প্রতিবেদকঃআব্দুল মুহিত
লিখেছেন
বিশিষ্ট লেখকও গবেষক,
মাওলানা মুহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ খাঁন
সহকারী আরবি শিক্ষক,
দারুল আজহার মডেল মাদ্রাসা, উপশহর সিলেট।
১. #আত্মহত্যা_করার_হুকুম?
আত্মহত্যা করা হারাম যা কবিরা। আল্লাহ তাআলা আত্মহত্যাকে নিষেধ তথা হারাম করে দিয়েছেন। যেমন এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন -
وَلَا تَقْتُلُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ
অর্থাৎ তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। (সুরা নিসা : ২৯) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে -
معناه في الظاهر النهي عن قتل المؤمن نفسه في حال غضب أو ضجر
এই আয়াতের সুস্পষ্ট অর্থ হলো- রাগ বা বিরক্তি অবস্থায় একজন মুমিনের জন্য আত্মহত্যা করা নিষিদ্ধ (হারাম)। (তাফসিরে মুনির ৫\৩২)
২. #আত্মহত্যাকারীর_শাস্তি_কী?
আত্মহত্যাকারীকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের ভিতর শাস্তি দিবেন। যারা দুনিয়াতে আত্মহত্যা করবে তারা জাহান্নামেও বার বার আত্মহত্যা করবে। ব্যাক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় যে বস্তু দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যা করে মারা যাবে সেই বস্তু দিয়ে জাহান্নামেও বারবার আত্মহত্যা করবে। সে একবার আত্মহত্যা করবে ফলে মারা যাবে! পরে আবার তাকে জীবিত করা হবে এবং আবার সে আত্মহত্যা করবে, আবার জীবিত হবে আবার আত্মহত্যা করবে এবং এভাবেই চলতে থাকবে দীর্ঘকাল পর্যন্ত। যেমন এ বিষয়ে রাসুল সাঃ বলেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ، وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে। (সহিহ বুখারী, ১৩৬৫) এছাড়া আরো একটি হাদিস হলো-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدَّى خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا، وَمَنْ تَحَسَّى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَسُمُّهُ فِي يَدِهِ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ـ ثُمَّ انْقَطَعَ عَلَيَّ شَيْءٌ خَالِدٌ يَقُولُ ـ كَانَتْ حَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَجَأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সদা সর্বদা পাহাড় থেকে পড়তে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে সে ব্যক্তি দোযখের আগুনে সদা সর্বদা স্বীয় হস্তে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি লৌহ দ্বারা আত্মহত্যা করে তার হস্তে একটি লৌহ থাকবে যা দ্বারা দোযখের আগুনে সদা সর্বদা নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। (সুনানে আন-নাসায়ী, ১৯৬৫) এভাবেই জাহান্নামে চলতে থাকবে দীর্ঘকাল। তবে যেহেতু আত্মহত্যা করা হারাম যা বড় ধরনের কবিরা গোনাহ ফলে কোনো ব্যাক্তি যদি আত্মহত্যা করে মারা যায় তাহলে সে ফাসিক হয়ে মারা যাবে! তবে কাফের হবে না।
৩.#আত্মহত্যাকারী_আত্মহত্যার_কারণে_কাফির_হয়_নাকি_মুমিন_থাকে?
কোনো ব্যাক্তি যদি আত্মহত্যা করে মারা যায় ফলে সেই আত্মহত্যার কারণে ঐ ব্যাক্তি কাফের হয় না। যেমন-
এ বিষয়ে আল মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়াতে বলা হয়েছে-
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى .........لأَِنَّ الْمُنْتَحِرَ لاَ يَخْرُجُ عَنِ الإِْسْلاَمِ بِارْتِكَابِهِ قَتْل نَفْسِهِ
ফকীহগণ একমত এ কথার উপর... যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে আত্মহত্যা করার কারণে ইসলাম থেকে বের হয় নি (বরং সে মুমিন থাকে)। (মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া - ৬\২৯৫) সুতরাং আত্মহত্যাকারী আত্মহত্যার কারণে কাফের হয় না বরং মুমিন থাকে?
৪.#আত্মহত্যাকারী_কী_আত্মহত্যার_কারণে_চিরস্থায়ী_জাহান্নামি_হয়?
আত্মহত্যাকারী যেহেতু তাওবা করার সুযোগ পাবে না ফলে সে কারণে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতেই হবে । তবে যেহেতু সে ঈমান নিয়ে মারা যায় ফলে তাকে সেই ঈমানের কারনে একদিন না একদিন তাকে এই জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি দেওয়া হবে। যেমন রাসুল সাঃ বলেন-
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ شَعِيرَةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ بُرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ، وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَفِي قَلْبِهِ وَزْنُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ ". قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ قَالَ أَبَانُ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ حَدَّثَنَا أَنَسٌ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " مِنْ إِيمَانٍ ". مَكَانَ " مِنْ خَيْرٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি যব পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি গম পরিমাণও পূণ্য বিদ্যমান থাকবে তাকে জাহান্নাম হতে বের করা হবে এবং যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে আর তার অন্তরে একটি অণু পরিমানও নেকী থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। (সহিহ বুখারী, ৪৪) এছাড়া রাসুল সাঃ আরো বলেন-
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ. فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا قَدِ اسْوَدُّوا فَيُلْقَوْنَ فِي نَهَرِ الْحَيَا ـ أَوِ الْحَيَاةِ، شَكَّ مَالِكٌ ـ فَيَنْبُتُونَ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي جَانِبِ السَّيْلِ، أَلَمْ تَرَ أَنَّهَا تَخْرُجُ صَفْرَاءَ مُلْتَوِيَةً "
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান আছে, তাকে জাহান্নাম হতে বের করে আনো। তারপর তাদের জাহান্নাম হতে এমন অবস্থায় বের করা হবে যে, তারা (পুড়ে) কালো হয়ে গেছে। অতঃপর তাদের বৃষ্টিতে বা হায়াতের [বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) শব্দ দু’টির কোনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন] নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সতেজ হয়ে উঠবে, যেমন নদীর তীরে ঘাসের বীজ গজিয়ে উঠে। তুমি কি দেখতে পাও না সেগুলো কেমন হলুদ বর্ণের হয় ও ঘন হয়ে গজায়? (সহিহ বুখারী, ২২)
সুতরাং ইমানের কারণে ব্যাক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে কিন্তু কখন বের করা হবে তা কেউ জানে না। তবে বের করা হবা এটা ঠিক। এছাড়া আল্লাহ চাইলে যে কোনো সময় মাফ করে জাহান্নাম থেকে বের দিতে পারেন। কারণ আল্লাহ তাআলা শিরক ব্যতিত যে কোনো গোনাহ মাফ করেন। যেমন এ বিষয়ে সরাসরি আল্লাহ তাআলা বলেন -
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। (সূরা নিসা : ১১৬)
অতএব আত্মহত্যাকারী আত্মহত্যার কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামি হবে না তবে আত্মহত্যা মহা পাপ, যা কবিরা গোনাহ, তাই আত্মহত্যার মতো এরকম জঘন্যতম কাজটি করা যাবে না।
৫. #আত্মহত্যাকারীর_জানাজার_নামাজ_পড়া_যাবে_কিনা?
রাসুল সাঃ আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়েননি। যেমন এ বিষয়ে সাহাবী রাঃ বলেন -
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِرَجُلٍ قَتَلَ نَفْسَهُ بِمَشَاقِصَ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ .
জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট জনৈক ব্যাক্তির লাশ উপস্থিত করা হল। সে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত আদায় করেননি। (সহিহ মুসলিম, ২১৫২) এখান থেকে দেখা যায় যে, রাসুল সাঃ আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়েন নি। তবে তিনি অন্যদেরকে আত্মহত্যাকারী জানাজার নামাজ পড়তে নিষেধ করেন নি। যার ফলে সাহাবীরা আত্মহত্যা কারীর জানাজার নামাজ পড়েছেন। যেমন-
وَصَلَّتْ عَلَيْهِ الصَّحَابَةُ
সাহাবীরা আত্মহত্যাকারী জানাজার নামাজ পড়েছেন। (শারহুন নববি ৭\৪৭) আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়া যাবে কিনা এ বিষয়ে জমহুর উলামাদের মত ঐ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন -
وَقَالَ الْحَسَنُ وَالنَّخَعِيُّ وَقَتَادَةُ وَمَالِكٌ وَأَبُو حَنِيفَةَ وَالشَّافِعِيُّ وَجَمَاهِيرُ الْعُلَمَاءِ يُصَلَّى عَلَيْهِ
হাসান, নাখাঈ, কাতাদা, মালিক, আবু হানিফা, শাফেঈ (রাহিঃ) এবং অধিকাংশ আলেমগন বলেছেন যে, তাঁর জন্য জানাজার নামাজ পড়া হবে। (শারহুন নববী ৭\৪৮)
এছাড়া হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাবে "ফতোওয়ায়ে শামীতে" উল্লেখ করা হয়েছে যে-
مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ وَلَوْ عَمْدًا يُغَسَّلُ وَيُصَلَّى عَلَيْهِ بِهِ يُفْتَى وَإِنْ كَانَ أَعْظَمَ وِزْرًا
যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে এমনকি যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবেও হয় তবুও তাকে গোসল দিতে হবে এবং তার জানাজার নামায পড়তে হবে। এটি দ্বারা ফতোয়া, যদিও এটি বড় ধরনের পাপ। (ফতোওয়ায়ে শামী ২\২১৩) এ বিষয়ে আরো ফাতাওয়া হচ্ছে-
يَرَى جُمْهُورُ الْفُقَهَاءِ (الْحَنَفِيَّةُ وَالْمَالِكِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ) أَنَّ الْمُنْتَحِرَ يُصَلَّى عَلَيْهِ
অধিকাংশ ফকীহ (হানাফী, মালিকী এবং শাফেঈ) বলেন যে- আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হবে। (মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া - ৬\২৯৪) সুতরাং আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির জানাযার নামাজ পড়তে হবে।
৬.#রাসুল_সাঃ_কেন_আত্মহত্যাকারীর_জানাজার_নামাজ_পড়েন_নি?
রাসুল সাঃ কেনো আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়েন নি এই কথাটির ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রাহিঃ) বলেছেন-
بِأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يُصَلِّ عَلَيْهِ بِنَفْسِهِ زَجْرًا لِلنَّاسِ عَنْ مِثْلِ فِعْلِهِ
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ আদায় করেননি এজন্য যে, যাতে করো লোকেরা একই কাজটি (করতে উৎসাহিত না হয়) না করে । (শারহুন নববি ৭\৪৭) সুতরাং এ কারণেই রাসুল সাঃ আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজ পড়েন নি।
৭.#আত্মহত্যাকারীকে_কাফন_দাফন_করা_হবে_কিনা?
আত্মহত্যাকারী ব্যক্তিকে কাফন দাফন করতে হবে এবং মুসলিমদের কবরেও দাফন করা হবে। যেমন এ বিষয়ে আল মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়াতে বলা হয়েছে -
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى وُجُوبِ تَكْفِينِ الْمَيِّتِ الْمُسْلِمِ وَدَفْنِهِ، وَصَرَّحُوا بِأَنَّهُمَا مِنْ فُرُوضِ الْكِفَايَةِ كَالصَّلاَةِ عَلَيْهِ وَغُسْلِهِ، وَمِنْ ذَلِكَ الْمُنْتَحِرُ
এ বিষয়ে ফকীহগণ একমত হয়েছেন যে মৃত মুসলিমকে কাফন পরা এবং দাফন করা বাধ্যতামূলক, তারা বলেছিল যে এগুলো সম্মিলিত কর্তব্য, যেমন তার জন্য জানাজার নামাজ পড়া এবং তাকে গোসল দেওয়া আর তাদের মধ্যে আত্মহত্যাকারীও শামিল রয়েছে।(মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া - ৬\২৯৫) এছাড়া আরো বলা হয়েছে-
وَكَذَلِكَ الْمُنْتَحِرُ عَمْدًا، لأَِنَّهُ لاَ يَخْرُجُ عَنِ الإِْسْلاَمِ بِسَبَبِ قَتْلِهِ نَفْسَهُ عِنْدَ الْفُقَهَاءِ كَمَا سَبَقَ، وَلِهَذَا صَرَّحُوا بِوُجُوبِ غُسْلِهِ كَغَيْرِهِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ (٢) وَادَّعَى الرَّمْلِيُّ الإِْجْمَاعَ عَلَيْهِ حَيْثُ قَال: وَغُسْلُهُ وَتَكْفِينُهُ وَالصَّلاَةُ عَلَيْهِ وَحَمْلُهُ وَدَفْنُهُ فُرُوضُ كِفَايَةٍ إِجْمَاعًا، لِلأَْمْرِ بِهِ فِي الأَْخْبَارِ الصَّحِيحَةِ، سَوَاءٌ فِي ذَلِكَ قَاتِل نَفْسِهِ وَغَيْرُهُ
আর একই কথা ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহত্যাকারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ ফকীহদের মতে, আত্মহত্যার কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয় নি যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কারণে তারা বলেছে যে, তাকে অন্যান্য মুসলমানদের মতোই গোসল দিতে হবে। আর রামলী এই বিষয়ে ঐক্যমত্য দাবি করেছেন, যেমন তিনি বলেছেন- তাকে (আত্মহত্যাকারীকে) গোসল করানো, কাফন পরানো, তার জানাজার নামাজ পড়া, তাকে বহন করা এবং তাকে দাফন করা সর্বসম্মতভাবে সম্মিলিত দায়িত্ব, কারণ আদেশটি সহীহ হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, তা যে ব্যক্তিই হোক! আত্মহত্যাকারী অথবা অন্য যে কেউ। (মাওসুআতুল ফিকহিয়া আল কুয়েতিয়া - ৬\২৯৪) অতএব আত্মহত্যাকারীকে কাফন দাফন করা হবে এবং এটি সবার উপর দায়িত্ব।
৮.#আত্মহত্যাকারীর_জানাজায়_সবাই_উপস্থিত_হতে_হবে?
আত্মহত্যাকে সমাজে ঘৃণিত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বা ইমাম যারা আছেন তারা আত্মহত্যাকারীর জানাজার নামাজে শরিক হবে না যাতে করে অন্যরা বুঝতে পারে যে আমি যদি আত্মহত্যা করি তাহলে আমার জানাজার নামাজে সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ আসবেন না। যেমন-
فَهَذَا لَا يُصَلِّي عَلَيْهِ الْإِمَامُ، وَلَا عَلَى مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ مُتَعَمِّدًا. وَيُصَلِّي عَلَيْهِمَا سَائِرُ النَّاسِ.
ইমাম তাঁর নামাজ পড়বেন না , এমনকি যে ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মহত্যা করেছে এমন ব্যক্তির জানাজার নামাজও ইমাম আদায় করবে না। এছাড়া বাকি মানুষ তাদের জন্য (জানাজার) নামাজ আদায় করবে। (আল মুগনি ২\৪১৫) যদিও এটা হান্বলী মাজহাবের ফাতাওয়া কিন্তু অনেকেই এই ফাতাওয়াটি গ্রহন করেছেন। এছাড়া সহিহ মুসলিমের ঐ উপরের উল্লেখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি রাহিঃ ঐ একই কথা বলেছেন। তাই আত্মহত্যাকারীকে আত্মহত্যা হারাম এবং ঘৃনিত বিষয় বুঝাতে সম্মানিত মানুষ বা ইমাম তাদের জানাজার নামাজে উপস্থিত হবেন না।
৯. #আত্মহত্যাকারীর_জন্য_দোয়া_করা_যাবে_কিনা?
যদি কেউ আত্মহত্যা করে মারা যায় তবে তার জন্য ক্ষমার দোয়া করা যাবে। কারণ আত্মহত্যার কারণে ঐ ব্যাক্তি কাফের হয়নি বরং ফাসেক হয়। আর ফাসেকের জন্য দোয়া করা যায় ফলে তাঁর জন্য দোয়া করা যাবে। যেমন একটি হাদিস দেখুন -
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كُنَّا نُمْسِكُ عَنِ الِاسْتِغْفَارِ، لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ، حَتَّى سَمِعْنَا نَبِيَّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنِّي ادَّخَرْتُ شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ» فَأَمْسَكْنَا عَنْ كَثِيرٍ مِمَّا كَانَ فِي أَنْفُسِنَا، وَرَجَوْنَا لَهُمْ
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা কবীরা গুনাহকারীদের জন্য ক্ষমার দোয়া করা থেকে বিরত থাকতাম, অতপর আমরা শুনলাম যে আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন- আমি ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতের যারা কবীরা গুনাহ করেছে তাদের জন্য আমার সুপারিশ জমা করে রেখেছি। (অথচ পূর্বে ) আমাদের অন্তরে তাদের জন্য (দোয়া) যা ছিলো তার অনেক (দোয়া করা) কিছু থেকে বিরত ছিলাম কিন্তু এরপর (রাসুলের হাদিস শোনার পর) থেকে আমরা তাদের জন্য দোয়া করতাম। (মুজামুল আওসাত ৬\১০৬)
যেহেতু আত্মহত্যা করা কবিরা গেনাহ আর কবিরা গোনাহকারীর জন্য দোয়া করা যায় ফলে আত্মহত্যাকারীর জন্যও দোয়া করা যাবে।
(والله أعلم)
লেখকঃ মুহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ খাঁন।
শিক্ষক দারুল আজহার মডেল মাদ্রাসা,সিলেট।
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com