আজও মনে পড়ে…
প্রতিনিধিঃ- মোঃ-শাকিল আহম্মেদ ৷ পাবনা ৷
® ছোটবেলা থেকে নতুন বইয়ের গন্ধ প্রচন্ড ভালোবাসতাম, যা আজও বিন্দুমাত্র কমলো না !
গাছ ও পানির অপর নাম যদি হয়ে থাকে জীবন ! তাহলে চোখের আপর নাম দৃষ্টি..আমার কাছে বইয়ের আপর নাম আলো !! জীবনের পদে পদে ঘন কুয়াশা ভেদ করে আলোর ছটা ছড়ায় যে সূর্য তার নাম বই !! বইয়ের জগর্তে যে এক’বার প্রবেশ করছে একনিষ্ঠাভাবে সেই কুড়িয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতব মণিমুক্তা !! আমি এক’জন বইয়ের ক্ষুদ্র গ্রাহক,পাঠক ও সংক্ষরক !!
আমার আব্বাজান এবং মরহুম দাদাজানও ছিলেন বইয়ের পোকা !! গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের জন্য করে গেছেন জমি দান সহও অনেক অনেক মহৎ কাজ..যে কাজের জন্য গ্রামের মানুষের মাঝে আমার বাবা ও দাদার নাম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথেই আলাপ-আলোচনায় উঠে…আমিও তাদের সন্তান ও -নাতি হিসাবে..আন্ধকারে আলো ছড়িয়ে দিতে লড়াই’টা শুরু করে ছিলাম ২০০৮ সালের ১ পহেলা জানুয়ারি !! দিন’টি ছিল মঙ্গলবার !! একটি পরিসর থেকে আমরা যাত্রা শুরু করে’ছিলাম ৷ আমাদের যাত্রা ক্ষুদ্র পরিসর থেকে হলেও আশা ছিল অনেক বড়ো ! স্বপ্ন বুনে ছিলাম বিশাল হিদয় দিয়ে ! আমাদের আশা ও স্বপ্ন জূড়ে ছিল আন্ধকারে আলো ছড়ানো ! সেই আশাকে ধারণ করেই এক অজপাড়া গাঁয়ের ইছামতি নদী ও নজরুল সড়কের পাশে জরাজীর্ণ একটি বাঁশের মাঁচালে গ্রামের কিছু মুড়িব্বিদের সাথে আলাপ-আলোচনার ঠিক করা হয় পাঠাগারের নাম ও মের্ধা বিকাশে সোনালী
“পড়িলে বই আলোকিত হই না পড়িলে বই অন্ধকারে রই” এই স্লোগানের মাধ্যমেই প্রতিষ্টাতা করি ৷
#ওভার টাইম ও নাইট বিলের টাকা জমিয়ে গড়ছেন দশটি পাঠাগার ৷৷
“সবার জন্য পড়া উন্মক্ত পাঠাগার”
প্রতিষ্ঠাতাঃ- মোঃ শাহাদত হোসেন খাঁ ৷
লেখা:- মোছাঃ-মিনা খান
দিনের অনেকটা সময় এখন পাঠাগারে ব্যয় করেন শাহাদত হোসেন ৷
নিজ বাড়ির উঠানে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের একটি ঘরের ভেতরে ০১ টি টেবিল ও ০৬ টি চেয়ার। চেয়ারে বসে কয়েক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তবে কোনোটাই পাঠ্যবই নয়। কেউ ইতিহাস, কেউ সাহিত্য, কেউ ইসলামিক বই, কোরআনের মানচিত্র, আল-কোরআনের ভাষা, কেউ মিনার মুনছুর স্যারর কবিতার বই, কেউ কালবেলা..মধুময় পাল স্যারের লেখা বই, কেউ পড়ছে আলোকিত মানুষ, কেউ পড়ছে উপন্যাস, কেউ গল্পের বই, আবার কেউ মনীষীদের জীবনীগ্রন্থ। আর কাঠের একটি বড় বুক-সেল্ফে থরে থরে সাজানো ৮-৯ শতে অধিক বই। পাঠাগারের নাম “সবার জন্য পড়া উন্মক্ত পাঠাগার”। একজন চাকরি জীবি নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা।
পাবনা জেলা শহর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁথিয়া উপজেলার ১০ কিলোমিটার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে বাড়ি শাহাদত হোসেনের ৷৷ বিকেএসপিতে চাকরি করার সময় আমিনুল হক বুলবুলের ক্রিকেট খেলা শিক্ষা বই পড়ার মাধ্যমে..বই পড়ার জগতে প্রথম প্রবেশ শুরু হয়..২০০৭ সালে..এবং বিকেএসপির চাকরি ছেড়ে নারাঃ মেগনার ঘাট মেঘনা গ্রুপে জয়েন্ট করি ইনিঃ মোঃ আওসান হাবিব স্যারের মাধ্যমে ২য় বই বেসিক ইলেকটিক্যাল ইন্টারভিউ নজেল বই পড়ার মাধ্যমে কর্ম জীবনে যেমন সফল্য আসে..বই পড়ার প্রতি আরাও বেশি আসক্তি হয়ে পড়ি..এই ভাবে দূই একটি করে বই কিনে পড় পড়তে এক সময় আমার কাছে ৪০০-৫০০ শত বই জমা হয়ে যায় ৷৷ এই সব বই যে পড়েছি তা কিন্ত নয়… যাই হোক..২৫০-৩০০ পিস বই রয়ে যায় উত্তরাতে এবং ২০২১ সালের ০১ জানুয়ারিতে নিজ গ্রামে ২৫০ বই যখন পাঠাগারটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করি ৷৷ পরে বন্ধু, সহপাঠী, পাড়া–প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে সহায়তা চাইলে তাঁরা ব্যাপক সাড়া দেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমানে বই সংখ্যা হলঃ- ২০০০+ পিস।৷ তারিখঃ- ০১- ০৮- ২০২৪ সাল চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত আছেন মোঃ শাহাদত হোসেন ৷ এবিএফ ফাউন্ডেশনের কেন্দীয় প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রতিষ্ঠাতাঃ- বয়লার অপারেটর গ্রূপ ৷৷ যার মাধ্যমে প্রতি মাসেই দুই চার পাঁট জন্যর চাকরির ব্যবস্থা করে থাকেন ৷৷ যাই হোক….. পাঠাগার তৈরির ইচ্ছাটা তাঁর ছোটবেলা থেকেই। চাকরি সুবাধে হাবিব সাহেবের উপহার দেওয়া বই “বেসিক ইলেকটিক্যাল ইন্টারভিউ নজেল” পড়েই জানতে পারেন.. পাঠ্যবইয়ের বাইরে যে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার রয়েছে, তা সেদিনই তাঁর সামনে উন্মোচিত হয়। তিনি বলেন, ‘অফিস ছুটির পর প্রায় দিনই বাসায় গিয়ে বই পড়তাম। এভাবেই অভ্যাস গড়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামে ছেলেমেয়েদের জন্য বই পড়ার তেমন কোনো সুযোগ–সুবিধা নেই। তখন থেকেই মনে হতো গ্রামে একটি পাঠাগার করতে পারলে সবাই পড়ার সুযোগ পাবে।’
প্রতিদিন অফিস যাওয়া-আসা ও টিফিন বিল জমা করে ও মাস শেষে বেতন তুলে আরোও নতুন নতুন বই কেনা ও পড়া শুরু করেন ও মাস শেষে বাঁকি টাকা বাবাকে পাঠান ৷ গ্রামের কৃষক পরিবার আমাদের । বাবা নিজ জমিতে কৃষি কাজ করে যা আয় হত..তা দিয়েই মা, ও চার বোন ও আমাদের সংসার চলে।৷ শাহাদত যখন ৫ম শ্রেণীর ছাত্র..তখন হঠাত করেই মা অ’সুস্থ্য হয় ও মারা যায়..তখন পড়া লেখার পাশা-পাশি বাবার সাথে জমিতে কাজ শুরু করে ৷ এই ভাবে চলছে ও বাবা আবার ২য় বিবাহ করলেন..তখনও ভালোই চলছিলো..যখন ৭ম শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকে বাবা-ও সৎ মায়ের আচার-আচারণ কেমন যেন পরিবর্তন হতে শুরু করে..এবং যখন ৮ ম শ্রেণীতে উঠলো তখন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় ৷৷ ও পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথম চাকরি শুরু করেন বিকেএসপিতে সেখান থেকে কিছু অর্থ জমিয়ে বইয়ের পেছনে ব্যয় করতেন ৷ আজ এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের সংগ্রহে বই জমা হতে থাকে। পাঠাগারের জন্য আসবাব, বই রাখার বুক-সেল্ফ ও সবই কিনেছেন নিজের টাকায়। বলেন, ‘করোনার সময় শুরুর দিকে কর্ম স্থল বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের চলে আসি..ও গ্রামে সকল মানুষের ছাত্র-ছাত্রীদের ও সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চিন্তা করতে থাকি কীভাবে সবাইকে আবারও বইমুখী করা যায়। একদিন মনে হলো আমার কাছে যত বই আছে, সেগুলো দিয়ে একটি পাঠাগার শুরু করা সম্ভব। সবার সঙ্গে কথা বললাম, মোঃমোনাইম খাঁন কাকা তাতে সায়ও দিয়েছেন ৷৷ তারপর পাড়ার সবাই’কে নিয়ে বসে পাঠাগারর নাম ঠিক করা হয় ৷৷ তারপর আমার পরিচিত অনেকে বই দিয়েছে। এভাবেই পথচলা শুরু ও এখনো চলছে..
পাঠাগারের শিশুতোষ গ্রন্থ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, বিনোদন, রাজনীতি, অর্থনীতি, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রচনাসমগ্র, জীবনী, ছোটগল্প, কবিতা, ভাষাতত্ত্বসহ সাহিত্যের সব ধারার বই রয়েছে। প্রতিদিন আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০-১৫ জন পাঠক এসে নিয়মিত বই পড়েন ও নিজ বাড়িতে বই নিয়ে পড়ার পাঠক সংখ্যা ২০-২৫ জন ৷৷