এক ছিল ছোট্ট এক গ্রাম, নাম তার আলোরপুর। গ্রামের মানুষগুলো ছিল একসময় খুবই সদাচরণ ও শান্তিপ্রিয়। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রযুক্তির অপব্যবহার, মিথ্যা, হিংসা আর আত্মকেন্দ্রিকতা গ্রামটিকে ঢেকে দেয় এক ধোঁয়াটে কালো কুয়াশায়। বড়রা ব্যস্ত ছিল নিজেদের স্বার্থে আর ছোটরা হারিয়ে যাচ্ছিল ইউটিউব, গেমস আর কনটেন্টের জগতে।
এই গ্রামের এক কোণে থাকত ৮ বছরের এক ছেলে—আলোক। নামের মতোই আলোকিত, তবে সে ছিল অন্যদের থেকে আলাদা। তার স্বপ্ন ছিল একটা সুন্দর, সত্যভিত্তিক সমাজ গড়া। একদিন স্বপ্নে সে দেখতে পেল এক রঙধনুর পাখি। সে বলল, “আমি সত্য-সুন্দর নৈতিকতার বাহক, তোমায় শেখাব কীভাবে বদলে দেবে তোমার চারপাশ।”
সকাল হতেই আলোক ঘুম থেকে উঠে ভাবল—এ স্বপ্ন নয়, এ তো দাওয়াত! শুরু হলো এক নীরব বিপ্লব। সে স্কুলে গিয়ে গল্প বলে, গল্পে আসে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সততার কথা, আসে মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব, আসে পরিবেশ রক্ষার শিক্ষা।
শিশুরা মুগ্ধ হয়ে শোনে। একদিন সে স্কুলে “সততার হাট” বসায়। সেখানে কেউ দুধ, কেউ চকলেট, কেউ নিজের বানানো খেলনা এনে বলে, “যার প্রয়োজন সে নাও, বিনিময় চাই না।” শিশুরা দেখে—ভালো কাজ আনন্দের, আর দান মানেই হার নয়, বরং জয়।
কিন্তু সমাজ বদলায় সহজে? কিছু বড়দের চোখে পড়ে এই শিশুদের বিপ্লব। তারা ভয় পায়—যদি শিশুরা ভালো হয়ে যায়, তবে তাদের মিথ্যা চলে না! একদিন একজন ধনী ব্যক্তি এসে আলোককে ভয় দেখায়, “তুই যদি থামিস না, তোকে তোর বাবার দোকান থেকে তাড়িয়ে দেব!”
আলোক কেঁদে ফেলে। কিন্তু সে রাতে আবার আসে রঙধনুর পাখি। বলে, “কখনও সত্য বলার ভয় পেয়ো না। তোমার নীরব বিপ্লব একদিন আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে।”
আলোক পরদিন স্কুলে গিয়ে বলে: “আমি ভয় পেয়েছি, কিন্তু থামিনি। কারণ রাসূল (সা.) বলতেন, ‘সত্য বলো ولو کان مرّا, যদি তা তিতা হয় তবুও।’”
এই কথা শুনে এক শিক্ষক চোখ মুছলেন। তিনি বললেন, “আজ আমি এ শিশুর কাছেই শিখলাম।”
ধীরে ধীরে পুরো গ্রাম জেগে উঠল। বড়রা শিশুদের দেখল নতুন চোখে। খেলাধুলা, কবিতা, আবৃত্তি, ইসলামিক সাংস্কৃতিক আয়োজন হতে লাগল নিয়মিত। রঙধনুর পাখি যেন সবার মনে বাসা বাঁধল।
আজ আলোরপুর শিশুদের আলোয় আলোকিত। আলোক এখন বলে,
“আমরা শিশুরা, আমরা স্বপ্ন দেখি—সুস্থ সমাজ গড়ার। আমরা বাঁচি খেলায়, কল্পনায়, আর ভালোবাসায়। আমরা বদলাব এক এক করে, কিন্তু বদলাব ঠিকই।”