প্রথম পর্ব : মহাবিশ্বের প্রথম শ্বাস
সৃষ্টির আঁধারে, শব্দহীন এক নিশ্বাসে,
অণুরাজ্যে জেগে ওঠা এক অদৃশ্য তাড়নায়,
যেন নক্ষত্রের গর্ভে অঙ্কুরিত আশে,
দুটি আলাদা সত্তা এক সুরে মিলে যায়।
চন্দ্রালোকে নদী যেন অজানা সাগর চায়,
সময়ের বালুকায় লেখা দুটি নামের বিন্যাস—
তোমার চোখে আমার ছায়া, আমার ঠোঁটে তোমার গান,
এক অখণ্ড মহাজাগতিক পরম নিশ্বাস।
দ্বিতীয় পর্ব : দৈনন্দিনের মহাকাব্য
ভোরের চায়ের কাপে নাচে সূর্যের আভাস,
রুটির টুকরো ভাগ, এক তীব্র আনন্দে বিভোর।
বৃষ্টিস্নাত বারান্দায় কাঁচের ফোঁটার নাচ,
তোমার ভিজে চুলে আমার হাতের ছোঁয়া স্বর্ণ-ডোর।
হাসির ফাঁকে লুকানো ক্লান্তি, কাজের ভিড়ে একাকার,
অসুস্থ রাতে জ্বরের পাশে বসে থাকা নিরবধি—
এই তুচ্ছ মুহূর্তগুলোই মহাকাব্য আমাদের সংসার,
যেখানে প্রেম রূপ নেয় দৃঢ়তম মানব-অভিধি।
তৃতীয় পর্ব: মৃত্যুঞ্জয়ী স্পন্দন
কালের কঠিন হাত গড়ে মমি স্মৃতির স্তরে স্তরে,
চুলে পাক ধরে, চোখে আসে দূরের ধূসরতা।
কিন্তু এই বুড়ো আঙুলেও কেন জ্বলে আগুনের ঘোরে?
কেন তোমার চোখে আজও সেই প্রথম প্রভাতের কথা?
মৃত্যু আসে নিঃশব্দে, নেয় দেহ, নেয় শক্তি, নেয় রং,
কিন্তু সেই ভালোবাসা—অদৃশ্য, অপরিমেয়, নির্ভীক—
অমর গোলাপ হয়ে ফোটে পরলোকের প্রাঙ্গণ?
নাকি বীজ হয়ে রোপিত হয় পৃথিবীর মাটির গভীরে?
চতুর্থ পর্ব : মহাজাগতিক প্রতিধ্বনি
যদি শেষ হয় এই শরীর, এই নাম, এই পরিচয়,
যদি ধূলিসাৎ হয় সব গৌরব, সব অর্জন—
তবুও কোথাও এক নক্ষত্রে জ্বলবে নিশ্চয়
আমাদের দু’জনের দেখা, সেই প্রথম চুম্বন।
ভুলে যাবে পৃথিবী, ভুলে যাবে ইতিহাসের পাতা,
কিন্তু মহাকাশের শূন্যে, এক অনন্ত কম্পনে,
প্রতিধ্বনিত হবে সেই ভালোবাসার অমোঘ গাথা—
“এখানে ছিলাম আমরা, একসাথে, এক নামে।”
শেষ স্তবক : অমরত্বের ছোঁয়া
নোবেল নয়, স্বর্ণপদক নয়, নয় কোনো মহিমার স্বীকৃতি—
আমার একমাত্র পুরস্কার—তোমার চোখে চোখ রেখে থাকা।
তোমার শ্বাসের তালে তাল মিলানো—এই সহজ নিত্য প্রীতি,
সকালের রোদে তুমি যে কাপে চা দিলে, সেই কাপে চুমুক খাওয়া।
মৃত্যুকে হারায় যে ভালোবাসা, ইতিহাসের গণ্ডি ছাড়ায়,
তা জয় করে নোবেলের সীমানা, চিরন্তন সৃষ্টির অঙ্গনে।
তোমার হাতের স্পর্শেই পেয়েছি অমরত্বের ছোঁয়া—
এই সত্যের গাথাই কি সব পুরস্কারের চেয়ে বড় নয় মনে?