1. admin@ichchashakti.com : admin :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুড়িগ্রামের লেখিকা নিপা’র কিছু কবিতাংশ “স্বপ্নের ছোঁয়া সাহিত্য পুরস্কার-২০২৫” এ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলো ‘চা জগত’ – বই  সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবার আয়োজিত সাহিত্য আড্ডা ও সাফারি পার্ক ভ্রমণ ২০২৫ ইচ্ছাশক্তি সাহিত্য পরিবারের অনুষ্ঠান রৌমার, কুড়িগ্রাম -এর নবীন লেখিকা নিপা’র দুইটি কবিতা অর্ধ নারীশ্বর —– প্রীতম ভট্টাচার্য শেষ যাত্রা —- প্রীতম ভট্টাচার্য অর্পিতা সাহিত্য লাইব্রেরী-এ.এস.এল এর প্রাথমিকভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা… ক্যান্সারে আক্রান্ত মাও. এনামুল হাসান ফারুকীর পাশে দাঁড়ালো আল ইরশাদ ফাউন্ডেশন –

অন্ধকারের জ্বলন্ত প্রদীপ —- লেখক : আয়াত আজাদ 

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৯৫ বার প্রতিবেদনটি দেখা হয়েছে

নওরিনের বাবা একজন ছোটখাটো দোকানি, মা গৃহিনী। সংসারের টানাটানি চিরকালই ছিল, তবে বাবা-মা চাইতেন মেয়ে মানুষ হয়ে যেন  নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো — পড়ালেখা তার কাছে আতঙ্কের মতো।

 

ক্লাসে প্রশ্ন করলে মাথা নিচু করত, হোমওয়ার্ক অসম্পূর্ণ থাকত, টিচাররা হতাশ হয়ে যেতেন। সহপাঠী মিম পর্যন্ত বলত,

 

“তোর দ্বারা কিছু হবে না রে!”

 

নওরিন চুপ করে সব শুনত। রাতের অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে মনে মনে প্রমিস করত — “আমি চেষ্টা করবো।” কিন্তু পরদিন বইয়ের পাতায় চোখ রাখতেই যেন সব সাহস মিলিয়ে যেত।

 

ঠিক তখনই স্কুলে বদলি হয়ে এলেন নতুন শিক্ষক, মাহমুদ স্যার। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মুখে নরম অথচ দৃঢ় হাসি। স্যার প্রথম দিনেই সবাইকে বলেছিলেন,

 

“ভয় পেয়ে কেউ কিছু শেখে না। আমরা এখানে শিখবো আনন্দ নিয়ে।”

 

কিছুদিন পরে স্যার নওরিনের দুর্বলতা লক্ষ্য করলেন। অন্য শিক্ষকরা যেখানে তাকে দূরে সরিয়ে রাখতেন, মাহমুদ স্যার তাকে সামনে বসাতেন। প্রতিদিন একটু সময় দিতেন বাড়তি করে। অংকের সহজ পদ্ধতি শেখাতেন, বাংলা গল্প মজা করে বলতেন।

 

স্যারের এক কথা নওরিনের মনে গেঁথে গেল:

 

“তুমি যদি প্রতিদিন নিজের একটা ছোট্ট ভয়কে হারাও, একদিন দেখবে তুমি ভয়কেই ভয় পাও না।”

 

দিন চলতে থাকল। নওরিন হাল ছাড়ল না। ভুল করত, কান্না পেত, আবার চেষ্টা করত। মাহমুদ স্যারের হাতে ধরা ছোট্ট ‘পুনরায় চেষ্টা’ নামক মশাল তার পথ দেখাত।

 

পরীক্ষার আগে বড় একটা ধাক্কা এল। বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দোকান বন্ধ, সংসারে অভাব চেপে বসল। মা বলল,

 

“পড়ালেখা বন্ধ করতে হবে নওরিন, এখন সংসারে সাহায্য করো।”

 

নওরিন এক মুহূর্ত কাঁদল। কিন্তু পরের মুহূর্তে সে বলল,

 

“না মা, আমি আরও মন দিয়ে পড়বো। একদিন এমন করবো, যাতে আপনাদের আর কষ্ট না হয়।”

 

সে রাতে পুরোনো ফার্সি ল্যাম্পের নিচে বসে নওরিন পড়তে থাকল। চোখ জ্বলছিল, মন কাঁপছিল, তবুও সে পড়ল। মাহমুদ স্যার তাকে প্রতিদিন সাহস দিতেন — ছোট ছোট নোট বানিয়ে দিতেন, বলতেন কীভাবে সময় ভাগ করে পড়তে হয়।

 

ফলাফল প্রকাশের দিন — পুরো স্কুল চমকে গেল। নওরিন শুধু পাশ করেনি, শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে। মিম তার কাছে এসে বলেছিল,

 

“তুই যে এভাবে বদলে যাবি, ভাবতেও পারিনি!”

 

নওরিন মৃদু হেসেছিল। কৃতজ্ঞ চোখে স্যারের দিকে তাকিয়েছিল। সে জানত, আলো কখনও একা আসে না; কেউ না কেউ একটা প্রদীপ হাতে এগিয়ে আসে।

 

মাহমুদ স্যার সেদিন শুধু বলেছিলেন,

 

“তুমি নিজের আলো নিজেই খুঁজে পেয়েছো, নওরিন। আমি শুধু তোমাকে দেখিয়েছি, কোথায় খুঁজতে হবে।”

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ ইচ্ছাশক্তি
Theme Customized By Shakil IT Park