অমর একুশে বইমেলা বাংলা ভাষা, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতির এক অনন্য মিলনমেলা। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা শুধুমাত্র বইপ্রেমীদের জন্যই নয়, বরং সাহিত্যিক, প্রকাশক, এবং পাঠকদের মধ্যে এক সৃজনশীল সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মেলা আমাদের ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় স্মৃতির সঙ্গে জড়িত, তাই এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি অপরিহার্য অংশ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু নিম্নমানের বই প্রকাশের প্রবণতা বইমেলার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই প্রেক্ষিতে, মানসম্মত বই প্রকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানানো জরুরি।
প্রকাশকদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত মানসম্মত বই প্রকাশে মনোযোগ দেওয়া। কেবলমাত্র মুনাফার জন্য নিম্নমানের লেখা প্রকাশ করা দীর্ঘমেয়াদে প্রকাশনা শিল্পের ক্ষতি করে। বইমেলার মতো একটি মহৎ উদ্যোগে সৃজনশীল, গবেষণাধর্মী, এবং সাহিত্যিক মানসম্পন্ন বই প্রকাশের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নতুন এবং প্রতিভাবান লেখকদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদের লেখার গুণগত মান বজায় রাখার জন্য প্রকাশকদের দায়িত্ব নিতে হবে।
লেখকদের ক্ষেত্রেও গুণগত মান বজায় রাখার দায়িত্ব রয়েছে। একটি মানসম্পন্ন বই লেখার জন্য সময়, গবেষণা, এবং চিন্তাশীল প্রচেষ্টার প্রয়োজন। পাঠকদের মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এমন সাহিত্যিক কাজ সৃষ্টির দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। লেখকদের উচিৎ নিজেদের লেখার মান যাচাইয়ের জন্য পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা এবং বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া।
এ ছাড়া, সম্পাদক এবং প্রুফরিডারদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো পাণ্ডুলিপি মানসম্পন্ন বইয়ে পরিণত করার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব অগ্রাধিকার পায়। ভাষার শুদ্ধতা, ব্যাকরণগত সঠিকতা, এবং বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে দক্ষ সম্পাদক ও প্রুফরিডারদের অবদান অনস্বীকার্য।
পাঠকদেরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। নিম্নমানের বই কেনা থেকে বিরত থাকা এবং মানসম্পন্ন প্রকাশনা উৎসাহিত করা তাদের দায়িত্ব। সঠিক প্রতিক্রিয়া এবং পর্যালোচনার মাধ্যমে তারা লেখক এবং প্রকাশকদের মানোন্নয়নে সাহায্য করতে পারেন।
অমর একুশে বইমেলা আমাদের সাহিত্য এবং সংস্কৃতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক। মানসম্পন্ন বই প্রকাশের মাধ্যমে আমরা এই মেলার সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্য রেখে যেতে পারি। তাই লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক, এবং পাঠক—সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। মানসম্মত বই প্রকাশের এই আহ্বানকে সফল করে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব।
মোঃঃ নাছিম প্রাং
প্রকাশক,
ইচ্ছাশক্তি প্রকাশনী