১২ বছরের ছেলে ট্রেনের টিকিট না কেটে টিটিকে বোকা বানিয়ে নেমে চলে আসলো বাসার সবাই উৎসাহ দিয়ে বলতেছে ছেলেটা কতই না চালাক। কেন তাকে চোর বললে কি সমস্যা ছিল? সে কি চোর নয়?সে কি আসলেই চালাক?
১৬ বছরের ছেলে, একটা মেয়ের সাথে কিছুদিন কথা বলে, তার সাথে প্রেম আলাপ করে,তারপর ৫০০০ টাকা নিয়ে তাকে ব্লক করে দিল, বন্ধুবান্ধব উৎসাহ দিয়ে বলতেছে, দোস্ত তুই তো সেই চালাক! একটা মেয়েকে বোকা বানিয়ে টাকা নিলি। কেন তাকে ধোকাবাজ বললে কি সমস্যা ছিল? সেকি ধোকাবাজ নয়?
১০ বছরের বাচ্চা দোকানে খাবার নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে আসলো, বাসার সবাই বলতেছে কিরে তুই টাকা দিস নাই? বললো না। সবাই উৎসাহ দিয়ে বলতেছে দেখো ছেলেটা কতই না চালাক, দোকানদারকে বোকা বানিয়ে চলে আসলো, কেন তাকে চোর বলেন, সে কি আসলেই চালাক? নাকি চোর?
আঠারো বছরের ছেলে জুয়া খেলতেছে, বড় বড় লোকদের সাথে, তার বাবা দাদার বয়সের লোকদের সাথে, সবাইকে হারিয়ে যখন টাকা নিয়ে বাসায় আসল সবাই খুশি হয়ে বলল, দেখ দেখ ছেলেটা কত চালাক বড় বড় লোকদেরকে হারিয়ে টাকা নিয়ে আসলো, কেন সে কি আসলেই চালাক? তাকে জুয়ারু বলা যেত না?
দশ বছরের ছেলে রাস্তায় একটা লোকের হাত থেকে একটা মানিব্যাগ ছিনতাই করে দৌড় দিল লোকটি তাকে ধরতে পারল না সমাজের লোক তাকে বলতেছে দেখো ছেলেটা কত চালাক তাকে ধরতেই পারলো না আসলেই কি সে চালাক? নাকি ছিনতাইকারী?
ইত্যাদি ইত্যাদি এমন বহু কাজ আমাদের সামনে আমাদের সমাজে ঘটে চলতেছে আমরা সেই সমস্ত কাজগুলোকে চালাকি কাজ মনে করতেছি এবং যে করতেছে তাকেও চালাক মনে করতেছি আসলেই কি কাজগুলো চালাকির কাজ? যে করতেছে সে কি চালাক?
ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চালাক কাকে বলে? কুরআনের ভাষায় চালাক কাকে বলা হয়? কুরআনের দৃষ্টিতে চালাক হল সেই ব্যক্তি,
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর নির্দেশ মেনে চলে, দুনিয়াকে অস্থায়ী মনে করে এবং আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়।”এটা কি আমরা জানি?হাদিসের ভাষায় চালাক কাকে বলে? হাদিসের ভাষায় চালাকের সংজ্ঞা হলো :-
قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ ﷺ:
“الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، وَتَمَنَّى عَلَى اللّٰهِ.”
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“চালাক হল সেই ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে (প্রবৃত্তিকে) নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম (বোকা) সে, যে নিজের নফসের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এবং (তবুও) আল্লাহর কাছ থেকে আশা করে (বিনা আমলে ক্ষমা চায়)।”
সুনান তিরমিযি: হাদিস ২৪৫৯, হাসান হাদিস
অথবা ইসলামের শরীয়ত অনুযায়ী চালাক তাদেরকে বলা দরকার ছিল যে দুনিয়া বিমুখ হয়ে চলাফেরা করে দুনিয়ার সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই এমন ভাবে চলাফেরা করেন কেননা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
“كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ”
“তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থেকো যেন তুমি একজন পথিক অথবা একজন ভিনদেশি।”
সহিহ বুখারি: ৬৪১৬
আরো বলেন
“مَنِ اسْتَعَدَّ لِلْمَوْتِ فَهُوَ الْكَيِّسُ”
“যে ব্যক্তি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়, সে-ই চালাক।”
বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ১০২৫৫
এবং আল্লাহর ওলীদের মতে চালাক বলা হয় কাকে? যেমন > হযরত হাসান বসরী (রহ.) বলেন:
“মানুষের সবচেয়ে চালাক সেই, যে নিজের নফসকে চিনে ফেলেছে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
কোরআন,হাদিস,এবং আকাবীরদের কথা অনুযায়ী আমারা কি আসলেই চালাক? আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন! আমরা কি কাজগুলো ঠিক করতেছি?