1. admin@ichchashakti.com : admin :
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

আলেমরা কেন সমাজে অবহেলিত? এবং কিভাবে এর থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যাবে।

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪৮ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

বৈষম্য নিরসনে বৈষম্য

বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মীয় মূল্যবোধে শাসিত দেশে যেখানে সমাজের নৈতিকতা, সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা নির্ধারণে আলেমদের অবদান অপরিসীম, সেখানে তাঁদের প্রতি বৈষম্য এবং অবমূল্যায়ন শুধু একটি অবহেলা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন। আলেমরা সমাজের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, কিন্তু কেন তারা বৈষম্যের শিকার হন? এবং কিভাবে এই বৈষম্য থেকে নিস্কৃতি লাভ করা সম্ভব? এসব প্রশ্নের উত্তর সমাজের গভীরে নিহিত, যেখানে একদিকে আধুনিকতার তীব্র প্রবাহ এবং অন্যদিকে ধর্মীয় চিন্তার প্রতি অবজ্ঞা এক অদৃশ্য যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে।

 

বৈষম্যের উৎস এবং কারণ

এতদিন ধরে আলেমদের বৈষম্যের শিকারে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, সমাজের একটি অংশ তাদেরকে শুধুমাত্র ধর্মীয় শাস্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, আলেমরা যেটুকু ভূমিকা পালন করে থাকেন, তা শুধুমাত্র একটি আধ্যাত্মিক ‘জ্ঞানদান’ পদ্ধতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যেখানে সমাজের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থা তৈরিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান স্বীকৃত হয় না।

 

আধুনিকতা এবং প্রযুক্তির যে প্রবাহ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত, সেখানে আলেমদের ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রায়শই গাঢ় অন্ধবিশ্বাস এবং পুরনো মনোভাবের সাথে একত্রিত করা হয়। সমাজের উচ্চ শিক্ষিত শ্রেণী, যাদের কাছে “বৈজ্ঞানিক চিন্তা” ও “যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি” প্রধান, তারা প্রায়শই আলেমদের চিন্তাকে সংকীর্ণ, অপ্রাসঙ্গিক এবং গতানুগতিক মনে করে। এই ধারণা থেকে তাঁদের ধর্মীয় শিক্ষা বা কর্মকে অনেক সময় সমাজের ‘অপ্রয়োজনীয়’ বা ‘প্রাচীন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা তাঁদের মর্যাদার ওপর চরম আঘাত হানে।

 

এছাড়া, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আলেমদের প্রতি যে অবহেলা চলছে, তার পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের রাজনীতি এবং সামাজিক কাঠামোর স্বার্থ। সরকারী বা বেসরকারী ক্ষেত্রগুলোতে আলেমদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ নেই, তাদের গবেষণার জন্য নেই কোন স্বীকৃতি বা উৎসাহ, এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অতি সাধারণ পদ্ধতিতে তাঁদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন হয়। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক সেবার ক্ষেত্রেও তাঁদের অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যা বৈষম্যকে আরও প্রগাঢ় করে তোলে।

 

নিস্কৃতির পথ এবং সুদূরপ্রসারী সমাধান

এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আলেমদের ভূমিকা শুধুমাত্র ধর্মীয় কৌশল ও শাস্ত্রের ব্যাখ্যা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা সামাজিক নৈতিকতা, মানবাধিকার, এবং জাতীয় উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাদের চিন্তা-চেতনা, মেধা এবং দক্ষতা সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত হতে পারে, যদি সমাজ তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করে।

 

তাদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হলো, তাদের চিন্তাভাবনাকে বা দৃষ্টিভঙ্গিকে “সংকীর্ণ” বা “পৃথক” মনে করা, অথচ তাঁদের জ্ঞান হল সামাজিক নৈতিকতার, সংস্কৃতির, এবং মানবিক মূল্যবোধের মৌলিক স্তম্ভ। আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক নয়, বরং তা সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক সমাজের পূর্ণাঙ্গ কাঠামো নির্মাণের জন্য অপরিহার্য।

 

তাদের কাছ থেকে সরকার, সমাজ এবং জনগণ যে অনুকূল পরিবর্তন প্রত্যাশা করে, তা সাধন সম্ভব যখন আলেমদের উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক শিক্ষা এবং সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি খাতে আলেমদের জন্য চাকরি ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তারা সমাজের প্রগতির জন্য কাজ করতে পারেন, সেটাও অপরিহার্য। এই পদ্ধতিগুলি শুধুমাত্র বৈষম্য দূর করবে না, বরং সমাজে একটি সুষ্ঠু, ন্যায়সঙ্গত এবং সাম্যের পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

 

আলেমদের অবদান

আলেমদের অবদান শুধুমাত্র ধর্মীয় উপদেশ বা শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাঁদের চিন্তা-ভাবনা, দর্শন ও কার্যক্রম সমাজের প্রতিটি স্তরে একটি নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সেতু তৈরি করে। তারা জনগণের মধ্যে শান্তি, সমঝোতা এবং সহনশীলতার ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের কাজের মধ্যে একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থাকে যা সাধারণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য নৈতিক শক্তি যোগায়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আলেমরা ন্যায়পরায়ণতা, মানবাধিকার এবং সমাজের সুষম উন্নয়নের জন্য অমূল্য অবদান রেখেছেন।

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও আলেমদের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। তারা কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুপ্রেরণাই দেননি, বরং তাঁরা জাতির ঐক্য এবং স্বাধীনতার পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে, ধর্মীয় তাত্ত্বিক জ্ঞান ছিল একটি মাধ্যম—মানবতা, ন্যায় এবং স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা।

 

পরিশেষ বলতে চাই, বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের সমাজের চিন্তাধারা এবং শিষ্টাচার পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজন। আলেমরা যেন তাদের সঠিক মর্যাদা ও সম্মান পান, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তাঁদের অবদান কেবল ধর্মীয় শাস্ত্রের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না থেকে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং, ঐতিহ্যগত ধ্যান-ধারণা পরিবর্তন করে, সমাজের প্রতিটি স্তরে আলেমদের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের সঠিক সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা একটি সাম্যবাদী এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

 

—- মোহাম্মদ হাসিবুল হক

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park