অ্যারোকাস্তাসসিনো ব্লাস্টোস্রেটো --- মোজাম্মেল হক
আজ থেকে বহু বছর পূর্বে আঠারো শতকে আয়ারক নামক গ্রামে পৃথক পৃথক পরিবারে জন্ম নিয়েছিল ফিন রিমফোর্ড, রদ্রিগো ক্যাসে, মানস্টি ডি ফিলিপ ও অ্যাস্টন স্যাডারউড নামের চার অনুসন্ধানী ও অভিযাত্রী বন্ধুরা। তাঁরা ছোটবেলা থেকেই ছিল অনুসন্ধিৎসু। নতুন কিছু তাদের আনন্দের সাথে সে বিষয়ের প্রতি তীব্র আগ্রহের সৃষ্টি করতো। তাঁরা তাদের স্কুলজীবনে একদিন ইতিহাস শিক্ষকের কাছ থেকে জানতে পারে একটি অদ্ভুত স্থান সম্পর্কে। তাঁরা ইতিহাস শিক্ষকের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তাদের ইতিহাস শিক্ষক ফ্রেডিক বলেন, "আজ পর্যন্ত সেখানে লোকজন গিয়েছে উনত্রিশ জন। কিন্তু তাদের পরিবার তাদের লাশটুকু পর্যন্ত পায়নি। প্রথমে পরিবারগুলো ভেবেছিল তাদের আপনজন ইহকালে আর নেই। তাই তাঁরা একপ্রকার আশা ছেড়ে দিয়ে অর্থাৎ তাদের আপনজনদের জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র প্রিয়জনের মৃতদেহের জন্য সেই স্থানটায় গমন করে। আর সেই কারণে গত বছর সেই উনত্রিশ জন লোকের সাথে তাদের প্রিয়জনসহ প্রায় বিয়াল্লিশ জন নিখোঁজ হয়। আমাদের গ্রামের মোড়ল মার্ক অ্যাডামসবার্গ এ ঘটনায় বড্ড চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি জনসমক্ষে স্থানটিকে অভিশপ্ত স্থান বলে ঘোষণা করেন। সেখানে যেতে লোকজনকে নিষেধ করেন। তিনি=১৬০ মনে করেন, সেখানে কোনো অতৃপ্ত আত্মার উপস্থিতি বিদ্যমান। যাঁরা কিনা বিয়াল্লিশ জন লোককে ধরে নিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে। তবে আমি মনে করি যে, তাঁরা পথ হারিয়েছে। আর সেজন্য তাঁরা ফিরে আসতে পারছেন না। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় যে, গ্রামে কোনো হারিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই।"
এসময় ক্যাসে বলে," হয়তো তাঁরা অন্য কোনো গ্রামে চলে গিয়েছেন।" তখন স্যার ফ্রেডিক বলেন,
" স্থানটা অনেকটা অরণ্যের মতো। তবে স্থানটার সবটুকু অরণ্য নয়। সেখানে বাড়ি,ভাঙ্গা গাড়ি আছে। এমনকি মার্কেটও আছে। তবে সেগুলোও জরাজীর্ণ। অনেকদিন ধরে সেখানে কোন লোকের উপস্থিতি দেখা যায়নি। জায়গাটা তাই তোমাদের নিকট ভুতুড়ে স্থান বলে মনে হতে পারে। তবে এটা একটা রহস্য যে, সেখানে প্রবেশমুখে অবস্থিত রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় না। যতই সেখানে চলাচল করা হোক না কেন। যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন তাঁরা গহীন জঙ্গলে ঢুকেছেন হয়তো। কারণ আমার দাদা একমাত্র সেখানে থেকে জীবিত ফিরলেও তিনি ছিলেন অস্বাভাবিক। তিনি বিভিন্ন অবিশ্বাস্য ঘটনা আমাদের নিকট পেশ করতেন। যা প্রথম আমার কাছে তেমনটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো না। কাকতালীয় ও আষাঢ়ে গল্প মনে হতো। কিন্তু পরে এই বিয়াল্লিশ জনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা আমাকে চিন্তিত করে তোলে। তখন মনে শুধুই ঘুরতে থাকে আমার দাদুর সেসব আষাঢ়ে ও রহস্যময় গল্প। যদিও তিনি আজকে বেঁচে নেই তবুও আমি তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে লেখা একটি ডায়েরি তোমাদের দিতে পারি। যেগুলো তোমাদের ছোটবেলাকে গল্পের মাধ্যমে মজা দিতে পারবে।" তখন ফিলিপ চেয়ার থেকে উঠে বলতে শুরু করে তাঁর কথা। আসলে ইতিহাস শিক্ষক ক্লাসে আলোচনা করছিলেন এসব কথা। ফিলিপের কথার মাঝখানে ব্রিস্টন ডি মাডিলো চলে আসে। সে আসলে এই ক্লাসের অর্থাৎ ইতিহাস শিক্ষকের ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র। সে এসে একটু পাণ্ডিত্য দেখানো শুরু করে। সে যত আজগুবি ঘটনা ও কথা ফিলিপের উক্তির মাঝখানে পোষণ করে। এসব বক্তব্য ফিলিপ মেনে নিতে না পেরে একপর্যায়ে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটিয়ে দেয়। ইতিহাস শিক্ষক তৎক্ষণাৎ হাতাহাতি থামিয়ে দিয়ে ভর্ৎসনা করেন মাডিলো ও ফিলিপকে। ছাত্রদ্বয়কে এসব কাজ করতে বারণ করেন স্যার ফ্রেডিক। ফিলিপের রাগ বেশি হওয়ায় সে এই অপমান সহ্য করতে পারে না। সে সেদিন রাতে তাঁর জন চারেক বন্ধুকে ডাকে। আসলে সে ছিল রগচটা ও চারজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জেদি। সে যখন একটা লক্ষ্য মনস্থির করতো তখন সেটা না করা পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিতো না। তাই সে সেদিন রাত্রে তাঁর বাড়িতে বন্ধুদের সামনে তাঁর লক্ষ্যের কথা বলে। ফিলিপ বলে যে, সে নাকি সেই রহস্যময় ও ভুতুড়ে স্থানে একা যাবে। তখন ফিন রদ্রিগো ও অ্যাস্টন তাঁর সাথে যাওয়ার জন্য রাজি হয়। বন্ধুদের এ কথা শুনে ফিলিপ খুবই খুশি হয়।
পরিকল্পনা মোতাবেক তাঁরা সে দিনের পরের দিন অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির দিন তাঁরা শিক্ষকের বলা স্থানটির রহস্যের সমাধান করার জন্য থলেতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সেদিন দুপুরে বেরিয়ে পড়ে স্ব স্ব বাড়ি থেকে। পথে তাঁরা একে অপরের সাথে মিলিত হয়। আর মিলিত হওয়ার পর রওয়ানা দেয় শিক্ষকের বলা সেই রহস্যময় ও ভুতুড়ে স্থানটির উদ্দেশ্যে। তাঁরা অবশেষে স্থানটিতে পৌঁছে যায়। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা দেখা দেয়। তাঁরা যে খাবার এনেছিল তা পচে গিয়েছে। বিষয়টায় তেমন নজর না দিয়ে ফিলিপ তার বন্ধুদের সামনে এগোতে বলে। কিন্তু ফিনের মনে এ বিষয়ে খটকা লাগে। সে সেখানে খাবার পরীক্ষা করতে চাইলে রদ্রিগো বলে,"শুনেছি, এখানে অনেক বৃক্ষ আছে। আর সব বৃক্ষ তো ফলহীন নয়। তাই ক্ষুধা মেটাতে আমরা সেই ফল খাবো।" একথায় একমত পোষণ করে জোর গলায় অ্যাস্টন বলে," খাবারের কথা ভাবলে তো আর অভিযান করা হবে না।" ফিলিপ তখন বলে," অভিযান সফল হবে। যদি আমরা এ রকম বেকার বিষয়ে মন:সংযোগ ঘটানো থেকে বিরত থাকি।" তখন রদ্রিগো ও অ্যাস্টন একমত পোষণ করে ফিলিপের উক্তির সাথে ও উক্তিটির প্রশংসা করে। কোনো উপায় না পেয়ে বন্ধুদের সাথে একমত পোষণ করে ফিন। এরপর সবাই গহীন জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। আর তাঁরা সামনে একটি গর্ত দেখতে পায়। গর্তের ভিতর সাবধানের সাথে প্রবেশ করতে চেষ্টা করলে সবাই বিদ্যুৎ এর শক খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। অন্যদিকে পঁচিশ শতকে হস্টারিল এপার্টমেন্টের একটি রুমে এডওয়ার্ড রো ও ম্যাট কপারফিল্ডের মধ্যে কথা কাটাকাটি দেখা যায়।
- আপনি ছোটবেলায় এতই বোকা ছিলেন যে, জেরোটিই প্রজেক্ট তৈরি করতে আপনার হিমশিম খেতে হয়েছিল।
- আজ্ঞে হ্যাঁ। তবে আমি শেষ পর্যন্ত তৈরি করে দেখিয়েছি জেরোটিই প্রজেক্টটা।
- এটা মিথ্যা কথা। আসলে আমি সেই প্রজেক্টটা তৈরি করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা চুরি করা হয়েছে। আর আমি জানতে পেরেছি যে, চোরটা তুমি!
- আমি তিন রাত ধরে এ প্রজেক্টটার সফলতা দেখার জন্য জেগেছি। তীব্র খাটার পাশাপাশি বহু সময় দিয়েছি এর পেছনে। আর এখন আপনি বলছেন যে, আমার এই কষ্টের প্রজেক্টটা আপনার নিজের।
- অবশ্যই এটা আমার।
- অমূলক দাবি একজন ভিক্ষুকও করতে পারে। আর আপনি তো একজন বিজ্ঞানী। শুধুমাত্র বিজ্ঞানী নয় বরং খ্যাতিমান বিজ্ঞানী রো। আপনি আপনার প্রভাব তো খাটাতেই পারেন। এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয় যে, নতুন বিজ্ঞানীদের ব্ল্যাকমেইল করা আপনার পেশা ও কাজ। ঠিক কিনা বিজ্ঞানী রো?
- (লেজার বের করে...) তুমি অনেক কিছু জানো ম্যাট। এতো জানা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বদহজম হয়ে যাবে এতে। এমনকি জটিল রোগে মৃত্যু পর্যন্ত।
এই বলে বিজ্ঞানী রো লেজার নিক্ষেপ করতেই যাবে এমন সময় কোথা থেকে বিকট শব্দ আসে। যেন ভূমিকম্পে একুশ তলার দুইটি দালানের পরপর ভেঙে পড়ার শব্দ। এতে অন্যমনস্ক হয়ে বিজ্ঞানী রো-এর লেজার জানালা দিয়ে বাইরে পড়ে যায়। রো ভাবে যে, তাঁর ইলেকট্রিসিটি অ্যাডেড টাইম মেশিনে (EATM) কোনো সমস্যা হয়েছে। তাই সে দৌড়ে এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়। কিন্তু মেশিনের চিন্তায় সে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে, সিম্পল এয়ার কারের ধাক্কায় সে ঘটনাস্থলেই ইন্তেকাল করে। অন্যদিকে কিছু বাচ্চারা জঙ্গলে খেলতে গিয়ে দেখতে পায় বিজ্ঞানী রো-এর ইএটিএ-এর ধ্বংসাবশেষ। তাঁর কিছুদূরে তাঁরা দেখতে পায় ফিলিপবাহিনীর চারজনকে। দ্রুত কানেকশন ওয়াচের মাধ্যমে বাচ্চারা স্ট্রং সিকিউরিটির লোকজনকে ডাকে। তাঁরা অনেকগুলো ফ্লায়িং ড্রাগন কার নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফিলিপসহ মোট চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার এর মধ্যে তীব্র শক লাগার জন্য রদ্রিগোকে মৃত ঘোষণা করে। তারপর এসএস মৃতের তাঁদের করণীয় সম্পন্ন করে। হাসপাতাল ফিন ও ফিলিপকে হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেয়। তাঁরা সেই বাচ্চাদের বাড়িতে থাকে পরবর্তীতে। কিন্তু অ্যাস্টনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। সে মেডিকেল অব ডিসকর্স-এ পরবর্তীতে এডমিটেড হয়। অন্যদিকে ফিলিপ বাচ্চাদের কাছে এসব ঘটনা শুনে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে। তখন ফিন বলে,"আমার শুরু থেকেই সন্দেহ ছিল।" "কিন্তু এখন সব রাস্তা সমাপ্ত। ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই," আক্ষেপস্বরে একথা বলে ফিলিপ। বাচ্চাদের মধ্যে একজন ছিল বিজ্ঞানী রো-এর ছেলে।
ছেলেটির নাম এসাথো আসরাট। এসাথো বলে," আমার বাবার টাইম মেশিনে মনে হয় সমস্যা হওয়ার কারণে তোমরা এখানে এসেছ। প্রথমবার এ ঘটনা ঘটেছে। কারণটা হলো যে, মেশিনটা দশ বছরের পুরানো। আর আমি এর তৈরির সময় বাবার সহকারী হয়েছিলাম। তখন মহামারি চলছিল। আর সে সুবাদে আমার এ সহকারীর দায়িত্ব। আমি এর ডিজাইন ও ডিভাইসগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছিলাম। এটা জঙ্গলের ভিতরে একটা গুহার মধ্যে রাখা। এর নিয়ন্ত্রণ মহামারির পর আমার চাচা করতো। তিনিও একজন বিজ্ঞানী। হয়তো তিনি কোনো সিস্টেমে গোলমাল করেছেন। কারণ তিনি এর আগেও গোলমাল করেছেন এ সিস্টেমে। মানে মেশিনটার সিস্টেমে। তখনকার গোলমালটা তেমন গুরুতর ছিল না। আমার বাবাই সেটা খুব সহজে ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এ বিকট শব্দ শুনে আমার মনে হয় যে, চাচা বহু বড় গোলমাল করে ফেলেছেন মেশিনটার সিস্টেমে। কিন্তু আমি তো ঘটনাস্থলে চাচাকে দেখতে পেলাম না।" ফিলিপ তখন বলে," তবে এই হলো ঘটনা।" এসাথো বলে," তোমরা হয়তো গর্তে ইলেকট্রিক শক খেয়েছো। আর তারপর এখানে আগমন। তাই না?" " হ্যাঁ। আমরা তীব্র শক খেয়েছিলাম। তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। জানিনা বাকিদের কি হয়েছিল পরে। তবে অজ্ঞান হওয়ার আগে আমি যতদূর জানি আমরা সবাই একসঙ্গে ইলেকট্রিক শক খেয়েছিলাম," ভীতকণ্ঠে ফিন বলে। " আর রদ্রিগোর মৃত্যু শকের কারণে হয়নি। সে সবার আগে দ্রুতগতিতে মাটিতে পড়েছিল। আর ডাক্তারবাবু বলেছেন আমাকে যে, রদ্রিগোর মানসিক সমস্যা ছিল অর্থাৎ টিউমার সহ মানসিক সমস্যা। ডাক্তার আমাকে এটাও বলেছেন যে, সে শক খাওয়ার আগে পর্যন্ত ভাবছিলো।
তাও তীব্র ভাবছিল অন্যদের তুলনায়। আর এ কারণে তাঁর দেহের সমস্ত শক্তি শকটা টানতে পারেনি। ফলে সে মাটিতে দ্রুতগতিতে পড়ার পূর্বে পর্যন্ত জীবিত ছিল। আর অন্যদিকে সে জীবিত অবস্থায় দুর্বলও হয়ে পড়েছিল। একথাও ডাক্তার সাহেব বলছিলেন। কিন্তু কি কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল সেটা আমি তোমাদের পরে বলব," এই কথা বলার পর এসাথো সবাইকে রাতের খাবারের জন্য ডাইনিং টেবিলে আসতে বলে। এসাথোর মা সামেরা অ্যান্জেলিনা সবাইকে খাবার দেয়। আর খাওয়ার পর এসাথোর বন্ধুরা সবাই নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। শুধু ফিলিপ ও ফিন সেখানে থেকে যায়। রাতে ঘুমানোর সময় এসাথো ফিন ও ফিলিপের সাথে গল্প করে। এসময় সবাই তাদের জীবনকাহিনী বলে। একপর্যায়ে এসাথো বলে," তোমরা জেনে অবাক হবে যে, এখানে সবার ব্যক্তিগত টাইম মেশিন আছে। আর এর আবিষ্কারক আমার বাবা। কিন্তু বিজ্ঞানী ম্যাট সয়েল এনার্জি ব্যবহার করে টাইম মেশিন বানায়। যা কেনা সবার জন্য ব্যয়বহুল হয়। তাই সবাই আমার বাবার ইলেকট্রিক টিএম কেনে। এজন্য ম্যাট আমার বাবার উপর রেগে ছিল। সবসময় হুমকির চিঠি দিতো। বাবা এতে কর্ণপাত করতেন না। তিনি এর ইটিএ-এর চিরস্থায়ী ও আধুনিক রুপ বানালেও মেশিনে অনভিজ্ঞ চাচার করা সমস্যা তিনি সমাধানের জন্য প্রত্যেকবার হন্যে হতেন। কিন্তু এবার বেশি হন্যে হওয়ার কারণে এ অঘটন।" " তুমি দুঃখ করো না এসাথো," সান্ত্বনাস্বরে এসাথোকে এ কথা বলে ফিন। " তোমাদের এখানে আসার কারণ হলো আমার বাবা এই ইটিএ মডেলটা আলাদাভাবে তৈরি করেছেন। যা বিশেষ এক অ্যান্টেনা কন্ট্রোল করে। আর এটি মহাকাশে। এটি মহাকাশের পাথর ও তারা থেকে শক্তি টেনে নেয় ও সঞ্চয় করে বিশেষ নলের সাহায্যে।
এর বিশেষ একটি চেম্বারে শক্তি জমা হয়। আর অ্যান্টেনাটি রাডারের মডেলের সাথে যুক্ত। যা কিনা সূর্য ও আগ্নেয়গিরির শক্তি সঞ্চয় করে একইভাবে। এই রাডারটা পৃথিবীর ঘূর্ণন উল্টো করে যেকোনো শতকে নিয়ে যেতে পারে। আর সেটা তাও এখানে থেকে। মানে পঁচিশ শতক থেকে। কিন্তু রাডারের নিয়ন্ত্রণ গর্তের ভিতরে গোপন কক্ষ থেকে করা হয়। আর এ দায়িত্বে আমার চাচা ও বাবাই ছিলেন। এখন বাবার মৃত্যুতে এ দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে," এসাথো একথা ফিন ও ফিলিপকে বলে। গল্প ও কথা শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে ফিন ও ফিলিপকে নিয়ে এসাথো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। যেতে যেতে এসাথো বলে, " তোমাদের এখানে আটকে পড়ার কারণ হয়তো চাচা ভুলে লাল বাটনের ইলেকট্রিক এনার্জির জায়গায় নীল বাটনের সয়েল এনার্জি বাটন দাবিয়েছেন। আর সেজন্য আপনাদের এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত আগমন। আর কান্ট্রি এরিয়া আর্মি কয়েকদিন ধরে বেপরোয়া। আর সেজন্য অ্যাস্টন অসুস্থ। ডাক্তার সাহেব আমাকে একথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, লেজার অ্যাস্টনের হাত ও পা এবং মাথায় লেগেছে। অ্যাস্টনের মাথায় লেজার লাগার জন্য শুধু তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া হাত ও পায়ে লেজার লাগলে সমস্যা নেই। তোমরা দুজন বেঁচে ছিলে। কারণ তোমরা অজ্ঞান ছিলে। আর বাকি দুজন অজ্ঞান ছিল না। অ্যাস্টনের ভাষ্য যে, সে তোমাদের জাগানোর জন্য পানি খুঁজতে গিয়ে বিপদে পড়ে," পরে গর্তের কাছে সবাই পৌঁছে যায়। গর্তে এরপর সবাই ঢুকে পড়ে। ঢোকার পর সবাই এসাথোর চাচাকে দেখতে পায়। চাচা তখন বাস্তবে জ্ঞানে ছিলেন না। তিনি আরামগদিতে বসেছিলেন হেলান দিয়ে। এসাথো চাচাকে ডাকলেও চাচা তখন সাড়া দিচ্ছিলেন না। বরং মৌনভাব অবলম্বন করছেন তিনি।
এমনটাই উপস্থিত সবাই মনে করল। ফিলিপ অন্যদিকে সব ঘটনা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। সে বলে, চাচা হয়ত ঘুমিয়ে গিয়েছেন। অথবা ঘুমের ওষুধ খেয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। এসাথো ফিলিপের কথা বিশ্বাস করে চাচার কাছে এগিয়ে যায়। এগিয়ে গিয়ে সে চাচাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকতে শুরু করে। কিন্তু চাচার সাড়া পেতে ব্যর্থ হওয়ায় এসাথো চাচার চোখে পানি দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে পাশের কক্ষে গিয়ে বোতলভর্তি পানি দেখে এসাথো খুশি হয়। এরপর দ্রুত পানির বোতল নিয়ে চাচার কাছে আসে এসাথো। চাচার পদদ্বয় কাঁপছে দেখে এসাথো তৎক্ষনাৎ পানি তাঁর চাচার চক্ষুতে ও মুখমন্ডলে ছিটিয়ে দিতে শুরু করে। তিন মিনিট ধরে একটানা এ কার্য সম্পাদন করার পর কার্যটি অবশেষে সফলতার মুখ দেখে। চাচা জেগে উঠেন স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু জেগে উঠার পরই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন,"কেন্দ্রীয় রাডারের মধ্যে সমস্যা হয়েছে এসাথো। আর এটা গ্রহের সাথে ধাক্কা খাওয়ার কারণে হয়েছে। রাডারটা হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারায়। তারপরে কক্ষে বিস্ফোরণ হয়। তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আর এরপর কি হয়েছে আমি তা জানিনা।" এসাথো তখন বাবার মৃত্যুর কথা চাচাকে বলেনা। বরং সে বলে বাবা কিছুদিন আগে বিদেশে এক জরুরি কাজে গিয়েছেন। চাচা তখন বলে,"তবে আমরা দুজনে রাডারটা ঠিক করি।"
এসাথো চাচার এ প্রস্তাবে সায় দেয়।
কিন্তু ফিন ও ফিলিপ তাদের বন্ধু অ্যাস্টনকে ছাড়া যেতে পারবেনা। তাই এসাথো গর্ত থেকে উঠে ফিন ও ফিলিপের সাথে মেডিকেল অব ডিসকর্স-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
Website: www.ichchashakti.com E-mail: ichchashaktipublication@gmail.com