যদিও শিক্ষকের বাড়ি তার বাড়ি থেকে অনেক দূরত্বের ব্যবধান ছিলো।

 

ইতিহাসে দেখা যায়, আব্বাসীয়দের উল্লেখ্যযোগ্য খলিফা হারুন-অর-রশিদের দুই ছেলে আল-আমিন ও আল-মামুন তাদের শিক্ষকের পায়ে জুতা পড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েন। পরে দুই ভাই সমোঝতা করে দু’পায়ে দু’জন জুতা পড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থা দেখে তাঁদের পিতা শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, কোন ব্যক্তির মর্যাদা বেশি? শিক্ষক ভীতস্বরে বললেন, এ যুগের খলিফা হারুন-অর-রশিদের মর্যাদা বেশি। এ কথা শুনে খলিফা বললেন, আপনার জবাব সঠিক নয়। যাঁর পায়ে জুতা পড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে খলিফার সন্তানেরা প্রতিযোগিতা করে, নিশ্চয়ই তাঁর মর্যাদা ই বেশি।

মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে উদ্দেশ্য করে কবি কাজী নেওয়াজের বিখ্যাত কবিতার ছন্দ কে না জানে! সম্রাটের পুত্র শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিয়েছিলো, সম্রাট তা স্বচোখে দেখে শিক্ষককে ডেকে বললেন, শিষ্যকে কি শিখালেন? তার তো শুধু পায়ে পানি ঢেলে দেয়ার কথা নয়, স্বহস্তে পা ধুয়ে দেয়ার কথা। একথা শুনে শিক্ষক উৎফুল্লচিত্তে বলে উঠলেন, “আজ হতে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির, সত্যই তুমি মহান, উদার বাদশা আলমগীর”। এভাবে কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার “আমার পণ” নামক বিখ্যাত কবিতা “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি” আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে”।

 

খেলাফতের যুগেই ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে তখন শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও দ্বীনি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করতেন।

আর তাঁরা যেহেতু নিজেদের জীবিকার পেছনে ব্যতিব্যস্ত সময় পার না করে, শান্ত-সৌম্য মস্তিষ্কে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাই তৎকালীন খেলাফত ব্যবস্থা বা সরকার তাদের সম্মানে অভিষিক্ত করেছিলেন। তাঁদের জ্ঞান বিতরণের এ মহৎ কাজকে সম্মান জানিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনের যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করেছিলেন। যেন জীবনের তাগিদে শিক্ষকদের ভিন্ন কোনো পথে পা বাড়াতে না হয়। হযরত উমর (রা.) ও হযরত উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁরা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তাঁর বিখ্যাত ‘সিরাতুল উমরাইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো।

 

উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-ও তাঁর যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেছ ইবনে ইউমজিদ আশারি (রহ.)-কে ওই অঞ্চলে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। বিনিময়ে তাঁদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। অবশ্য ইয়াজিদ (রহ.) তা গ্রহণ করলেও হারেছ (রহ.) তা গ্রহণ করেননি।

১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে ৫ অক্টোবর দিনটিকে ” বিশ্ব শিক্ষক দিবস ” হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য দিবসটি নিঃসন্দেহে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত দেশীয় প্রেক্ষাপটে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সাম্প্রতিককালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সবকার পতনের পর কতিপয় শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তা ও শিক্ষক অপমানের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে, এতে করে গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করে তোলে। এহেন পরিস্থিতি হতে শিক্ষকদের সম্মানের আসনে আসীন করতে হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভাব ও মর্যাদা কেন্দ্রিক জীবন গঠনমূলক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ সন্নিবেশিত করা অতীব প্রয়োজন। শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এ নীতিকথার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার সব স্তরে শিক্ষকের ন্যায্য অধিকারগুলো সুরক্ষা করা ও জীবন যাত্রার মান উন্নত করণে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা সময়ের অপরিহার্য দাবী। সরকারি ও বেসরকারিভাবে গৃহীত সক্রিয় উদ্যোগ জাতির এ প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে বলে দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। মহান রাব্বুল আলামীন শিক্ষকদের উপযুক্ত মার্যাদার আসীনে রেখে প্রকৃত শিক্ষিত জাতি গঠনে আমাদের সহায় হউন (আমিন)।

 

এসকে এম হেলাল উদ্দিন

কবি ও সাহিত্য সংগঠক

চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park