1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার: বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৮০ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

এস ইসলাম সুজন 

 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আমাদের জাতিসত্তার এক অপরিহার্য অংশ। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সাহিত্যধারা আজও প্রাণবন্ত ও প্রাসঙ্গিক, যার ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন। প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে, যেখানে মানুষের মনোযোগ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহে, সেখানে সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে সাহিত্যচর্চাকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে কিছু নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। এদের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে “ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার” নামক এক সাহিত্যিক বন্ধন—যা আজ বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটি সক্রিয় ও সম্মানজনক নাম হয়ে উঠেছে।

 

ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার এটি একটি আবেগ, একটি চেতনা, একটি পরিবার—যেখানে সাহিত্যপ্রেমীরা খুঁজে পান একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া কিংবা যেকোনো সাহিত্যধর্মী রচনার মাধ্যমে একজন লেখক আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়, পায় মনের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা। নবীন হোক বা প্রবীণ—সবার সৃষ্টিশীলতাকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে লালন ও উৎসাহিত করে এই পরিবার।

 

ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর অন্তর্জাতিক (অনলাইন) কার্যক্রমের বিস্তৃতি। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংগঠনের উপস্থিতি যেমন দৃশ্যমান, তেমনি তা প্রাসঙ্গিক এবং সুপরিকল্পিত। এখানে নিয়মিত আয়োজিত হয় অনলাইন সাহিত্য আসর, যেখানে লেখকরা সরাসরি পাঠক ও অন্যান্য সাহিত্যিকদের মুখোমুখি হতে পারেন। এ ধরনের সাহিত্যসভা শুধুই লেখা পাঠের সুযোগ নয়, বরং তা হয়ে ওঠে একটি মতবিনিময়ের ক্ষেত্র, যেখানে সাহিত্যচর্চা হয় সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে।

 

এছাড়া এই সংগঠন মাসিক সাহিত্য সংখ্যা, বিশেষ সাহিত্য সংখ্যা এবং উৎসব-ভিত্তিক সাহিত্য সংকলনেরও আয়োজন করে থাকে, যা বাংলা সাহিত্যের প্রচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সংখ্যাগুলোতে স্থান পায় বিভিন্ন ধারার লেখা, যা পাঠকদের চিন্তাভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করে। প্রতিটি সংখ্যা একটি থিমভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তৈরি হয়, ফলে পাঠক এক নির্দিষ্ট আবহে ভিন্নধর্মী লেখাগুলোর স্বাদ নিতে পারেন।

 

উল্লেখযোগ্যভাবে, ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমেও নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করছে। কবিতা লেখা, গল্প লেখা, আবৃত্তি, সাহিত্য বিশ্লেষণ—এইসব প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লেখকদের মাঝে যেমন উৎসাহ তৈরি হচ্ছে, তেমনি একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশও গড়ে উঠছে। এমন আয়োজন একজন নবীন লেখককে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করে এবং সাহিত্যচর্চায় নিয়মিত থাকতে প্রেরণা জোগায়।

 

ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার লেখক ও পাঠকের মধ্যকার দুরত্ব কমিয়ে একটি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি করেছে। এখানে একজন লেখক শুধুই তার লেখার জন্য প্রশংসিত হন না, বরং তাকে গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে আরও উন্নত লেখক হয়ে উঠতে সাহায্য করা হয়। এই মনোভাবই এই সংগঠনকে অন্য অনেক সাহিত্য প্ল্যাটফর্ম থেকে পৃথক করেছে। শুধু লেখক পরিচয় দিয়ে নয়, মানবিকতা ও আন্তরিকতার বন্ধনে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো—এই সংগঠনের একটি বড় শক্তি।

 

লেখকদের সাহিত্যকর্ম বই আকারে প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। যৌথ কাব্যগ্রন্থ, গল্প সংকলন, একক গ্রন্থ কিংবা সাহিত্যভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ—বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনার আয়োজন করে ইচ্ছাশক্তি পরিবার। এতে নবীন লেখকদের জন্য যেমন সুযোগ তৈরি হয়, তেমনি প্রবীণ লেখকরাও একটি নির্ভরযোগ্য মঞ্চ পান তাদের লেখনী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এই প্রকাশনা কার্যক্রম বাংলা বইয়ের জগতে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।

 

এই সংগঠনের প্রাঞ্জল নেতৃত্ব, সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো এবং স্বচ্ছ নীতিমালার ফলে এখানে সাহিত্যিকরা নির্ভার ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। পরিবারের প্রতিটি সদস্যই যেন নিজেকে একজন গর্বিত সাহিত্যিক বলে ভাবতে পারেন। এটি কেবল একটি সাহিত্যগোষ্ঠী নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি আত্মিক বন্ধনের কেন্দ্রস্থল—যেখানে মানুষ কেবল কবিতা লেখে না, হৃদয়ের গল্প বলে।

 

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের জন্য এই সংগঠন একটি মিলনমেলা হয়ে উঠেছে। প্রবাসে বসবাসকারী সাহিত্যপ্রেমীরাও যুক্ত হচ্ছেন এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে, এবং তাদের রচনাও গ্রহণ করছে এই পরিবার। ফলে বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণের পথেও ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে। এটি একধরনের সাহিত্য-সেতুবন্ধন, যা দূরত্ব ও ভৌগোলিক সীমারেখা ভেঙে সাহিত্যিক হৃদয়গুলোকে একত্র করছে।

 

বাংলা সাহিত্যের অতীত ইতিহাস যেমন গৌরবময়, তেমনি বর্তমান সময়েও সাহিত্যচর্চার প্রাণবন্ত ধারা বইছে বিভিন্ন মাধ্যমে। সেই ধারারই একটি নবীন অথচ বলিষ্ঠ ধারা হলো “ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার”। এই সংগঠনের প্রতি যারা আস্থা রেখেছেন, যারা নিরলস কাজ করে চলেছেন, যারা নিজেদের সময় ও শ্রম দিয়ে সাহিত্য চর্চার এই পবিত্র জায়গাটিকে উর্বর করে তুলেছেন—তাঁদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।

 

পরিশেষে বলা যায়, “ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার” আজ শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি আন্দোলন—বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চাকে ঘিরে গড়ে ওঠা এক অন্তরঙ্গ সাহিত্য-সম্প্রদায়। এর কার্যক্রম, এর উদ্দেশ্য এবং এর আন্তরিকতা ভবিষ্যতে বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সাহিত্যই যে মানুষের মনের মুক্তি, আত্মার আত্মপ্রকাশ এবং জাতিসত্তার জাগরণ—এই চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার এগিয়ে যাক আরও বহুদূর। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রযাত্রায় এটি হয়ে উঠুক এক দীপ্তিমান বাতিঘর।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park